পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভার বহন করবে বেশি; কিন্তু নির্মাণ উপকরণের ব্যবহার হবে কম। নির্মাণে নেই খুব বেশি জটিলতা, নকশাও হবে দৃষ্টিনন্দন। এসব কারণে বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় ট্রাস সেতু। পদ্মা সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছে এ প্রযুক্তিতে। এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাস সেতু।
৪১তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে পদ্মার দুইপাড়। পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদীর বুকে দন্ডায়মান বিশাল এ স্থাপনা নির্মাণের পেছনেও রয়েছে বিশাল এক কর্মযজ্ঞের গল্প। জার্মানি থেকে হ্যামার, লুক্সেমবার্গ থেকে রেলের স্ট্রিংগার, চীন থেকে ট্রাস, অস্ট্রেলিয়া থেকে পরামর্শক; এমনভাবে বহুদেশ থেকে প্রকৌশলী ও প্রকৌশল যন্ত্রপাতি এসেছে পদ্মায়। ২০ হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলীর টুকরো টুকরো মেধা ও শ্রমে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যার নির্মাণকাজে সরাসরি জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ এবং চীনের ৭০০ মেধাবী প্রকৌশলী। দিনে পদ্মার দুই পাড়ে কাজ করেছেন ১২ থেকে ১৩ হাজার শ্রমিক।
পৃথিবীতে ট্রাস সেতুর ব্যবহার ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে পদ্ধতিটি যে বেশ প্রাচীন, তার প্রমাণ মেলে ফ্রেঞ্চ স্থপতি ভিলার্ড দি কোর্তের ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি স্কেচবুকে। এ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে অসংখ্য বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ভৈরব ব্রিজ, পাকশী সেতুসহ অনেক রেলসেতু ট্রাস প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা। এতদিন ট্রাস প্রযুক্তিতে নির্মিত দীর্ঘতম সেতু ছিল ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের গোদাবরী সেতু। দুই লেন সড়ক ও সিঙ্গেল লাইন রেলপথের গোদাবরী সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। এ সেতুর স্প্যান সংখ্যা ২৭। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৯১ দশমিক ৫ মিটার। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সচরাচর কাঠ বা স্টিলের কাঠামো ব্যবহার করা হয় ট্রাস প্রযুক্তিতে। একটি কাঠামোর সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত করা হয় ত্রিভুজাকৃতিতে। একাধিক ত্রিভুজাকৃতির কাঠামো দিয়ে গড়ে তোলা হয় একেকটি স্প্যান। কাঠামোগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত থাকায় তার ভার সব কাঠামোর ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। একইভাবে যানবাহনের ভারও পুরো সেতুতে ছড়িয়ে দেয় তা। এটি শুধু সেতুর কাঠামোকে শক্তই করে না, সেতুকে নানা প্রতিক‚লতা থেকে রক্ষাও করে।
পদ্মা সেতুর একজন বিশেষজ্ঞ জানান, ছোট-বড় সেতু বা অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষেত্রে সরকার সবসময়ই বিদেশি পরামর্শক ও ঠিকাদার ব্যবহার করেছে। তবে পদ্মা সেতুতে বিদেশিদের সাথে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররাও কাজ করেছেন। সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশি ঠিকাদাররা করেছেন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানেও বেশিরভাগ বাংলাদেশি প্রকৌশলী কাজ করেছেন।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ। পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে, যেগুলোর ব্যাসার্ধ তিন মিটার। এত গভীরে এত মোটা পাইল আর কোনো সেতুতে করা হয়নি। সেতুর ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা ১০ হাজার টন, যা সেতুটিকে সর্বোচ্চ ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভ‚মিকম্প থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। এমন বিয়ারিং পৃথিবীর আর কোনো সেতুতে নেই। পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য ১১০ কোটি ডলার। এদিক দিয়েও বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প।
পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইলের লোড ৮ হাজার ২০০ টন। আর পিয়ারের লোড ৫০ হাজার টন। পাইলের এ লোড দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামার, যেটি বিশেষভাবে বানানো হয় জার্মান প্রযুক্তিতে, যাতে খরচ পড়েছে ৪০০ কোটি টাকার মতো। পদ্মা সেতুর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও নির্মাণের জন্য যে ওয়ার্কশপটি তৈরি করা হয়েছে, সেতু তৈরির কাজে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওয়ার্কশপ বলে দাবি করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। এ ওয়ার্কশপের বেশির ভাগ কাজ চলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। সর্বশেষ স্প্যান ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১৫টি রোবট।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর পর একদিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুরুর পর থেকে একটানা কাজ করে আসছি আমরা। সাধারণ ছুটি তো বটেই, ঈদের দিনও কাজ চালু রাখা হয়েছে। চলতি বছর প্রথমে করোনাভাইরাস ও পরে বন্যা কাজ চালু রাখার ক্ষেত্রে বেশ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। করোনার কারণে আমরা প্রকল্পের কর্মীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে কাজ চালু রেখেছি। বন্যার সময় ঝুঁকি নিয়েও চালিয়ে যাওয়া হয়েছে নির্মাণকাজ। কাজে ধীরগতি হয়তো এসেছে; কিন্তু কখনো তা থেমে থাকেনি।
পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ। এখন চলছে স্প্যানের ভেতরে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। একইভাবে স্প্যানের ওপর বসানো হচ্ছে রোডওয়ে স্ল্যাব। স্প্যানগুলোর ভেতরে রেলওয়ে স্ল্যাব বসবে ২ হাজার ৯৫৯টি। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, ১ হাজার ৯৪২টি রেলওয়ে স্ল্যাব এরই মধ্যে বসে গেছে। অন্যদিকে ওপরে বসানো হবে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব, যার মধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩টি। রোডওয়ে স্ল্যাবের ওপর গড়ে তোলা হবে চার লেনের সড়ক।
এখন পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতকরা ৯১ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৭৬ ভাগ। এরই মধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের জুন নাগাদ পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনো এর দেখাশোনা করি। পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। আমার মনে হয়, ২০২২ সালের মধ্যে আমরা সেতুটি খুলে দিতে পারব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।