চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
এরশাদ হচ্ছে-‘বলো! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো; যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর তিনি হলেন ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)। তাঁকে অনুসরণ করলে আল্লাহকেই অনুসরণ করা হয়। এরশাদ হচ্ছে-‘যে লোক রাসুলের হুকুম মান্য করবে, সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করলো। আমি তোমাকে (হে মুহাম্মদ!) তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’ (সুরা নিসা : ৮০)।
হাদিস না মানলে যথাযথভাবে কোরআন মানা হয় না : (১) সালাত : সালাত মুসলমানের ওপর সবচেয়ে বড় ফরজ ইবাদত। এই ইবাদত কার ওপর, কোন কোন সময়, দিনে-রাতে কতো বার, কতো রাকাত, কি পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? রুকু-সেজদার নিয়ম কি? ইত্যাদি বিষয়ের কোনো কিছুই কোরআনে উল্লেখ হয়নি। সালাতের জন্য কি পদ্ধতিতে, কি শব্দ উচ্চারণ করে আহবান করতে হবে? মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সালাতুল জানাজা কিভাবে পড়তে হবে? দুই ঈদের সালাত বলতে কি কিছু আছে? এগুলো রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকেই জানতে হবে। (২) জাকাত : জাকাত ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। কোন ধরনের সম্পদ, কি পরিমাণ, কতো দিন কাছে থাকলে কি পরিমাণ জাকাত বের করতে হবে? উট, গরু, ছাগল, শস্য, সোনা-রুপা, ইত্যাদি সম্পদের জাকাতের বিস্তারিত বিবরণ কি? রমজান শেষে সদকাতুল ফিতর দিতে হবে কিনা? ইত্যাদি বিষয় হাদিস থেকে জানতে হবে। (৩) পবিত্রতা : পবিত্রতার ক্ষেত্রে কোরআনে কিছুটা বিস্তারিত থাকলেও নারীদের ঋতুবস্থায় তার সঙ্গে কি আচরণ করতে হবে? তার বিবরণ হাদিস থেকে নিতে হবে। কোরআনের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী ঐ অবস্থায় ঋতুবতীর সঙ্গে ওঠাবসা, পানাহার, কথা বলা, শুয়ে থাকা ও স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু হাদিসে বলা হয়েছে, ঐ অবস্থায় কেবল সহবাস ছাড়া সবকিছু করা যাবে।
(৪) হজ : হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। জীবনে কয়বার হজ ফরজ? ইহরাম কিভাবে করতে হবে? কাবাঘরের তওয়াফ কিভাবে, কয়বার করতে হবে? কিভাবে কতো বার সাফা-মারওয়া সাঈ করতে হবে? মিনা, আরাফা, মুজদালিফা, কোরবানি করতে হবে? ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ হাদিস থেকেই নিতে হবে। (৫) সিয়াম : সিয়াম সম্পর্কে কিছু মাসআলা কোরআনে থাকলেও বিস্তারিত বিবরণ হাদিস থেকেই নিতে হবে। (৬) চুরির শাস্তি : চোরের হাত কাটার কথা কেবল কোরআনে আছে। কিন্তু কি পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে হাত কাটা যাবে, আর কি পরিমাণে হাত কাটা যাবে না, তার বিস্তারিত বিবরণ হাদিস থেকে নিতে হবে। কেননা এক টাকা চুরি করা আর ১ লক্ষ টাকা চুরি করার অপরাধ কিন্তু একই। উভয় ক্ষেত্রে ব্যক্তি চোর সাব্যস্ত হবে। কিন্তু শাস্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই এক সমান হবে না। তাছাড়া হাত কাটলে কি পরিমাণ কাটতে হবে? কব্জি থেকে না কনুই থেকে নাকি সম্পূর্ণ হাত কাটতে হবে? তা হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে। (৭) মিরাস : মা অনুপস্থিত থাকলে দাদি মিরাস তথা উত্তরাধিকার সূত্রে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ পাবে কিনা? তা কোরআনে নেই, হাদিসে রয়েছে। (৮) বিয়ে : স্ত্রীর ফুফু অথবা খালাকে বিয়ে করা কি বৈধ? দুধ সম্পর্কিত কোন কোন নারীকে বিয়ে করা হারাম, ইত্যাদির বিবরণ কোরআনে নেই, হাদিসে রয়েছে। (৯) মদ্যপান : কোরআনে মদ্যপান হারাম করা হয়েছে। বর্তমান সময়কার হেরোইন, আফিম, গাঁজা, ইত্যাদি মাদকদ্রব্য কোরআনের কোন আয়াতের মাধ্যমে হারাম করবেন? হাদিসের মূলনীতির মাধ্যমে তা হারাম হবে। হাদিস বলছে, যা বেশি খেলে বা সেবন করলে মাদকতা আসে, তার অল্পটাও হারাম। (১০) মৃত প্রাণি খাওয়া : কোরআন বলছে মৃত প্রাণি খাওয়া হারাম। কিন্তু হাদিস বলছে, পানির মাছ মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল। কোরআনে পশুকুলের মধ্যে শুধু শুকরকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুকুর-শেয়াল, বিড়াল, বাঁদর, বাঘ-ভল্লুক, সাপ-বিচ্ছু, পোকামাকড়, কীট-পতঙ্গ, ঈগল, চিল, বাজ, ইত্যাদি হারাম হওয়ার ব্যাপারে হাদিসে মূলনীতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তা হচ্ছে- দাঁত দ্বারা শিকার করে, এমন সকল হিংস্র পশু হারাম। আর থাবা দিয়ে শিকার করে, এমন প্রত্যেক পাখি হারাম।
(১১) সালাত কসর করা : কোরআনে সুরা নিসার ১০১ নম্বর আয়াতে সফর অবস্থায় শত্রুর ভয় থাকলে সালাতকে কসর করতে বলা হয়েছে। অথচ রাসুল (সা.) ভয় থাকুক আর না থাকুক উভয় অবস্থায় সালাত কসর করে বলেছেন-‘সালাত কসর করা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সদকা; অতএব তোমরা আল্লাহর সদকা গ্রহণ করো।’ (১২) পুরুষদের জন্য সোনা ও রেশম ব্যবহার করা : কোরআন বলে-‘কে আল্লাহর সৌন্দর্যকে হারাম করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্য পাঠিয়েছেন?’ (সুরা আরাফ : ৩২)। অথচ হাদিসে রাসুল (সা.) পুরুষদের জন্য সোনা ও রেশম ব্যবহার করাকে হারাম করেছেন। এ ধরনের আরও অগণিত বিষয় রয়েছে, যা কোরআনকে সামনে রেখে তার ব্যাখ্যা হাদিস থেকেই জেনে নিতে হবে। জনৈক নারী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললো, আপনারা নাকি বলেন-‘যে সমস্ত নারী (হাতে বা মুখমন্ডলে) খোদাই করে নকশা করে এবং যারা নকশা করিয়ে নেয়, যে নারীরা ভ্রুর চুল তুলে নেয় এবং যে নারীরা দাঁত সুন্দর করার জন্য তাতে ফাঁক সৃষ্টি করে, এদের সবাইকে আল্লাহ লানত করেছেন?’ তিনি বললেন-‘হ্যাঁ, সত্য কথা।’ নারীটি বললো-‘আমি আল্লাহর কিতাব প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেছি, কিন্তু কোথাও তো এ কথা পাইনি?’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন-‘তুমি যদি কোরআন পড়তে, তবে তা পেতে। তুমি কি পড়োনি আল্লাহর বাণী- রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো?’ (সুরা হাশর : ৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।