Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিগারেটে কর আরোপে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ইউআইএস’র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সিগারেটের ওপর কর আরোপে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস শিকাগোর (ইউআইএস) হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশসহ ১৭০টিরও বেশি দেশের সিগারেট করনীতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল সিগারেট ট্যাক্স স্কোরকার্ড প্রকাশ করেছে টোব্যাকোনমিকস। গতকাল তামাকবিরোধী সংগঠন ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান’ (প্রজ্ঞা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ২ দশমিক ৩৮ (৫ এর মধ্যে), যা বৈশ্বিক গড় স্কোরের (২ দশমিক ০৭) চেয়ে সামান্য বেশি। তবে সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে যেসব দেশ খুব ভালো স্কোর (৪ দশমিক ৬৩) করেছে তাদের তুলনায় বাংলাদেশের এখনও অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্কোর পাওয়া দুটি দেশ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। দেশদুটিতে সিগারেটের ওপর উচ্চহারে সুনির্দিষ্ট একক এক্সাইজ কর চালু থাকায় এবং নিয়মিতভাবে তা বৃদ্ধি করায় সিগারেটের সহজলভ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। টোব্যাকোনমিকস স্কোরকার্ড বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের তথ্য ব্যবহার করে দেশগুলির সিগারেট কর নীতিমালা মূল্যায়ন করেছে। প্রায় অর্ধেক দেশ দুইয়ের নিচে স্কোর পেয়েছে। ২০১৪ সালে থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে খুব সামান্যই, বৈশ্বিক গড় স্কোর ১ দশমিক ৮৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ০৭।
টোব্যাকোনমিকসের পরিচালক এবং এই স্কোরকার্ডের প্রধান লেখক ফ্রাঙ্ক জে. চালুপকা বলেন, এই স্কোরকার্ডের মাধ্যমে এটি পরিস্কার, সিগারেটের কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে যা কোভিড-১৯ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যবহার করা সম্ভব এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এরফলে অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং যা একটি সুস্থ ও উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী গঠনে অবদান রাখবে।
সিগারেট করনীতির স্কোর এ ২০১৪ সালের ( শূণ্য দশমিক ৮৭৫) তুলনায় ২০১৮ সালে (২ দশমিক ৩৮) বাংলাদেশের কিছুটা অগ্রগতি হলেও সিগারেটের দাম ও করকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। উভয় ক্ষেত্রেই মাত্র ১ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। বহু স্তরবিশিষ্ট অ্যাডভেলোরেম করকাঠামো এবং ভিত্তিমূল্য খুব কম থাকাই এর অন্যতম প্রধান কারণ।
জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহবায়ক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সিগারেটের বিদ্যমান জটিল মূল্যস্তর প্রথা বাংলাদেশের স্কোর কম পাওয়ার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে তামাকাসক্ত ফুসফুস করোনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজ বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাকের ক্ষতির শিকার এই বিপুল প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সস্তা তামাকপণ্যই এর প্রধান কারণ।
বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে অকাল মৃত্যুবরণ করে এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা উক্ত বছরের জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। উপরন্তু, কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সুনিশ্চিতভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহের মাধ্যমে এই অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের জন্য একটি দ্রুত এবং সহজ উপায় হবে তামাক কর সংস্কার করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিগারেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ