বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম ধর্ম ঘুষের লেনদেনকে কঠোরভাবে নিন্দা করে এবং এটা হতে বিরত থাকার জন্য বলে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন: ‘এবং তোমরা পরস্পরের মাল অবৈধভাবে ভক্ষণ করো না এবং সেই মালের সাহায্যে শাসকবর্গ পর্যন্ত পৌঁছার চেষ্টা করো না, যেন এইভাবে লোকের অর্থের কিছু অংশ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তোমরা এ কথা ভালোভাবেই অবগত আছ।’ আল্লাহতায়ালা সাধারণভাবে নির্দেশ দিয়েছেন: ‘এবং যখন লোকের বিচার কর, ইনসাফ ও ন্যায় প্রদর্শন করবে এবং নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ইনসাফ ও উপকার করার আদেশ দিচ্ছেন।’
এটা সাধারণ নির্দেশ। এতে ধনি-দরিদ্র, আপন-পরের কোনো পার্থক্য নেই। কারো আত্মীয়তা, ভালোবাসা, প্রাচুর্য, দারিদ্র্য এবং কোনো রকমের লোভ-লালসা অথবা ঘুষ ইত্যাদি শাসনকর্তার জন্য ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হওয়া উচিত নয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনো জিনিস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করে, মূলত জনগণের স্বার্থের প্রতি সে বিশ্বাসঘাতকতা করে, এতে সমাজ জীবনে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। ইসলাম শত্রæ তো দূরের কথা, বিধর্মীদের সাথেও ন্যায় ও ইনসাফ করার জন্য তাগিদ করেছে। আল্লাহ বলেন: ‘এবং কোনো জাতির শত্রæতা তোমাদের কিছুতেই যেন উত্তেজিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায় প্রদর্শন করতে থাক, এটাই পরহেজগারীর অধিক নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমরা যা করো তা উত্তমরূপে অবগত আছেন।’
এ আয়াতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, ন্যায় ও ইনসাফের পাল্লায় সমান সমান হওয়া চাই। ইসলাম ইনসাফ ও ন্যায়ের ব্যাপারে শোষিত ও শোষকের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না, ইসলামের কাছে উভয়ই সমান সুযোগ ভোগ করবে। ইসলাম যেখানে শোষক অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের অনুমতি দান করে, সেখানে সেই শোষকের সাফাই পেশ করার জন্য তার যুক্তিপ্রমাণ ও বিচার-বিবেচনার অধিকারও তাকে দান করেছে, যেন অত্যাচারী শাসক ভুলযুক্তি প্রমাণ ও মিথ্যা জবাব দিয়ে নিজেকে নির্দোষ ও ন্যায়পরায়ণ হিসাবে প্রমাণিত করতে না পারে। হজরত নবী কারিম (সা.) এর বিভিন্ন হাদিস ও তাঁর পবিত্র জীবনী হতে এর বহু প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাচ্ছে।
আসাদ গোত্রের ইবনুল লাতবিয়া নামক জনৈক ব্যক্তিকে মহানবী (সা.) সদকাউসূল করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। কাজ সমাপ্ত করে সে হজরতের দরবারে প্রত্যাবর্তণ করে এবং বলে যে, ‘এটা আপনার এবং এটা আমাকে (মালের দিকে ইঙ্গিত করে) হাদিয়াস্বরূপ দেওয়া হয়েছে।’
এ কথা শুনে হুজুর (সা.) মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন: ‘ওই ব্যক্তির কি অবস্থা হবে, যাকে আমি প্রেরণ করেছি এবং সে বলে যে, এ অর্থ আপনার এবং এটা আমাকে দেওয়া হয়েছে। সে তার মাতা-পিতার গৃহে কেন বসে থাকেনি, তখন বুঝতে পরত যে, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কিনা। আল্লাহর কসম, যার হাতে মোহাম্মদ (সা.) এর প্রাণ রয়েছে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন জিনিস পাবে, কেয়ামতের দিন তা নিজের ঘাড়ে বহন করে আনবে। যদি তা উটের পৃষ্ঠে বহন করা হয়, তা হলে উট উত্তেজিত হয়ে উঠবে, গরু গর্জন করে উঠবে এবং বকরি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে উঠবে।’ অতঃপর হুজুর (সা.) দুইহাত এমনভাবে বুলন্দ করেন যে, হাতের দুইপাশের অভ্যন্তর তাদের দৃষ্টিগোচর হতে লাগল এবং দুইবার তিনি বললেন: ‘আল্লাহুম্মা কাদ বাল্লাগতু’ অর্থাৎÑ ‘হে আল্লাহ! আমি পৌঁছে দিয়েছি।’ (আবু হোমায়দা সায়েদি কর্তৃক বর্ণিত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।