Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পাওয়া যায় না পরিচয় হয় না তদন্ত

বাড়ছে নবজাতকের লাশ উদ্ধারের ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের পেছনে পানির পাম্প সংলগ্ন কেচি গেটের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৯ ডিসেম্বর বুধবার নবজাতকটির লাশ উদ্ধার করা হলেও কে বা কারা মৃত অবস্থায় ওই স্থানে রেখে গেছে তা পুলিশ এখনো জানতে পারেনি। প্রায়ই দেখা যায় অনাকাঙ্খিত নবজাতকের স্থান হয় ডাস্টবিন, ফুটপাত, ঝোপ-জঙ্গল, ট্রেনের বগি, শৌচাগার বা নালা-নর্দমায়। গত দুই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ৪টি নবজাতক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার তিনটির শরীরে পচন দেখা গেছে। এমনকি কাক ঠুকরেও খেয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে গত ৬ বছরে প্রায় ২১০টি নবজাতককে ডাস্টবিন, জঙ্গল ও রাস্তা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ মামলা করায় অধিকাংশ নবজাতকের ময়নাতদন্তও হয়েছে। সেই ময়নাতদন্তের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ডিএনএ প্রোফাইলও তৈরি করেছে। কিন্তু উন্নত দেশের মতো ডিএনএ ব্যাংক না থাকায় ডিএনএ ম্যাচ করানো সম্ভব হয়নি। আর তাই শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মৃত নবজাতকদের জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী অদৃশ্যই থেকে গেছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ২০৫টি মৃত নবজাতক উদ্ধার হয়। যার মধ্যে ২০১৯ সালে ৪২টি, ২০১৮ সালে ৩৯টি, ২০১৭ সালে ২৪টি, ২০১৬ সালে ২৮টি, ২০১৫ সালে ৫২টি মৃত নবজাতক ছিল। এদের কারোরই বাবা-মায়ের পরিচয় মেলেনি।
নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই বিয়ে বহির্ভূত অনেক ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ। ফলে এই নবজাতকদের জন্ম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জীবন্ত শিশুকে ফেলে দিয়ে যাওয়ার ঘটনাও।

অপরাধ গবেষকরা বলছেন, যে কোনও জায়গায় এসব শিশুদের ফেলে দেয়া হচ্ছে। ব্যাগে, বস্তায়, কাপড়ে মুড়িয়ে। কোনও শিশুর কান্না মানুষের কাছে পৌঁছালে ভাগ্যচক্রে বেঁচে যাচ্ছে। আর এসব ঘটনায় মামলা হলেও আসামি খুঁজে পাওয়া যায় না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, যত নবজাতক উদ্ধার হয়, সবগুলোর ময়নাতদন্ত হয় না। এ বাচ্চাগুলো সাধারণত প্রিম্যাচিউর হয়। বলতে গেলে সবগুলোই অ্যাবরশন করা। পুলিশ চাইলে আমরা ময়নাতদন্ত করি। শরীরের টিস্যু বা হাড় সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল করে সিআইডিতে পাঠাই।
তিনি আরো বলেন, নবজাতকদের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করা আমাদের দেশে অসম্ভব। কেননা আমাদের ডিএনএ ব্যাংক নেই। এটি থাকলে অনেক অপরাধই কমে যেত। উন্নত দেশে প্রত্যেক নাগরিকের ডিএনএ প্রোফাইল রয়েছে। ডিএনএ ব্যাংকে সেগুলো সংরক্ষণ করা থাকে। যেকোনও ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে তারা ডিএনএ ব্যাংক থেকে চটজলদি ম্যাচ করে ফেলে।

শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশীদ বলেন, এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করে। এই দুই ঘটনাতেও হয়েছে। মামলা চলতে থাকে। কিন্তু নাবজাতকের মা-বাবার পরিচয় পাওয়া যায় না। আমরা রুটিনমাফিক থানা থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করতে আবেদন করি। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গত ৬ ডিসেম্বর পল্লবীতে ময়লার স্তূপ থেকে এক মেয়ে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নিহতের পরিচয় বা কারা এর সাথে জড়িত কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের জগন্নাথ হলের বিপরীতে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন স্থান থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, নবজাতকের নিচের অংশ অনেকটা পচে গেছে। নবজাতকটি ছেলে না মেয়ে এটা জানা যায়নি। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি জানা যাবে। তবে কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ