পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গভীর রাতে ঘরে ঢুকতে না দেয়ায় ৭০ বছরের বৃদ্ধ পিতা মোহন ধরকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদকাসক্ত পুত্র রিটন ধর। নগরীর নন্দনকাননে মাত্র একশ’ টাকার জন্য শিশুর গলায় ব্লেড দিয়ে পোচ মেরে হত্যার চেষ্টা করে মো. হেলাল নামে এক মাদকাসক্ত কিশোর। কাজির দেউড়িতে রঞ্জন বড়ুয়ার প্রাণ যায় পুত্র রবিন বড়ুয়ার ছুরিকাঘাতে। কাট্টলীতে প্রতিবেশী সন্ধ্যা রাণীকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদকাসক্ত সত্যজিৎ ঘোষ। চান্দগাঁও এলাকায় বড় ভাই সাজুর কাছে ১০টি ইয়াবা রেখে তা ফেরত না পেয়ে কুপিয়ে খুন করেন ছোট ভাই মুন্না।
সর্বনাশা নেশার ছোবলে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে রিটন ধর, মো. হেলাল, রবিন বড়ুয়া, সত্যজিৎ ঘোষ, মুন্নারা। তারা প্রিয়জনদের খুন করছে। সর্বনাশা মাদক মা-বাবা-ভাই-স্ত্রীসহ পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করছে। নেশার ঘোরে বেঘোরে মানুষ মারছে মাদকাসক্তরা। পুড়িয়ে দিচ্ছে নিজের ঘরবাড়ি। পরিবার-সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা। ভাঙছে সংসার, বাড়ছে অপরাধ। হতদরিদ্রের বস্তি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বনাশা ইয়াবা, ফেনসিডিল।
ইয়াবা ফেনসিডিল দুটোই আসছে অন্য দেশ থেকে। মাদকের আগ্রাসন রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ারে মারা গেছে অসংখ্য মাদকের কারবারি। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের ভয়াল আগ্রাসন। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোরেরা বিপথগামী হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাঙয়ের মাধ্যমে নেশায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। মাদকের উৎস বন্ধ, মাদকাসক্তের চিকিৎসা এবং সর্বোপরি মাদক বিরোধী ব্যাপক সামাজিক আন্দোলনের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে মাদকের শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা। ইয়াবার ট্রানজিট রুট এখন চট্টগ্রামে। বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য কারখানা। সেখানে উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদেশে। সাগর, সড়ক আর পাহাড়ি পথে ইয়াবার চালান আসছে। সরকারি তরফে ভারতীয় ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করা হয়েছে দাবি করা হলেও পরিস্থিতি তার উল্টো। কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত হয়ে প্রতিদিনই ফেনসিডিলের চালান ঢুকছে চট্টগ্রামে।
র্যাব-পুলিশের অভিযানে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ইয়াবা, ফেনসিডিলের চালান। তবে উদ্ধার মাদকের অন্তত ১০ গুণ নিরাপদে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। নিত্যনতুন কৌশলে হচ্ছে মাদক পাচার। বিক্রি হচ্ছে মহানগরী এবং জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। হাত বাড়ালেই মিলছে নেশা। আর তাতে বেড়েই চলেছে আসক্তের সংখ্যা। মাদকাসক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ। নিকট অতীতেও মহানগরীর বস্তি এলাকায় মাদকাসক্তদের উৎপাত দেখা যেত। এখন পল্লীগাঁয়েও মাদকাসক্তদের দাপট।
মহানগরী এবং জেলায় প্রতিনিয়তই মাদকাসক্তের হাতে স্বজন খুনের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতার ঘটনায় জড়িতদের বিরাট অংশ মাদকাসক্ত। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, নেশার সাথে অপরাধের গভীর সম্পর্ক। নেশাগ্রস্তরা নেশার টাকা জোগাতে খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারেও চলছে খুনোখুনি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা। নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক বহনকারীদের পাশাপাশি এর পেছনে যারা তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে মাদকের ভয়াল আগ্রাসন প্রতিরোধ পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসছে। আসক্তরা সেখানে মাদক সেবন করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং র্যাব-পুলিশ মাঝে মধ্যে ওইসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কিছু মাদকসেবীকে জরিমানা করা হলেও সবকিছু চলে আগের মত। মাদকাসক্তদের সুপথে ফিরিয়ে আনারও তেমন উদ্যোগ নেই। মহানগরীতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত তার হিসাব কারও কাছে নেই।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদকাসক্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। তিনি বলেন, ইয়াবা ফেনসিডিল দুটোই সীমান্ত হয়ে আসছে। মাদকের উৎস বন্ধ করা না গেলে সর্বনাশ বন্ধ করা যাবে না। আর এজন্য সব সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মাদকাসক্তদের নিরাময়ে সরকারি একটি এবং বেসরকারি ১৬টি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে সুপথে ফিরে আসছে।
বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, পারিবারিক বন্ধন শিথিল, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোরেরা বিপথে যাচ্ছে। দুর্নীতি এখন প্রকাশ্যে হচ্ছে। চাকরি পেতেও ঘুষ দিতে হচ্ছে। এতে যুবসমাজের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ হতাশা থেকে অনেকে মাদকাসক্ত হচ্ছে। কিশোর গ্যাঙ কালচারের সাথে মাদক যুক্ত হওয়ায় কম বয়সে অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আগামী প্রজন্মকে নেশার নীল ছোবল থেকে বাঁচাতে হলে পারিবারিক বন্ধন, নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা এবং সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইয়াবা ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক পাচার রোধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী কক্সবাজার, ফেনী এবং কুমিল্লায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব এলাকায় জোরদার অভিযান চলছে। প্রতিনিয়তই মাদকের চালান উদ্ধার হচ্ছে। আশা করি মাদকের আগ্রাসন ধীরে ধীরে কমে আসবে।
কাল পড়ুন : সর্বনাশা নেশায় যুবসমাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।