পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের মোদী সরকারের সীমান্তে ‘গরু পারাপার’ বন্ধ করে দেয়ায় গত ৫ বছরে বাংলাদেশ গরুতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে পেঁয়াজ বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক সংকটে পড়লেও ধীরে ধীরে ‘পেঁয়াজ সংকট’ কাটিয়ে উঠার চেস্টা করছে। বাংলাদেশে এবার বিপুল পরিমান পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে ওঠায় রসুঁইঘরের অপরিহার্য মশলাজাতীয় এই পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে।
এ অবস্থায় গত ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কৃষকদের স্বার্থে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারকে টার্গেট করেই মোদী সরকার নতুন বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আমাদেরও সময় এসেছে ভারতের পেঁয়াজকে ‘না’ বলা। পেঁয়াজ পচনশীল পন্য। সরকারির দায়িত্বশীলদের উচিত দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের কথা চিন্তা করে ভারতীয় পেঁয়াজ যাতে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
প্রয়োজনে ভারতের পেঁয়াজ আমদানিতে একশগুন শুল্ক আরোপ করা। ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ভোক্তাকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। হঠাৎ সীমান্তে পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করায় বিপকে পড়ে বাংলাদেশ। বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে। ভোক্তাদের চাহিদার মেটাতে বিকল্প বাজার হিসেবে মিসর, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সে সময় পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পেঁয়াজ সংকট মোকাবিলায় তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তান দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পাশে। মিশর ও তুরস্ক থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ এনে সংকট সামাল দেয়া হয়। এতে বিমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের পরিবহন খরচ পড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশের মানুষ ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খেতে বাধ্য হয়েছে। সে পেঁয়াজের দাম এখন কমতির দিকে। দেশে এখন পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরা ন্যার্য্যমূল্য পাওয়ার প্রত্যাশায় মশলাজাতীয় পণ্যটি উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এখন শীতকাল, চলছে পেঁয়াজের মৌসুম। দেশি-বিদেশী পেঁয়াজের পাশাপাশি মুড়াকাটা পেঁয়াজে বাজার ছয়লাব। পাশাপাশি মিশর, তুরস্ক থেকে আমদানী করা পেঁয়াজও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করায় সীমিত আয়ের মানুষ ও নিম্নবৃত্তরা ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে স্বল্প মূল্যে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ ক্রয় করছেন। ফলে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশের বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কমছে পেঁয়াজের দাম। দেশের কৃষকদের প্রত্যাশা এবার তারা মশলাজাতীয় কৃষিপণ্যটির ভাল দাম পাবেন। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ কিছুটা বেশি দামে ক্রয় করে খাওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠছে। অর্থনীতিবিদদের অভিমত পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কৃষকরা পেঁয়াজের চাষাবাদ করছেন। এ অবস্থায় ভারত থেকে পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হলে দেশের কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবের মধ্যেই সবকিছু বন্ধ থাকলেও কৃষকরা পণ্য উৎপাদন বন্ধ রাখেননি। ঝড়বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে তারা ১৭ কোটি মানুষের জন্য নানান জাতীয় পণ্য উৎপাদন করেছেন। এ অবস্থায় ভারতের পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হলে কৃষকদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
মূলত: বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির লক্ষ্যে ভারত পণ্যটি রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। ভারতের কৃষকরা গত এক মাস ধরে নানান দাবিকে দিল্লিতে আন্দোলন করছে। কৃষকদের আন্দোলনের মুখে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার এখন কোনঠাসা। কৃষকদের খুশি করার চেষ্টায় পেঁয়াজ রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ভারতের মিডিয়াগুলোর খবরে বলা হয় কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির (ভারত) অভ্যন্তরীন বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছে। বিদেশে রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশের বাজারে কৃষকরা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। সে কারণে গত সোমবার পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ রফতানি শুরু করবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব ধরনের পেঁয়াজের রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের প্রতিটি জেলায় কমবেশি পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। এবার প্রায় ৬০টি জেলায় পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে তা সংরক্ষণ করা গেলে পেঁয়াজে দেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। তবে পচনশীল পণ্য হওয়ায় কিছু নষ্ট হলেও অন্যদেশ থেকে সামান্য কিছু পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে। গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখি। দেশে যে পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে তাতে ভোক্তারা ৩০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যেই পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামও কম। এ অবস্থায় কেন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবো? সীমান্ত দিয়ে ভারতের পেঁয়াজে ট্রাক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সোচ্চার হই। আসুন ভারতের পেঁয়াজকে ‘না’ বলি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।