Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহামারি ক্লান্তিতে ভুগছে সারা পৃথিবীর মানুষ

কোভিড ইউরোপে মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট বাড়াচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস মহামারি এ মহামারি ইউরোপে মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট বাড়িয়ে তুলছে বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ইউরোপিয়ান দপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যান্স ক্লুগ। তিনি গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি নেয়ার কোন মানে হয় না। কোভিড-১৯-এর কারণে ইউরোপে প্রায় ২৩ মিলিয়ন সংক্রমণ এবং ৫ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির কথা তুলে ধরে ডবিøউএইচও’র আঞ্চলিক পরিচালক অঞ্চলটির জনগণকে ঘরে থাকার আবেদন জানিয়েছেন।

‘কর্তৃপক্ষ থেকে আপনাকে যা করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে এবং আপনার কী করা উচিত তার মধ্যে একটি পার্থক্য রয়ে গেছে। এখনই সবচেয়ে নিরাপদ জিনিস হল বাড়িতে থাকা’ -তিনি বলেন। মহামারির মধ্যে চলমান মানসিক স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করে ক্লুগ বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট’ ইউরোপীয় অঞ্চলকে আক্রান্ত করেছে। ‘ভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগ থেকে লকডাউন এবং সেলফ আইসোলেশনের মানসিক প্রভাব, বেকারত্ব, আর্থিক উদ্বেগ এবং সামাজিক বর্জনের প্রভাব পর্যন্ত, মহামারির মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী এবং সুদূরপ্রসারী হবে’।
বিধ্বংসী মনস্তাত্তি¡ক প্রভাবের আরো বিশদ বিবরণ দিয়ে ক্লুগ এ অঞ্চলে জাতীয় জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছেন যে, একতৃতীয়াংশ বা ততোধিক প্রাপ্তবয়স্ক, দুই যুবকের মধ্যে একজন (১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী) এবং ২০ শতাংশ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ছিলেন মহামারিজনিত কারণে ইতিমধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশার শিকার। যেহেতু আরও বড় সংখ্যক লোকেরা আগামী মাসগুলোতে মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই ক্লুগ ইউরোপীয় অঞ্চল জুড়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সূত্র : ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, সিনহুয়া।

সারা পৃথিবীর মানুষ এখন মহামারি ক্লান্তিতে ভুগছে
এদিকে ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং তারা ভীষণভাবে বিশ্বাস করতে চায় যে, এ মহামারি শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আমরা এ বছর শেষ করতে চলেছি এমন একটি ভাইরাল মহামারি দিয়ে যা সাড়ে সাত কোটির বেশি লোককে সংক্রমিত করেছে এবং প্রায় ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদদাতা ক্যারল পিয়ারসন তার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে, সারা পৃথিবীর মানুষ এখন ‘মহামারি ক্লান্তি’ তে ভুগছে। বিশ্বজুড়ে মানুষ মুখোশ পরতে পরতে ক্লান্ত, সামাজিক দূরত্ব অনুশীলনে ক্লান্ত। স্বাস্থ্যকর্মীরাও মানুষের সেবা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে নিযুক্ত নার্সদের আন্তর্জাতিক কাউন্সিলের হাওয়ার্ড ক্যাটন বলেন, ‘নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। যে কোন মানুষ যখন এ রোগের আক্রমণে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে, তখন অন্য কেউ নয়, এই নার্সরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের পাশে থাকছেন। শ্বাসতন্ত্রের থেরাপিস্ট ন্যান্সি রবার্ট বলেন ‘কেউ আপনার চোখের সামনে মরে যেতে দেখলে কষ্ট হয়’। মহামারি শুরুর পর থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘ সময় ধরে রোগীদের সেবা করছেন, মানুষ তাদেরকে এ মহৎ কাজের জন্য অনেক বাহ্বা দিয়েছে এবং কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য তাদের সাধুবাদ জানিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করেছে, কিন্তু পূর্বের সেই আক্রমণ শেষ হতে না হতেই আবার নতুন করে কোভিডের আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে।

মহামারিটি চলতে থাকায়, লোকেদের নিরাপদ অভ্যাস বজায় রাখতে সমস্যা হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে আমরা কোভিডের হুমকির মোকাবিলা করতে মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি এবং এই চাপের মাত্রা কমে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত করার চেষ্টায় শিথিল হয়ে পড়ছি। তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে, আমরা যখন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরতি নিচ্ছি, কোভিড-১৯ কিন্তু কোন বিরতি নিচ্ছে না, এই রোগ বাজারে আগত মানুষ, বিক্ষোভের স্থানে জমায়েত হওয়া মানুষ, সবাইকে সংক্রমিত করছে। কোভিড কোন কারণ অথবা যুক্তি মেনে চলে না অথবা এর উপর কোন রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোও সম্ভব হয় না।

সারা বিশ্বের মানুষ যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা স্বীকার করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী নেতাদের আহ্বান জানিয়েছে। ইলিনয় রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ ডাক্তার ডা. এনগোজি ইজিকা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি যে, মহামারিজনিত ক্লান্তি কীভাবে সবাইকে আঘাত করছে, মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের না দেখতে পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের সমস্ত স্বভাবগুলোর পরিবর্তন হয়েছে, আমরা কীভাবে কাজ করছি, কীভাবে আনন্দ করছি, সবকিছুই পালটে গেছে এবং ভবিষ্যতে কবে যে এ অবস্থার শেষ হবে তাও আমরা জানি না’।

যদিও খুব শিগগিরই একটি ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মহামারির ক্লান্তি দূর করার একমাত্র উপায় হল মনের জোর অথবা ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি স্ট্যামিনা, তাই দিয়ে এর মোকাবিলা করা। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক মনোবিজ্ঞানী স্কট বিইয়া বলেন, ‘আমি এটিকে মানুষের মনের ইচ্ছাশক্তি বলে মনে করি, এ মহামারির সময় অনেক কাজ অস্বস্তিকর হলেও আমরা সেগুলি করতে আগ্রহী হচ্ছি, কেননা আমরা এগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করছি এবং তাদের যথাযথ বিবেচনা করছি কারণ এগুলো আমাদের রক্ষা করতে পারে’।

বিশেষজ্ঞরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং মানুষ নিজেদের আনন্দ যাতে খুঁজে পাচ্ছেন সে সমস্ত কাজই তাদেরকে করতে বলছেন। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন যে, মানুষ যদি এ মহামারি সমাধানে অংশ নিতে চায়, তবে তাদেরকে আরও বেশি করে সহযোগিতা করতে হবে। এটি অন্যান্য মহামারি শেষ করতে সাহায্য করেছে, সুতরাং এবারেও কাজ করবে। এইভাবে সবাই মিলে কাজ করতে করতে একদিন মহামারিটি মহামারিটি শেষ হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ