Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাথা নত না করার দৃষ্টান্ত থেইন

রাখাইনে ধর্ষণ, তিন সেনার ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

সেনা সদস্যদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর দৃঢ়চেতা নারী থেইন নু (ছদ্মনাম) মিয়ানমারের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু তিনি মাথা নত করে মেনে নেননি সব। কয়েক মাসের আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে বিরল এক জয় পেয়েছেন তিনি। শনিবার এক সেনা আদালতের রায়ে তিন ধর্ষকের ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। ৩৬ বছর বয়সী থেইন উ মনে করেন তার এই বিজয় সেনা বাহিনীর ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্য নারীদের কথা বলার এবং সেনা সদস্যদের দায়মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস যোগাবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। থেইন নু মনে করেন, এই শাস্তি অন্য যেসব ধর্ষিতা আছেন বা নির্যাতিতা আছেন তাদেরকে সাহস যোগাবে। সেনাবাহিনীর দায়মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন তারা। থেইন নু ৩৬ বছর বয়স্ক চার সন্তানের মা। জুনে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তাকে গণধর্ষণ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই অঞ্চলেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গাদের ধনসম্পদ ধ্বংস করে দেয়া সহ ইত্যকার অভিযোগ আছে। তা প্রামাণ্য আকারেও উপস্থাপন করেছে অনেক মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন। জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। থেইন নু ধর্ষিত হওয়ার পর সেনাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, আমার মতো অনেক নারীই একই ঘটনার শিকার হয়েছেন। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছেন। কিন্তু তাদের মতো আমি যদি এটা গোপন করে যেতাম তাহলে রাখাইনে আরো মানুষ একই ঘটনার শিকার হতেন। সেনাবাহিনী রাখাইনে কোনো ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নয় বলে আন্তর্জাতিক সংগঠনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু থেইন নু প্রমাণ করে দিয়েছেন, রাখাইনে ধর্ষণ করা হচ্ছে। আর তাতে জড়িত সেনাবাহিনী। কিন্তু তিনি অভিযোগ করেছেন। সাহস দেখিয়েছেন। ফলে সমাজে তাকে কলঙ্কিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমনকি তার স্বামী পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলেন না। থেইন নু বলেন, একই সঙ্গে আমি খুশি এবং দুঃখিত। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সামরিক বিচারে তার পক্ষে রায় দেয়া হবে। তবু থেইন নু বলেন, আমি বিচার পাওয়ার পরও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এই রায়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে। সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হবে। কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হলো অবিশ্বস্ত দু’মুখো মানুষ। শনিবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আদালত তাদের সেনা সদস্যদের অন্যায়ের বিরল স্বীকারোক্তি দিয়েছে এই শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে। তারা ধর্ষক তিন সেনা সদস্যকে জেল দিয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা এতে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘ওয়াটারশেড’ দেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তারা সতর্কতা দিয়েছেন। হিউম্যান রাইট ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেছেন, সেনাবাহিনীর র‌্যাংকধারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মোকাবিলার জন্য মিয়ানমারেরে সেনাবাহিনী প্রস্তুত কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর আগে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা ভিকটিমের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছে। ফিল রবার্টসন আরো বলেন, অনেক মামলার এমন বিচার দাবি করে। সামরিক আদালত তো কাজ করে রুদ্ধদ্বার। এখন থেকে প্রায় ৬ মাস আগে থেইন নু-এর ওপর নেমে এসেছিল নৃশংস, ভয়াল সেই রাত। সে কথা এখনও দিবালোকের মতো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারেন তিনি। তিনি বলেন, অন্ধকার নেমে আসার পর পরই গ্রামে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলো। তিনি মেয়ে ও অন্যদের নিয়ে শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সঙ্গে ছিলেন অন্য নারী ও তাদের সন্তানরা। মধ্যরাতের দিকে চারজন সেনা সদস্য জোর করে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। শিশুরা কান্নাকাটি করছিল। ফলে সহজেই তাদেরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় সেনারা। থেইন নু বলেন- আমি বুঝতে পারছিলাম যে তিন সেনা সদস্য আমাকে ধরেছে, তাদের চেয়ে শক্তিতে আমি দুর্বল। ফলে তাদের হাত থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। সেই রাতে তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে ওই সেনারা। এ ঘটনার পর সন্তানদের নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালান। চলে যান সিতওয়েতে। সেখানে গিয়েই তিনি বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেন, তিন ধর্ষণকারী বাদেও চতুর্থ যে সেনা কর্মকর্তা সেখানে ছিল, তিনি ওই ধর্ষণ থামাতে পারতেন। তারও বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। আরাকান ওমেন নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান নাইও আয়ি বলেন, যেহেতু বিচার করা হয়েছে, তাই এখন অন্য ধর্ষিতাদের সামনে এসে বিচার চাওয়া উচিত। উল্লেখ্য, থেইন নু ও তার পরিবারকে আইনি সহায়তা, পরামর্শ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে আরাকা ওমেন নেটওয়ার্ক। আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ