Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় ঋণের করুণ হাল

১১ বছরে ছাড় হয়েছে ১০ শতাংশেরও কম : ঋণের শর্ত ও অর্থ ছাড়ে কড়াকড়িতে আগ্রহ নেই মন্ত্রণালয়গুলোর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতীয় ঋণে খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছে ১০ বছর ধরে। এর মধ্যে তিন দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। তিন বছরের প্রকল্পে ১০ বছর ধরে চলে ব্যয় বেড়েছে ১২১ শতাংশ। ২ হাজার ৮০ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রকল্পের টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে-এ প্রকল্পের কাজ যে ঠিকাদার পেয়েছিল তারা নিজেরা কাজ না করে নিম্নমানের এক ঠিকাদারকে সাব কন্ট্রাক দিয়েছে। এতে করে যতটুকু কাজ হয়েছে তা খুবই নিম্নমানের। ভারতের ঋণে রেলের আরেক প্রকল্প চলমান ৯ বছর। দীর্ঘ ৯ বছরে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রমের প্রায় ৮৩ শতাংশ এখনও বাকি। প্রকল্পটির কাজ শেষে করতে বাড়তি আরও ৯ বছর সময় লাগবে। সব মিলে ভারতের ঋণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে লাগবে ১৮ বছর। শুধু রেল প্রকল্প নয়, ভারতের ঋণে বাংলাদেশে চলমান সবগুলো প্রকল্পের এমন করুণ দশা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের শর্ত ও অর্থ ছাড়ে কড়াকড়ির কারণে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভারতের ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ নেই। এতে কবে নাগাদ এ ঋণের পুরোটা ব্যবহার শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না কেউই।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে প্রথম রাষ্ট্রীয় ঋণ (এলওসি) অনুমোদন করে দেশটি। ১০০ কোটি ডলারের ওই ঋণ থেকে পরে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করা হয়। তবে ঋণের পরিমাণ আরও ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার বাড়ানো হয়। এছাড়া দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২০০ কোটি ও তৃতীয় এলওসির আওতায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে ভারত। সব মিলিয়ে ভারতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে প্রায় ১১ বছরে এলওসির মাত্র ৭১ কোটি ডলার ব্যবহার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। যা মোট ঋণের মাত্র ১০ শতাংশেরও কম। এখনও প্রথম এলওসির প্রকল্পগুলোরই বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলওসির অগ্রগতি পর্যালোচনা সম্পর্কীত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ দ্রুত ছাড় করার নির্দেশনা দেয়া হয় ওই বৈঠকে। বৈঠকের কার্যবিবরণীর তথ্যমতে সূত্র জানায়, প্রথম এলওসির আওতায় ঋণ রয়েছে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৭১ দশমিক ১১ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। এ অর্থে ১২টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে, একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), একটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও একটি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর বাইরে প্রথম এলওসির তিনটি প্রকল্প এখনও চলমান রয়েছে। এগুলো হলো- খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয়-চতুর্থ লাইন রেলপথ নির্মাণ ও টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন নির্মাণ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন। এ তিন প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, ১২ কোটি ৩১ লাখ ডলার ও সাত কোটি ৮১ লাখ ডলার। আর খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ছাড় হয়েছে ২০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং টঙ্গী তৃতীয়-চতুর্থ লাইন রেলপথ নির্মাণ ও টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ছাড় হয়েছে তিন কোটি ৮৩ লাখ ডলার। তবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পে এখনও কোনো অর্থ ছাড় হয়নি।

জানা গেছে, ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১০ সালের ৭ আগস্ট। তবে ২০১২ সালে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ থেকে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পরে ২০১৬ সালের আগস্টে এলওসিতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আরও ছয় কোটি ২০ ডলার ঋণ অনুমোদন করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সব মিলে প্রথম এলওসিতে ভারতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

এদিকে দ্বিতীয় এলওসির আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ১৮টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে ১৬টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। এজন্য ২০১৬ সালের ৯ মার্চ ২০০ কোটি ডলারের চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এক্সিম ব্যাংক। তবে তিন কোটি ৪৪ লাখ ডলারের একটি প্রকল্প পরে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় এলওসির আওতায় মাত্র দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এগুলো হলো বিআরটিসির জন্য ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কেনার প্রকল্প। যেগুলোয় ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। আর বর্তমানে ১৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের প্রকল্প রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- সৈয়দপুরে নতুন একটি ক্যারেজ ওয়ার্কশপ নির্মাণ, খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণ ও পাবর্তীপুর-কাউনিয়া রেলপথ মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি প্রকল্প হলো- সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে যন্ত্রপাতি কেনা এবং আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ।

এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বড়পুকুরিয়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, মোংলায় ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ১২টি জেলায় আইটি/হাইটেক পার্ক নির্মাণ, আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীবন্দর নির্মাণ, জামালপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ, চার জেলায় (কক্সবাজার, যশোর, পাবনা ও নোয়াখালী) ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও অন্যান্য ভবন নির্মাণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের অবকাঠামো উন্নয়ন। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ছাড় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার বা চার দশমিক ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে, তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি চূড়ান্ত করা হয়। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয় ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর। তবে ছাড় হয়েছে মাত্র ৫২ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। বেশিরভাগ প্রকল্পেরই কোনো অগ্রগতি নেই।

তৃতীয় এলওসির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক বিভাগের রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- বেনাপোল-যশোর-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণ, রামগড়-বারৈয়ারহাট চার লেন নির্মাণ ও কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল চার লেন নির্মাণ। রেলওয়ের দুটি প্রকল্প হলো- বগুড়া-সৈয়দ এম মনসুর আলী স্টেশন রেলপথ নির্মাণ ও ঈশ্বরদীতে রেলকাম সড়ক আইসিডি নির্মাণ। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে সড়ক বাতি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, পায়রা বহুমুখী বন্দর টার্মিনাল নির্মাণ, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল নির্মাণ, মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন, মিরেসরাইয়ের ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন এবং টেলিটকের নেটওয়ার্ক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক বেস স্টেশন নির্মাণ।

 



 

Show all comments
  • Robiul Islam ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 0
    ভারতী থেকে সব ধরনের ঋণ নেয়া বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sani Alom ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
    Koto sundor friendship amader India r sathe
    Total Reply(0) Reply
  • Sk Farid ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৪৯ এএম says : 0
    বাবুরা নিজেদের বার্থরুম সারায় নীল আকাশের নীচে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখায় হাইটেক সিটির
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৪৯ এএম says : 0
    বন্ধু বলে কথা এসব ব্যাপারনা। বন্ধু বাঁশ দিতেই পারে এসব বলতে নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • KH Ruhan Ali ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৪৯ এএম says : 0
    কোন ব্যাপার না,,, পরিক্ষিত বন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • এম আর ইমন ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫০ এএম says : 0
    এরা নিজেরাই চলতে তেরো মুশকিল। আবার আমাদেরকে ঋণ দেয়। পারলে ওদেরকে বাংলাদেশ এখন ঋণ দিতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • MD Emran ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ এএম says : 0
    চেতনার বন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Jasim Uddin ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ এএম says : 0
    যাদের নিজেদের টয়লেট নাই তারা আবার অন্নের বাড়ির রেললাইন বানাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Amirul Islam ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩১ এএম says : 0
    ভারত আমাদের চেয়ে ধনী রাষ্ট্র নয় তাই তাদের ঋনের অর্থে বাংলাদেশে কোন ভালো কাজ হবে তা আশা করা যায় না
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩৮ এএম says : 0
    আর যাই হোক, ভারতের কোন loss তো হয়নি, এটা নিশ্চিত করা গেছে । এতে নিশ্চয় আমাদের অনেক দেশ প্রমিক(!) গণ খুব খুশী।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Alomgir Hosain Genius ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:৪৪ এএম says : 0
    নিজের পা না থাকলে অন্যের পা দিয়ে চলতে গেলে একটু সম্যাসা হয়ে থাকে
    Total Reply(0) Reply
  • dulal mia ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৩২ এএম says : 0
    যাদের নিজেদের টয়লেট নাই তারা আবার অন্নের বাড়ির রেললাইন বানাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৪১ এএম says : 0
    If our country ruled by the Law of Allah then we would have developed our country without any foreign countries help. Our government destroyed our country.
    Total Reply(0) Reply
  • They sale dry fish for milk, we get dry fish for giving up milk, there is a folk like this in Bengali ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৫১ এএম says : 0
    They sale fish for milk, we sale milk for fish
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ