Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব খাতের সঙ্কট দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে মোটামোটি স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি খাত। এর জন্য তড়িঘড়ি করেই হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। করোনা মহামারীতে দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সকল সেক্টরের কর্মসংস্থান রক্ষায়ও সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজ বা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে দেশের প্রধান রফতানিমুখী শিল্প এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত হওয়ায় সরকারি নজরদারি ও সহায়তার মূল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে গার্মেন্ট খাত। গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল ছাড়াও গত কয়েক বছরে দেশের পাটকল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এই বিপুল সংখ্যক কর্মহীন মানুষ দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। দেশের সুষম এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সমাজের প্রতিটি সেক্টরের সব মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই করোনাকালে গার্মেন্ট শিল্পের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি কৃষি, আউটসোর্সিংসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের গার্মেন্ট সেক্টরে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ প্রতিনিধিরা। করোনার প্রথম ঢেউয়ে গত মার্চ-জুলাই প্রান্তিকে গার্মেন্ট খাতের রফতানি শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ কমে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন তারা। গত সোমবার বিজিএমইএর এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি ড. রুবানা হক করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গার্মেন্ট সেক্টরে আরো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। করোনাকালে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মসংস্থান রক্ষায় সরকার লক্ষকোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এর সবচেয়ে বড় অংশই গেছে গার্মেন্ট সেক্টরে। বেশ কয়েকটি সেক্টরে প্রণোদনার টাকা ঠিকমত বিলিবণ্টন না হলেও গার্মেন্ট সেক্টরে তার পুরোটাই ব্যয়িত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে যে সব ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের তথ্য জানিয়েছে, তার পরিমাণ ৩.১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। তবে তৈরি পোশাক রফতানি খাতে সরকারের প্রণোদনা সহায়তার হার তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও তারা আরো বেশি সহায়তা চাচ্ছে। প্রণোদনা সহায়তার মেয়াদ বৃদ্ধি ও নতুন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার যে দাবি তোলা হয়েছে তা সরকার কতটা পূরণ করতে পারবে সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন। তবে এটাও ঠিক যে, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে হুমকির মুখেপড়া হাজার হাজার শিল্পের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষায় সরকারের অপরিহার্য দায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সরকাররের সামর্থ্য ও ক্ষমতার কথাও মনে রাখতে হবে।

করোনাকালীন সহায়তা তহবিলের নামে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে যে সব ঋণ প্রদান করা হয়েছে, সেখানে বিমান বাংলাদেশের মতো লোকসানি রাষ্ট্রায়াত্ত¡ প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ বেশ কিছু কর্পোরেট কোম্পানির নাম রয়েছে। অথচ, এ ক্ষেত্রে শ্রমঘন ও রফতানিমুখী শিল্পের অগ্রাধিকা রক্ষায় কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সাথে করোনাকালে গার্মেন্ট সেক্টরের ক্রেতাদের যথেচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাস্তবতা ও মনোপলি থেকে গার্মেন্ট মালিকদের রক্ষায় আরো সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিজিএমইএর তরফ থেকে ক্রেতাদের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগসহ মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচের ভিত্তিতে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বাতিলকৃত ক্রয়াদেশের ৯০ শতাংশ পুনরুদ্ধারের যে দাবি করা হয়েছে, তা খুবই ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। তবে এ ক্ষেত্রে রফতানিকারকরা ক্রেতাদের স্বার্থ মেনে এবং লোকসান দিয়েও পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানা যায়। এভাবে কোনো সেক্টরের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষ এখন স্বাভাবিকভাবেই স্বল্পমূল্যে পোশাক কিনতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশই হতে পারে পশ্চিমাদের কাক্সিক্ষত বাজার। সে কথা খেয়াল রেখেই যথাযথ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনাকালে অন্যান্য শিল্পের অবস্থাও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাদের উদ্ধারেও সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি চিনিকলও বন্ধের পথে। এতে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনেক উদ্যোগ ব্যহত বা বন্ধ হয়ে বেকারের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এরাও সমদৃষ্টি প্রত্যাশা করে। সরকারকে শিল্প বাঁচাতে, কর্মসংস্থান বাঁচাতে সাধ্যমত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সে ব্যবস্থা যাতে সুষ্ঠু হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন