Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগের তৃণমূলে হ-য-ব-র-ল

৬১ পৌর নির্বাচনে প্রার্থী ৩১২

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি নিয়ে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেজন্য ফরম বিক্রি করতে নতুন নিয়ম করে দলটি। তৃণমূলের তালিকার বাইরে ফরম বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পরে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সুপারিশে ফরম কেনার সুযোগ দেয়া হয়। ফলে নিয়ম করে আবার ফাঁকফোঁকড় রাখায় তৃণমূলের শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা কাজে আসেনি। দ্বিতীয় দফায় ৬১টি পৌরসভার নির্বাচনে ৩১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। তৃণমূল সংগঠন থেকে কেন্দ্রে প্রার্থীর তালিকায় নাম পাঠানো নিয়ে বিভাজন বেড়েছে কয়েকগুণ।

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনের ফরম বিক্রি ও জমা শেষ হয়েছে গত ১৩ ডিসেম্বর। আগামী ১৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিদ্রোহী হিসেবে যারা নির্বাচন করেছে, তাদের সহায়তাকারী, রাজাকার, সন্ত্রাস, মাদকের সাথে জড়িতদের নাম কেন্দ্রে না পাঠাতে নির্দেশনা দেয় আওয়ামী লীগ। তালিকার বাইরে ফরম বিক্রি না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রথমে। এরই মধ্যে কেন্দ্রে নাম পাঠানো নিয়ে ঘটেছে নানা অপ্রীতিকর ঘঠনা। রাজাকার পরিবারের সন্তানদেরও নামও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। তারা ফরমও কিনে জমা দিয়েছেন। যা নিয়ে তৃণমূলে চলছে নানা রকমের বিতর্ক। আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশেও অনেক বিতর্কিতরা ফরম কেনার সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্র ও তৃণমূলের সমন্বয়হীনতা ফুটে উঠেছে।

সম্প্রতি লক্ষীপুর সদর পৌরসভায় নাম পাঠানো নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুকে মারধরের চেষ্টা করেন সদর পৌরসভার মেয়র ও লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের।তৃণমূল আওয়ামী লীগ পৌর মেয়র আবু তাহেরকে বাদ দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জনের নাম পাঠায়। তাহের পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্যে লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ। এবার লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ একাট্টা হয়ে ওই পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। গত উপজেলা নির্বাচনে আবু তাহেরের ছেলে সালাহ উদ্দিন টিপুকে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করা তিনি। সে সময় বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন না করতে আবু তাহেরকে অনুরোধ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সে সময় তাহের হানিফকে বলেন, প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কার করেন, তবুও নির্বাচন করবো। এ বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগ রেজুলেশন করে কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছে।

একই জেলার রায়পুর পৌরসভায় পৌর মেয়র পদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ রফিকুল হায়দার পাঠানসহ (বাবুল) চারজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠায়। এই পাঠান ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে মামলা করেন। ২০১০ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। অথচ তাকেই তৃণমূল আওয়ামী লীগ এক নাম্বারে রেখে কেন্দ্রে নাম পাঠায়।

স¤প্রতি ১ম ধপের পৌর নির্বাচনে কুড়িগ্রাম পৌরসভায় কাজীউল ইসলামকে আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি নৌকা প্রতীক পাওয়া কাজীউল ইসলাম রাজাকারের বংশধর হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাছে প্রতিষ্ঠিত। আর তাকেই কুড়িগ্রাম পৌরসভায় কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কুড়িগ্রামে দলীয় নেতারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও কেন্দ্র থেকে অবস্থান পাল্টানো হয়নি। একসময় কাজীউল ইসলাম বাসদ করতেন। বাসদের সমর্থনে ১৯৯৩ সালে পৌর মেয়রও হন তিনি।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ৫ জন। প্রার্থী ঠিক করতে বর্ধিত সভা করে পৌর আওয়ামী লীগ। কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় প্রার্থী বাছাই তালিকা। পৌর আওয়ামী লীগ স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিনের এপিএস তোফায়েল আহমেদকে একক প্রার্থী করে জেলায় নাম পাঠায়। এতে সুপারিশ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র লতিফুর রহমান রতনও আলাদা রেজুলেশন করে নিজের নাম পাঠান জেলা আওয়ামী লীগের কাছে। পরে জেলা আওয়ামী লীগ দুই পক্ষে দুইজনের নামই কেন্দ্রে পাঠান। সে অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে তাদের কাছে ফরম বিক্রি করে। উপোরক্ত দুইজনই রাজাকার পরিবারে সন্তান বলে অভিযোগ রয়েছে। ফরম বিক্রি শিথিল করায় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সুপারিশে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মোহনগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান, প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস আজারে মেয়ে তাহমিনা পারভীন বিথি ও মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজুয়ান আলী খান আর্নিক ও মোহনগঞ্জ উপজেলার দপ্তর সম্পাক মো. এমদাদুল ইসলাম খোকন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মন চাইলেই যেন কেউ আওয়ামী লীগের ফরম কিনতে না পারেন সেজন্য তালিকার বাইরে ফরম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের নাম পাঠানো নিয়ে প্রতিবারই জটিলতা তৈরী হয়, তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশে ফরম বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে প্রতিযোগীতা হয় তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে সকলেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

 

 



 

Show all comments
  • Tayab ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১২ এএম says : 0
    রাউজা‌নের খবর প্রকাশ করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Tofazzal Hossain ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    কাউন্সিলারদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে এটাই আওয়ামী লীগের গঠনতান্ত্রিক বিধান। এ বিধান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের কমিটি গঠনে সঠিক মানা হয় না বলেই নেতৃত্বের গুণগত মান অগ্রহণযোগ্য নিম্নমানের হয় এবং নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগও সংকোচিত হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ