মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনা মহামারীর পাশাপাশি ২০২০ সালটি ছিল ফিলিস্তিনিদের জন্য বেদনাদায়ক একটি বছর।
প্রাণঘাতী মহামারীর সঙ্গে সারা বিশ্বই যখন একতালে লড়েছে, ওই সময় তারা দেখেছে বন্ধুপ্রতিম আরব রাষ্ট্রগুলোর বিশ্বাসঘাতকতা।
চলতি বছরের ১৩ আগস্ট ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় আমিরাত। দুই দেশের মধ্যে টেলিফোন সংযোগ ও নিয়মিত বিমান চলাচল চালুরও ঘোষণা দেয়া হয়।
এরপর এ কাতারে যোগ দেয় বাহরাইন, মরক্কো, ওমান, জর্ডান ও সুদান। ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সম্মত হয় এ মুসলিম দেশগুলো।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার নানা উদ্যোগ নেন।
প্রথমে তেল আবিব থেকে ইসরাইলের রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তরের স্বীকৃতি এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন ট্রাম্প।
তারপর থেকে বিভিন্ন দেশকে চাপ, লোভ ও টোপ দিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ সেপ্টেম্বর আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক
১৫ সেপ্টেম্বর গোটা মুসলিম বিশ্বকে পাশ কাটিয়ে ইহুদিবাদীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এ দিন হোয়াইট হাউসে তিন দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ট্রাম্পের জামাতা ও সিনিয়র উপদেষ্টা কুশনারের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি সম্পন্ন হয়।
এ চুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিসর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
প্রথম আরব দেশ হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে ভিসামুক্ত ভ্রমণ চুক্তি রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। আমিরাতের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ইহুদি রাষ্ট্রটিতে ভ্রমণ করতে পারেন।
আমিরাতি হোটেলগুলোতে ইহুদিদের খাবারের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আবুধাবির সব হোটেলের প্রতি এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়।
ইসরাইল-জর্ডান সম্পর্ক
আমিরাত-বাহরাইনের পর জর্ডানও পা বাড়ায় এ পথে। ৮ অক্টোবর ইসরাইলি বিমান চলাচলের জন্য নিজ দেশের আকাশসীমা মুক্ত করে দেয় দেশটি।
এ দিন ইসরাইল ও জর্ডানের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয়, উভয় দেশের বাণিজ্যিক বিমান উভয়ের আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে।
এ চুক্তির ফলে আরব বিশ্বের আকাশপথ ব্যবহার করে ইসরাইলি বিমান ইউরোপ ও উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে অতি স্বল্পসময়ে ভ্রমণ করতে পারবে। অর্থাৎ এসব দেশে যেতে হলে ইসরাইলি বিমানকে অনেক পথ ঘুরতে হবে না।
একই পথে হাঁটল সুদান
দীর্ঘদিনের অবরোধে ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ সুদানকে আর্থিক সুবিধা ও সন্ত্রাসবাদী দেশের তালিকা থেকে বের করার প্রলোভন দেখিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি করায় ট্রাম্প প্রশাসন।
২৩ অক্টোবর হোয়াইট হাউস থেকে ফোনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদক ও অন্তর্বর্তী সামরিক কাউন্সিলের প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে আলোচনায় সুদান-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সুদানের জান্তা সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেশটির জনগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বিশ্বাসঘাতকতা করল মরক্কোও
সবশেষ ১০ ডিসেম্বর ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় মরক্কো।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই দুই দেশের মধ্যে চুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়।
বিনিময়ে বিতর্কিত পশ্চিম সাহারা অঞ্চল নিয়ে মরক্কোর দাবিকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সৌদির ভূমিকা
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাইরাইন, সুদান ও মরক্কো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সরাসরি ঘোষণা দিলেও সৌদি আরব এ পথে হাঁটেনি।
দেশটি জানিয়েছে, একটি স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে যদি ফিলিস্তিনিদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেবে রিয়াদ সরকার। তবে নিজেরা সম্পর্ক স্থাপন না করলেও এক্ষেত্রে অন্যদের সহায়তা করেছে সৌদি আরব।
চুক্তির প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের বিমান চলাচলের জন্য নিজেদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেয় সৌদি।
২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের আকাশপথ ব্যবহার করে ইসরাইলের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বাহরাইনে পৌঁছায়।
নভেম্বরের শেষের দিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপনে সৌদি সফরের খবর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমের খবরে তখন বলা হয়, ওই সময় গোপনে সৌদি আরব সফর করে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় দেশটিতে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
মূলত বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিল সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের।
ট্রাম্প-কুশনারের প্রচেষ্টাতেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হয় মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বলয়ের একাধিক দেশ।
ফলাফল: এসব চুক্তির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর কৌশলগত সখ্যতার বিষয়টিও স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে নিজের বিচ্ছিন্ন অবস্থা কাটাতে সমর্থ হবে ইসরাইল।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতাবস্থা তৈরি করতে এই কূটনৈতিক পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, আমিরাত ও বাহরাইন গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বললেও ফিলিস্তিনিরা একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন।
মসজিদুল আকসা, আল কুদস (জেরুজালেম) ও ফিলিস্তিন দখলকারী অবৈধ রাষ্ট্রটির সঙ্গে এই মুসলিম দেশগুলোর এমন সম্পর্ককে ঘৃণার চোখেই দেখছেন সবাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।