চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
অধ্যক্ষ মো. ইয়াছিন মজুমদার
॥ শেষ কিস্তি ॥
হযরত আনাস (রা.) শিশু বয়সে নবী (সা.)-এর খাদেম নিযুক্ত হন। তিনি দশ বছর নবী (সা.)-এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বলেন- এ দীর্ঘ সময়ে নবী (সা.) কখনো হে আনাস তুমি এটা করলে না কেন? বা ওটা এরূপ করলে কেন? এরূপ বলেননি। তিনি আরো বলেন- একদা নবী (সা.) একটি কাজে আমাকে এক জায়গায় প্রেরণ করলেন। যাওয়ার পথে শিশুরা খেলছে দেখে আমি তাদের খেলা দেখতে লাগলাম এবং কাজের কথা ভুলে গেলাম। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল হঠাৎ আমার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি নবী (সা.) আমার মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম- আমি এখনি যাচ্ছি। নবী (সা.) মুচকী হেসে বললেন- তিনি নিজে গিয়ে ঐ কাজটি সেরে এসেছেন, তিনি আমাকে একটু রাগও দেখালেন না। আল্লাহপাক বলেন- অতএব তুমি ইয়াতিমদের প্রতি নির্দয় আচরণ করো না এবং প্রার্থনাকারীকে ধমক দিও না (সূরা আদ-দোহা ৯-১০)।
নবী (সা.) বলেছেন- যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের অধিকার আদায় (সম্মান) করে না সে আমার উম্মত নয়। শিশু ও সন্তানদের প্রতি আমাদের কর্তব্যও রয়েছে। শিশু মার্তৃগর্ভে আসার পর মায়ের চিন্তা চেতনায় সততা ও ইসলামী ভাবধারা প্রাধান্য পাওয়া উচিত, কারণ তার চিন্তা-চেতনা সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে। জন্মের সাথে সাথে ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিয়ে তাওহীদের বাণী তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পূর্ণ দু’ বছর মায়ের দুধ পান করা শিশুর অধিকার। আল্লাহ বলেন- গর্ভধারণ ও দুধপানের সময় সীমা ত্রিশ মাস (সূরা আহকাফ-১৫)। জন্মের সাতদিনের সময় তার আকিকা করা ও মাথার চুল কামানো সুন্নাত, সম্ভব হলে চুলের ওজন পরিমান স্বর্ণ বা রৌপ্য অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। সালমান ইবনে আমের জাবি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন- আমি রাসূল (সা.)- কে বলতে শুনেছি সন্তানের আকিকা করা প্রয়োজন সুতরাং তার পক্ষ থেকে তোমরা রক্ত প্রবাহিত কর, তার থেকে কষ্ট দূর কর (বুখারী)।
সন্তান পুত্র বা কন্যা যাই হোক ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা নিষেধ। নবী (সা.) বলেছেন- যার কন্যা সন্তান রয়েছে সে তাকে প্রোথিত করেনি, অবহেলা করেনি, পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রাধান্য দেয়নি আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (আবু দাউদ)। সন্তানকে দ্বীনি জ্ঞান, নৈতিকতা, সততা শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক অভিভাবকের অবশ্য কর্তব্য। সাইদ ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূল (সা.) বলেন- পিতা সন্তানকে যা দান করে এর মধ্যে সর্বোত্তম দান হল উত্তম শিক্ষা ও উত্তম প্রশিক্ষণ (মেশকাত)।
শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তাই পিতা মাতা ও মুরুব্বীদের নিজেদের সুন্দর আচরণ করতে হবে তবেই সন্তান তা শিখবে। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রা.) প্রথম দিন মক্তবে গিয়ে মুখস্থ কুরআন ওস্তাদ কে শুনিয়ে দিতে লাগলেন, ওস্তাদ তা শুনে অবাক হয়ে ভাবলেন সে কোথায় তা শিখলো? জানা যায় তার মায়ের কুরআনের আঠার পারা মুখস্থ ছিল। তার মা তা বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন, তা শুনে শুনে তার মুখস্থ হয়ে গেছে। শিশুকে সৎ উপদেশ দেয়া প্রয়োজন, লোকমান (আ:) তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন কুরআনের ভাষায় তা বর্ণনা করা হয়েছে-হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না নিশ্চয়ই শিরক বড় যুলুম।
নামায কায়েম করবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, মানুষ কে অবজ্ঞা করে মুখ ফিরিয়ে নিবে না, অহংকার করে জমিনে চলবে না, আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না। নি¤œ স্বরে কথা বলবে, গাধার মতো জোরে চিৎকার সবচেয়ে অপছন্দনীয়। (সূরা লোকমান-১৩ এবং ১৬-১৯) পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা ও সন্তানকে মানুষ করার জন্য ব্যয় করার জন্য নবী (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি (সা.) বলেন- যে লোক (পরকালে) প্রতিদান পাওয়ার আশায় পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে তা তার জন্য সাদকাহ হিসাবে গণ্য হবে (বুখারী মুসলিম)।
লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।