পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম-অপচয় ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিয়োগ পদায়ন, বদলি থেকে শুরু করে অবকাঠামো খাতের প্রায় প্রতিটি ধাপেই দুর্নীতি-অপচয়ের চিত্র দেখা যায়। উপজেলা থেকে শুরু করে সচিবালয় ও সংসদ ভবন পর্যন্ত প্রশাসনিক অবকাঠামো খাতে জনগণের রাজস্ব থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এসব ব্যয়ের বিপুল অংশ দুর্নীতি-অপচয়ের শিকার হওয়ার অনেক নজির আছে। এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ বিষয়ের উপর সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিলেন। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় যেসব সরকারি কর্মকর্তা সরকারি বাসা বরাদ্দ নিয়ে সেখানে থাকেন না, তাদের ভাতা কেটে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি প্রতিটি প্রশাসনিক অবকাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকে। এ খাতে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি ব্যয়ের অংকও বিশাল। তবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের একটি অংশ সরকারি আবাসন খাতে নিজের বরাদ্দকৃত বাসা গ্রহণ না করে ভাড়া বাসায় থেকে বেতনের সাথে বাসাভাড়া বাদ বিপুল পরিমাণ টাকা নিচ্ছেন। অনেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা সরকারি বাসায় না থেকে ঢাকা বা কোনো বিভাগীয় শহরে থেকে অফিস করে একদিকে সময়ের অপচয় করছেন অন্যদিকে তিনি অনিয়মিত অফিস করে সেবা প্রত্যাশী জনগণের দুর্ভোগের কারণ হচ্ছেন। সেই সাথে তার জন্য নির্মিত বাড়ি ব্যবহার না করায় তা জীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তা তার বরাদ্দকৃত বাসায় না থাকলে নানাবিধ অপচয়-অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দিচ্ছেন।
বরাদ্দকৃত সরকারি বাসায় না থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের দেয় বাড়িভাড়া বন্ধের যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা যথার্থ ও সময়োপযোগী। এই সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষ আরো বেশি সেবা পাবে, বিশৃঙ্খলা কমবে এবং সময়ানুবর্তিতা বাড়বে বলে আশা করা যায়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, নির্বাহী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যদি নিজ কর্মস্থলের কাছে সরকারি বাসায় থেকে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধানসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক অগ্রগতিতে আরো বেশি অবদান রাখা সম্ভব। এসব বিষয়ে বরাবরই প্রধানমন্ত্রী সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মফস্বলে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের দায়িত্ব পালনে অনীহার বিষয়ে বেশ কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। এবার সব সরকারি কর্মকর্তাদের বাসাবাড়ি নিয়ে অনিয়ম-অস্বচ্ছতা ও অপচয় বন্ধের নির্দেশনা দিলেন। এ জন্য আমরা তাকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই।
স্থানীয় পর্যায়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি আবাসিক ভবনগুলোতে কর্মকর্তারা না থাকার কারণে এসব ভবন নষ্ট, পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হলেও বাসাভাড়া বাবদ তারা কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। এটা গর্হিত অন্যায় এবং অনৈতিক। উপজেলা থেকে ঢাকার সচিবালয়ের বড় বড় কর্মকর্তা এমনকি সংসদ সচিবালয়, এমপি হোস্টেল এবং এমপিদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাসভবনে পর্যন্ত এ ধরনের অনৈতিকতার চর্চা চলছে। যারা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং আইন প্রণেতা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যেও কারো কারো এমন অনিয়ম-অপচয়ে লিপ্ত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র- হাসপাতাল থেকে শুরু করে মিন্টো রোড, এমপি হোস্টেল পর্যন্ত এ বিষয়ে অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি অপচয়ের একটা বড় অংশ রুদ্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সরকারি পরিবহণ খাতে বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, অপচয় ও লুটপাট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি বাসা ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সরকারি পরিবহন খাতের জ্বালানি খরচসহ সামগ্রিক অপচয় কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের আবাসিক ভবনে বালিশকান্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দাকান্ড, পুকুর খনন, খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের যে উদাহরণ সরকারি কর্মকর্তারা দেখিয়েছেন, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সরকারি বাসভবন ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হোক। এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।