Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্রামীণ শ্রমবাজারে স্বস্তি

দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষি ও শিল্প সেক্টরে কর্মমুখর পরিবেশ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে কোনোরূপ দুর্ভাবনা নেই

গ্রাম বদলে যাচ্ছে দ্রæত। শহর আর গ্রামের পার্থক্য ঘুচছে। কর্মহীন শ্রমজীবীদের মোটেও দুর্ভাবনা নেই। কাজের সন্ধানে নেই ছুটোছুটি। হাতের নাগালেই কাজ। স্পর্শ করছে না হা-হুতাশ। স্বস্তিদায়ক অবস্থায় বেশ স্বাচ্ছন্দে আছেন তারা। চারিদিকে বিরাজ করছে একটা কর্মমুখর পরিবেশ। শ্রমজীবীদের অভাব দূর হচ্ছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কাজ না পাওয়ার দুর্ভাবনাও কাটছে। কাজের মধ্যে ডুবে দারিদ্যকে জয় করছেন তারা। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের।

যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বললেন, ৩/৪বিঘা জমির মালিক যারা তাদের চেয়ে বর্তমানে খেটে খাওয়া মানুষ বেশ ভালো আছেন। দিনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মুজুরি ৭শ’ টাকা। যা কিছুদিন আগেও ছিল ৩শ’ টাকা। শ্রমের মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। কৃষক কষ্ট করে ধান-পাট সবজিসহ কৃষিপণ্যের সাধারণত উপযুক্ত মূল্য পান না। তার কথা, কৃষকের জমিচাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় কৃষকের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় লাভের অংক বাড়ছে না।

যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এবং গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাম শহরের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে দ্রæতগতিতে। পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবাই যতœবান হয়েছে। গ্রামের রাস্তা হয়েছে পাকা। মাটির ঘর থেকে দালানকোটা ইট টিনের ছাউনির সংখ্যা বেড়েছে। প্রবাসীদের অর্থে অনেক গ্রামের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। অভাবের তাড়নায় অনেক খেটে খাওয়া মানুষের দা, কুড়াল, কাঁচি ও কোদাল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করার জন্য বসে থাকার দৃশ্য এখন খুব কমই চোখে পড়ে। মাঠে-ঘাটে কাজ আর কাজ। পারিশ্রমিকও বেড়ে গেছে অনেক। শ্রমজীবীদের চেহারা বলে দিচ্ছে তাদের অবস্থা ভালো। শুধু মাঠে ঘাটে কাজ নয়, গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মহিলারাও বসে নেই, হাঁস-মুরগী পালন, ছাগল ও গরু পালন, বাড়ির আঙিনায় সবজি উৎপাদন, কাথা সেলাইসহ বিভিন্ন কাজকর্ম করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনছেন। তবে তুলনামূলকভাবে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা চাল, ডাল, তেল, সবজি, মরিচ ও পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্বস্তিদায়ক অবস্থা, জীবনধারণের ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে কঠিন। তাদের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সময়ে খেটে খাওয়া মানুষ যারা কৃষি শ্রমিক, শিল্পশ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক ও ইজিবাইক চালক তারা বেশ ভালোই আছেন। যে আয় হয় তাদের তাতে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেও সঞ্চয় করতে পারছেন। বড় সমস্যায় আছেন সাদা পোশাক পরা মধ্যবিত্তরা। তাদের স্বল্প ও সীমিত আয় দিয়ে সন্তানের লেখাপড়াসহ সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে কৃষিজাত উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু ভূমির মালিক কৃষকের যতটা না লাভ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি হচ্ছে কৃষি শ্রমিকের।

বর্তমানে শহরের মোড়ে মোড়ে কিংবা মানুষ বেচাকেনার হাটে শ্রম বিক্রি করার জন্য বসে থাকার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ কৃষি, অকৃষি, ঘাটে, বন্দরে, হাট-বাজারে, শিল্প কারখানায়, বাড়ি-ঘর, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণেও খাল খননসহ বহুমুখী কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে কোন দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে না শ্রমজীবীদের।
সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের প্রত্যাশা সরকারের পক্ষ থেকে এই অবস্থা ধরে রাখার ক্ষেত্রে আরো যতœবান হলে গ্রামবাংলায় অর্ধাহার ও অনাহারে দিনাতিপাতকারী পরিবারের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ঘাত-প্রতিঘাতে আচ্ছন্ন শ্রমজীবী মানুষের মনোকষ্ট দূর হবে। তবে পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করে মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে পর্যবেক্ষক, অর্থনীতি বিশারদরা মনে করছেন। তাহলে গোটা অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা আরো সন্তোষজনক হবে।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে অনাবাদী জমি উদ্ধার, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ রক্ষা, মৎস্য উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পারে। মাঠপর্যায়ে খাল-বিল খনন, সারফেস ওয়াটার ডেভলপমেন্ট, ক্ষুদ্র সেচ, ভেড়ি বাঁধ, রেগুলেটর, বক্সকালভার্ট, পাইপকালভার্ট ও ¯øুইস গেট নির্মাণ এবং পাম্পিং মেশিন স্থাপনসহ সংশিষ্ট কর্মকাÐের দিকে জোর দিলে আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিল্পে গতি সৃষ্টির জন্য আরো বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মাঠ হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের প্রধান অবলম্বন। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রোপা আমন ধান কাটার পর বোরো ধানের বীজতলা তৈরি, রজনীগন্ধাসহ ফুল, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ ও উৎপাদন, মাছের রেণু পোনা, সাদা সোনা চিংড়ি চাষ হচ্ছে পুরাদমে। সরেজমিনে বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোন না কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমজীবীরা। হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে না। সবজি ভান্ডার যশোরের বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা ছাড়াও লেবর শ্রেণির লোকজন গুণগুনিয়ে গান গেয়ে সবজি প্যাকিং ও ঢাকায় পাঠানোর জন্য ট্রাক ভর্তির কাজে ব্যতিব্যস্ত। একই ধরণের চিত্র ফুল উৎপাদনের রেকর্ড এলাকা ঝিকরগাছার গদখালীতে। বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন কাজকর্মে আত্মনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকদের।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রম

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ