Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানবীয় মূল্যবোধ ও টেকসই উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদাগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ খোলা রেখেছে। কিন্তু ইসলামের কাঙ্কিত টেকসই উন্নয়ন মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই কিছু নিয়ম কানুন ও নীতিমালার দ্বারা বেষ্টিত। মানুষ যাতে বস্তুগত বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে ছুটতে যেয়ে লোভ লালসা, অপচয়, জুলুম, ও অত্যাচারে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্যেই এই সীমারেখা বা সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। একজন মানুষের জন্যে দুনিয়া ও এর সম্পদগুলো তখনই অপছন্দনীয়, যখন তা তাকে খোদাদ্রোহিতার দিকে নিয়ে যায় এবং এর ফলে সে অজ্ঞতা, বিভ্রান্তি ও জুলুমের অতল গহবরে নিক্ষিপ্ত হয়।
টেকসই উন্নয়ন প্রসঙ্গে হাসান যুবায়ের বলেন: Human beings are God Almightys representatives on the planet Earth. and they are entitled to benefit from its resources without selfishly monopolizing them. Human beings must seek to develop this planet in accordance with the provisions of the Holy Quran and the teachings of Prophet Muhammad, with the stipulation that current needs must be met without jeopardizing the rights of future generation.
মানব জাতি এই পৃথিবী নামক গ্রহে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সম্পদ একচেটিয়াভাবে ভোগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানব জাতি অবশ্যই পবিত্র কুরআন এবং মুহাম্মদ স. এর শিক্ষা অনুযায়ী তাদের সমসাময়িক চাহিদা পূরণ করবে এবং উন্নতির চেষ্টা করবে তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোন অধিকার যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্রের মূলনীতিসমূহের সাথে ইসলামের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পূর্বের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়নের যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে উঠেছে নিম্নে ইসলামের আলোকে তার ব্যাখ্যা বিধৃত হলো:
মৌলিক অধিকার ঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মানুষের মানবিক মৌলিক অধিকারসমূহের উন্নয়ই টেকসই উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য। টেকসই উন্নয়নের সব মডেলেই মৌলিক অধিকারসমূহকে মূল অনুষঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে। মহান আল্লাহ মানব জাতির পিতামতা আদম ও হাওয়া আ. এর সৃষ্টির পর পরই তাদের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করেন এবং তাদের আবাস্থল হিসেবে জান্নাতকে নির্ধারণ করেন। সেখানে তাদের সব ধরণে প্রাপ্তি ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: তোমার জন্যই এটা থাকল যে, তুমি সেখানে (জান্নাতে) ক্ষুর্ধাত হবে না, নগ্নও হবে না। নিশ্চয় তুমি সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র ক্লিষ্ট ও হবে না।
ফলে এ ব্যবস্থায় সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হয়। নাগরিকের এ দাবি পূরণকে শাসক তার কর্তব্য মনে করেন। রাস্ট্রের সকল সদস্য এর দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আবার ব্যক্তি নিজেও নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকে না। বরং কারো সহযোগিতা ছাড়াই নিজের জীবন নির্বাহের চেষ্টা করে। ইসলারে দৃষ্টিতে মানুষের মৌলিক অধিকার ও তা অর্জনের পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
দারিদ্রের অবসান ও সকলের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা : জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে যেসব লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে দারিদ্রের অবসান ও ক্ষুধামুক্তি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র অকল্যানকর, যা অনেক সময় মানুষেকে আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায়। শয়তান দারিদ্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতে প্ররোচনা দেয়। আল্লাহ বলেন: শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।
এ কারণে ইসলাম দারিদ্রের অবসানের জন্য বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে। একদিকে সম্পদ যাতে সমাজের কিছু মধ্যে সীমিত না হয়ে যায় তার জন্য সম্পদের আবর্তনের উপর জোর দেয় “আল্লাহর বাণী: যাতে সম্পদ তোমাদের মধ্যকার ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।” অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে যাতে কোন প্রকার অসহায় লোক না থাকে তার জন্য ধনীর সম্পদে গরীবের অধিকার নিশ্চিত করে। “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এবং তাদের ধন সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক রয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষসহ সকল প্রাণীর খাদ্য গ্রহনের অধিকার রয়েছে। মহান আল্লাহ এ অধিকার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন। আর পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিযক (পৌছানোর দায়িত্ব)আল্লাহর ওপর নেই। তিনি জানেন, তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়।
এ সবকিছুই এক সুষ্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ