পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নকশা ত্রুটিতে ৪ মাস ধরে বন্ধ রেল প্রকল্পের একাংশের কাজ : ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়
পদ্মা সেতুতে ৪০তম স্প্যান উঠছে আজ শুক্রবার। ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর এই স্প্যানটি বসবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। এমন ৪১টি স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতুটি তৈরি হবে। ৪০তম স্প্যান বসানো হলে আর একটি মাত্র স্প্যান বসতে বাকি থাকবে। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে বসানো হবে ৪১তম স্প্যান। এতে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ প্রায় শেষ হবে। তবে তাতেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর কাজ।
এদিকে, পদ্মা সেতুর কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চললেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের নকশা ত্রæটি। এ কারণে গত ৪ মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে পদ্মা সেতুর রেল লাইন প্রকল্পের একাংশের কাজ। রেলের পিলারে উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম থাকায় সড়ক থেকে সেতুতে বড় গাড়ি উঠতে পারবে না, তাই মাওয়া প্রান্তে রেলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সেতু বিভাগ। এতে করে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতু যেদিন উদ্বোধন হবে সেদিন থেকেই ট্রেন চলবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও সময় চেয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। তারা জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লাগবে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে তা কয়েক দফা পেছানো হয়। বর্তমানে তা বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী তথা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। স¤প্রতি বাড়তি সময় চেয়ে সেতু বিভাগে দেওয়া চিঠিতে এ তথ্য জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে কবে নাগাদ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করতে বলতে পারছে না সেতু বিভাগ-সংশ্লিষ্টরা। সে কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। স¤প্রতি প্রতিবেদনটি সেতু বিভাগে জমা দেয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মূল সময়সীমা বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে, যা ছিল ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর। পরবর্তী সময়ে মূল সেতুর কাজ শেষ করার জন্য চায়না মেজর ব্রিজকে তিন দফা ৯৫০ দিন বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৮০ দিন, দ্বিতীয় দফা ৫৮৮ দিন ও তৃতীয় দফা আরও ১৮০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে ২০২০ সালের ৩০ জুন পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
যদিও বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আসে মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ছিল ৮৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ওই সময়ে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন দশমিক শূন্য চার শতাংশ পিছিয়ে আছে মূল সেতুর কাজ। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর প্রেক্ষিতে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার জন্য নতুন করে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর আরেক দফা বাড়তি সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে সময় নির্মাণকাজ শেষ করার সম্ভাব্য দুটি তারিখ প্রস্তাব করা হয়। একটি ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও অন্যটি ২০২২ সালের ৩০ জুন। তবে তা গ্রহণ না করে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রস্তাব করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রস্তাব জমা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রকৃতপক্ষে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পেলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। বিষয়গুলো ভালো করে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। কারণ তাদের প্রস্তাব মেনে নিলে তার জন্য যথাযথ কারণ দেখাতে হবে। আবার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে তারও ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিষয়টি কারিগরি ও জটিল। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর চুক্তি পর্যালোচনার জন্য পৃথক কন্ট্রাক্ট স্পেশালিস্ট আছে। তার কাছে চায়না মেজর ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে মতামত জানাবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ঠিকাদারকে আগামী বছর জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। তাই তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তবে ঠিক কবে নাগাদ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এদিকে মূল সেতুর পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন অংশের বাস্তবায়নও পিছিয়ে আছে। পরামর্শকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে নদী শাসনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে। পরে তা দুই দফা বাড়ানো হয়। সংশোধিত সর্বশেষ হিসাবে, নদী শাসনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ৩০ জুন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদী শাসন অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে বাস্তবে কাজ হয়েছে ৭৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক দশমিক ৭৯ শতাংশ পিছিয়ে আছে নদী শাসনের কাজ। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদী শাসনের আর্থিক অগ্রগতি ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগামী বছর জুনের মধ্যে নদী শাসন অংশের কাজও শেষ হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে সংশোধিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে।
অন্যদিকে, গত ৪ মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে পদ্মা সেতুর রেল লাইন প্রকল্পের একাংশের কাজ। রেলের পিলারে উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম থাকায় সড়ক থেকে সেতুতে বড় গাড়ি উঠতে পারবে না, তাই মাওয়া প্রান্তে রেলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সেতু বিভাগ। রেল মন্ত্রণালয় সংশোধিত একটি নকশা দিলেও সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে সেতু বিভাগ। দুই প্রান্তে এখন ৪টি পিলার ভেঙে ফেলতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতু চালু হলে একই দিনে চলবে ট্রেন, এমন একটি পরিকল্পনা থেকে নেওয়া হয় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। ঋণ জটিলতায় কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে।
তবে এখন মাওয়া ও জাজিরা ২ প্রান্তেই রেলের ভায়াডাক্টের ৪টি পিলারে ধরা পড়েছে জটিলতা। রেলের নিচ দিয়ে বড় গাড়ি সেতুতে উঠতে আন্তর্জাতিক মানে পিলারের উচ্চতা থাকা প্রয়োজন ১৫ দশমিক ৫ মিটার, আর চওড়ায় ৫ দশমিক ৭ মিটার। আছে তার কম। এতে বড় গাড়ি সড়ক থেকে সেতুতে উঠতে গেলে আটকে যাবে। বিষয়টি নজরে আসার পরই গত আগস্ট মাসে সেতুর দুই পাশে রেলের কাজ বন্ধ করে দিতে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ। সংশোধিত নকশায় উচ্চতা ঠিক রাখলেও চওড়ায় ১৩.৫ মিটার করার একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ায় সেটি প্রত্যাখান করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। বিকল্প না পাওয়া গেলে এ ৪টি পিলার ভেঙে ফেলার কথা বলছে রেল।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ নিয়ে আমাদের যে বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। তারা বিষয়টি দেখে সমাধান দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।