Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোনোদিন স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না ওলামায়ে কেরাম

বিজয় দিবসের সভায় ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

ওলামায়ে কেরাম কোনদিন স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না। এক শ্রেণির কুচক্রি মহল ওলামায়ে কেরামকে স্বাধীনতা বিরোধী বানিয়ে সংঘাতের পথ তৈরি করছে। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক সকলকে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি। বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে গতকাল বিভিন্ন ইসলামী দলের আলোচনা সভা ও বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর বলেছেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজ কোনদিন স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন না। এক প্রকার কুচক্রি মহল ওলামায়ে কেরামকে স্বাধীনতা বিরোধী বানিয়ে সংঘাতের পথ তৈরি করছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারির নেতৃত্বে একদল ওলামায়ে কেরাম হযরত হাফেজ্জী হুজুরের নিকট এসে বললেন হযরত আমরা কি করতে পারি। জবাবে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, মুক্তিযুদ্ধ হল জালিমদের বিরুদ্ধে মাজলুমের সংগ্রাম। আমাদের জন্য ওয়াজিব মজলুমদের পক্ষ নেয়া। তখন অনেক ওলামায়ে কেরাম হাফেজ্জী হুজুরের কথায় উৎসাহিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ওলামায়ে কেরামরাই বেশি ভালবাসে। তার প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর গোসল এবং জানাজা। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধকে বিনা গোসলে বিনা জানাজায় গোপালগঞ্জে কবর দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওলামায়ে কেরাম সেনাবাহিনীর সাথে তর্ক বিতর্ক করে বঙ্গবন্ধুকে গোসল করিয়ে জানাজা দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় কবর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দেশের আলেম সমাজ স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন আছেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন। রাম-বামরা কোনো দিন আলেমদেরকে দেশবিরোধী বানাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কামরাঙ্গীরচর মারকাজুল মা’আরিফিল ইসলামিয়া মাদরাসার পক্ষ থেকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) এর আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাওলানা ইউসুফ সন্ধিপীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন বারিধারা মাদরাসা সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, ৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নুর আলম, বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলাম, যুব জমিয়তের সাবেক সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ফাহাদ, মাওলানা তৈয়বুর রহমান, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, মাওলানা খাইরুজ্জামান, মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক, মুফতি আবু দারদা, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা মোশারফ হোসেন, মাওলানা ইসমাঈল হুসাইন ও মুহাম্মাদ ইলিয়াস হোসাইন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়েছে। দেশের সর্বত্র দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ৩০ লাখ মা-বোনের ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও তারা আজও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই কী ছিলো স্বাধীনতার চাওয়া পাওয়া। শাসকগোষ্ঠীর সীমাহীন ব্যর্থতাকে ওলামায়ে কেরামের কাঁদে তুলে দিয়ে পার পেতে চাচ্ছে। আজকে দেশ ও জাতির অতন্ত্র প্রহরী ওলাময়ে কেরামকে একটি চিহ্নিত মহল দেশের স্বাধীনতা বিরোধী বলে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে অপমান ও কটাক্ষ করছে। সরকার দলীয় লোকজন যেভাবে দেশের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা, নায়েবে নবী ওলামায়ে কেরামকে নিয়ে গালি-গালাজ করছে এটা খুবই দুঃখজনক। বিশ্বের সকল পরাশক্তিকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাখি দ্বারা, মশার মাধ্যমে ধরাশায়ী করে দিয়েছেন। আল্লাহর ধরা বড়ই শক্ত। কাজেই ইসলামবিরোধী নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশ ও ইসলামের অকৃত্রিম বন্ধু ওলামায়ে কেরাম। তাদের গালি-গালাজ করে প্রকৃত সত্য ধাবিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল অর্জন নাগরিক ও মানবিক অধিকার হারিয়ে দেশ আজ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছে। স্বাধীনতার মূল অর্জন সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার হারিয়ে দেশবাসী আজ দিশেহারা। তিনি হিংসা বিদ্বেষ ভুলে মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি আল্লামা আবদুর রব ইউসুফী বলেছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদেরকে আমরা মহান বিজয় দিবসে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁদের বিরত্বগাঁথা ইতিহাস কখনোই ভুলার মত নয়। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক সকলকে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। গতকাল বুধবার বিকেলে পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর জমিয়ত আয়োজিত ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আল্লামা ইউসুফী এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।

ঢাকা মহানগর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায আরো বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, অর্থ-সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরী, মহানগর জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, মুফতি বশীরুল হাসান খাদিমানী, মুফতি মাহবুবুল আলম, মুফতি সলীমুল্লাহ, মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম ও যুব জমিয়ত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দীন ইউসুফ ফাহীম। আলোচনা সভা শেষে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.)এর মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির জন্য বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মঞ্জুরুল ইলাম আফেন্দী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওলামা

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ