Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেনিজুয়েলার সৈকতে মিলেছে শত শত স্বর্ণ ও রৌপ্য অলঙ্কার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ভেনেজুয়েলার ক্যারিবিয়ান উপক‚লের গুয়াকা গ্রামের জেলে ইয়লম্যান লারেস তার টিনের ছাউনি দেয়া কুঁড়েঘরের দিকে ফেরার পথে সাগর তীরে কিছু একটা জ্বলজ্বল করতে দেখেন। বালিতে হাত দিয়ে তিনি সেটি টেনে বের করে দেখেন, ভার্জিন মেরির চিত্র খচিত একটি স্বর্ণপদক। লারেসের আবিষ্কারের কথাটি দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং শীঘ্রই গ্রামের প্রায় ২ হাজার বাসিন্দা গুপ্তধন শিকারে যোগ দেন। তারা তীরের প্রতিটি ইঞ্চি খুঁজতে শুরু করেন। জরাজীর্ণ মাছ ধরার নৌকাগুলোর চারপাশে খনন এমনকি গুপ্তধনের আশায় তারা দখল করা কয়েক বর্গফুট বালু রক্ষা করতে সৈকতে ঘুমাতে শুরু করেন।
কয়েক ডজন গ্রামবাসী জানিয়েছেন যে, তারা কমপক্ষে একটি করে একটি সোনার আংটি পেয়েছেন। কথিত রয়েছে যে, কেউ কেউ তাদের আবিষ্কারগুলো প্রায় ১৫ শ’ ডলারে বিক্রি করেছেন। কারও অবশ্য জানা নেই যে, স্বর্ণগুলি কোত্থেকে এসেছিল এবং গুয়াকার সংকীর্ণ ওয়ার্কেডে সৈকতের কয়েক শত ফুট জুড়ে কীভাবে এটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এই রহস্যটি এখন লোককাহিনীর সাথে মিশে গেছে এবং সমানভাবে ক্যারিবীয় জলদস্যুদের কিংবদন্তি, খ্রিস্টান ঐতিহ্য এবং ভেনিজুয়েলার সরকারের প্রতি অবিশ্বাসকে তুলে ধরেছে। তবে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মাধ্যমে করা গুয়াকার সমুদ্র সৈকতে পাওয়া একটি স্বর্ণের চেইনের রাসায়নিক পরীক্ষায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, জিনিসটি সম্ভবত সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ইউরোপে তৈরি হয়েছিল।

ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক মন্দা গর্বিত জেলে গ্রামটিকে দারুণ অভাবে নিমজ্জিত করে। তারপর গ্রামটির অর্থনৈতিক সঙ্কটের বেদনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে বদলে দিতে সৈকতে রহস্যজনকভাবে গহনাগুলি ভেসে উঠতে শুরু করে। গেল সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে তারা অনুসন্ধান করে সৈকতে ভেসে আসা শত শত টুকরো স্বর্ণ ও রৌপ্য গহনা, অলঙ্কার এবং স্বর্ণের নগেট খুঁজে পায়, যেগুলি আপাতদৃষ্টিতে ভেনেজুয়েলার অন্তহীন অর্থনৈতিক পতন থেকে গ্রামবাসীদের বিস্ময়কর এবং আশ্চর্যজনকভাবে কিছুটা মুক্ত করেছে। স্বর্ণের আংটি খুঁজে পাওয়া স্থানীয় ফিশ প্ল্যান্ট কর্মী সিরো কুইজাদা বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরই তার কর্মসূচি সাজিয়েছেন।’ এই আবিষ্কারের প্রথম ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর, ভেনিজুয়েলা জুড়ে এখবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে এঅঞ্চলের প্রত্যন্ততা, গ্যাসোলিনের ব্যাপক সংকট এবং করোনাভাইরাস জনিত কোয়ারান্টাইন গণহারে স্বর্ণ শিকারকে আটকা দিয়েছে।

গুয়াকা একসময় ভেনিজুয়েলার মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ২০১৪ সালে ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হওয়ার আগে গুয়াকা এবং তার আশেপাশের গ্রামগুলি লাতিন আমেরিকাতে সার্ডিন এবং টিনজাত টুনা সরবরাহ করতো। বর্তমানে এঅঞ্চলে ৩০ টি প্রক্রিয়াজাত কারখানার মধ্যে মাত্র ৮ টি চলছে এবং নিকটবর্তী সরকারী টুনা ক্যানিং কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। এহেন দুর্দশার মধ্যে মূল্যবান আবিষ্কারটি গ্রামের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি সাধন করেছে। ৪ মাস অনুপস্থিতির পর সার্ডিন ভরা নৌকাগুলি আবারও গুয়াকার তীরে ফিরে এসেছে এবং গ্যাসোলিন সরবরাহের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে, গুয়াকার স্বর্ণগুলির উৎসটি কখনও হয়তো জানা যাবে না। কারণ অভাবী গ্রামবাসীরা বেশিরভাগ সময়ই তৎক্ষণাত খাবার কেনার জন্য তাদের আবিষ্কার করা জিনিসগুলি বিক্রি করে দিয়েছে। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।



 

Show all comments
  • নওরিন ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    আমাদের দেশে যদি এমন মিলতো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভেনিজুয়েলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ