পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কঠিনতম ‘ডিউটি’ শেষ করেছে। দীর্ঘদিনের বিরামহীন ডিউটি। সে ক্লান্ত-শ্রান্ত। কিছুদিন বিশ্রাম নিচ্ছে। এরপর ফিরে যাবে নিজ বাড়ি। চীনে। গুডবাই ‘তিয়ান ই’। নিরাপদে যাও ফিরে। তুমি স্বদেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশের জনগণ তোমাকে কখনোই ভুলবে না। বাংলাদেশ ও জাতি স্মরণ রাখবে। চিরকাল। ইতিহাসের অংশ হয়েই থাকবে ‘তিয়ান ই’। যদিও আর হয়তো কখনোই এদেশে আসবে না তুমি। এদেশবাসীর আবেগে মিশে থেকো ‘তিয়ান ই’।
স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে বৃহত্তম অর্থাৎ যুগান্তকারী মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু। এর কঠিনতম নির্মাণ কাজ সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়েছে ‘তিয়ান ই’। এটি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে সর্ববৃহৎ ও প্রধান যান্ত্রিক সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়; এ মুহূর্তে বিশে^র অন্যতম বৃহৎ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ এটি।
পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানোর মতো সুকঠিন ‘ডিউটি’ সামাল দিয়েছে ‘তিয়ান ই’। স্প্যান বসানোর কাজ শেষ। তাই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ‘তিয়ান ই’ ফেরার পথে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর ফেলে অবস্থান করছে। আনোয়ারার পারকী সমুদ্র সৈকত বরাবর বিপরীতে। পারকী সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকগণ ‘তিয়ান ই’-কে পেছনে রেখে তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ফেরি আকৃতির দৈত্যাকার ক্রেনবাহী জাহাজটির বিশালতা বিস্ময়ের সাথে প্রতিদিনই দেখছেন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে একথা জানান আনোয়ারা এলাকার সাংবাদিক জাহেদুল হক।
পদ্মা সেতুতে ঢাউস স্প্যানগুলো স্থাপনের কাজ শেষে গত ১৩ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ‘তিয়ান ই’-কে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। চীনা এই ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান ই’ ৩ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন ধারণ বা ভার বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন। পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি’র এই ক্রেনটির দাম আড়াই হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর জন্য ‘তিয়ান ই’র ‘ডিউটি’ বাবদ প্রতিমাসে ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, কিছু রুটিন যান্ত্রিক সার্ভিসিং কাজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বন্দর ক্লিয়ারেন্স ও কাস্টমসের নিয়মানুযায়ী আনুষ্ঠানিকতার জন্যই ‘তিয়ান ই’র এই অপেক্ষা। প্রায় এক মাস অবস্থান করবে চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে। এরপর নোঙর তুলবে চীনের উদ্দেশে। জানুয়ারি-২০২১ মাসের মাঝামাঝির দিকে রওনা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘তিয়ান ই’ চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করবে মাদার ভেসেলযোগে। অন্তত এক থেকে দেড় মাসের সমুদ্র যাত্রা শেষে পৌঁছাবে হংকং। যাত্রাপথে সিঙ্গাপুর থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করবে।
প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ দেশের সর্ববৃহৎ মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতু। পদ্মার বুকে বিস্ময়। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে পদ্মা সেতুর বিশালাকার স্প্যান বসানোর জন্য আনা হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান ই’। ভারী ও বৃহৎ এই ক্রেনটি বাংলাদেশে আসতে প্রায় দেড় মাস সময় লেগে যায়।
পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে গত ৩ বছর ৯ মাসে ‘তিয়ান ই’র সাহায্যে একে একে ৪১টি স্প্যান বসানো হয় উত্তাল পদ্মার ঢেউ ঠেলে ঠেলে। দীর্ঘ সময়ে ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা। এসব স্প্যান পিলারের ওপর সতর্কতার সঙ্গেই স্থাপন করেছে ‘তিয়ান ই’। এই ক্রেনটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্প্যান বহন করে পদ্মা নদীতে অবস্থিত পিলারগুলোর ওপর স্থাপন করেছে। উত্তাল পদ্মায় স্প্যান স্থাপনে ক্রেনটি দক্ষতা সক্ষমতার প্রমাণ রাখে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে তিনশ’রও বেশি ক্রেন ব্যবহৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে স্প্যান বসানোর বিশাল কাজটি সামাল দেয় ‘তিয়ান ই’।
পদ্মা সেতুর একেকটি স্প্যান ৪৯২ ফুট দীর্ঘ। ওজন ৩ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন। গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর কাজ সফলভাবে শেষ করে ‘তিয়ান ই’ ক্রেন। অবশেষে দৃশ্যমান হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর অবয়ব। রচিত হয় দেশ ও জাতির জন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণ। আর, বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের আরেকটি স্মারক ও সেতুবন্ধন রচনা করলো ‘তিয়ান ই’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।