চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
(৩) হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মারফত : এ পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে আল্লাহর অহি বা নির্দেশনা নাজিলের ক্ষেত্রে। আর তা হয়েছে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মারফত। তাঁকে ‘আমিনুল অহি’ বলা হয়। কোরআনে ‘রুহুল আমিন’ ও ‘রাসুল কারিম’ (সম্মানিত দূত)-ও বলা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-‘বিশ্বস্ত রুহ (জিবরাইল ফেরেশতা) তা (কোরআন) নিয়ে অবতরণ করেছেন।’ (সুরা শুআরা : ১৯৩)। তিনি আরও এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই তা (কোরআন) সম্মানিত রাসুল (দূত জিবরাইল)-এর আনীত বাণী। যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের কাছে মর্যাদাশালী, ফেরেশতাগণের মান্যবর এবং আল্লাহর বিশ্বাসভাজন।’ (সুরা তাকভির : ১৯-২১)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন-‘নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী।’ (সুরা হাক্কাহ : ৪০)। হাদিস অস্বীকারকারীরা এই আয়াতগুলোতে ‘রাসুল’ বলতে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বোঝাতে চায়। অথচ আয়াতের প্রসঙ্গতেই বোঝা যায়, এখানে হজরত জিবরাইল (আ.)-কে বোঝানো হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা হাদিস নাজিল করেছেন: উল্লিখিত প্রথম পদ্ধতিটি হচ্ছে এমন অহি, যা আল্লাহতায়ালা কোনো ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া নাজিল করেছেন। সেটির সমর্থনে কোরআনে কারিমে আরও অনেক আয়াত পাওয়া যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা গৃহ নির্মাণ করার পর হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশের জন্য দোয়া করেন। সে সম্পর্কে কোরআনে এসেছে-‘হে আমাদের পালনকর্তা, তাদের মধ্য থেকে তাদের মাঝে এমন একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবে। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ১২৯)। আল্লাহতায়ালা তাঁর এই দোয়া কবুল করে তাদের মাঝে তথা হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর আরবজাতির মাঝে সেই রাসুল (সা.)-কে প্রেরণ করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন-‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদেরই মধ্য থেকে তাদের মাঝে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন। যে তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে পবিত্র করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে। যদিও তারা ইতোপূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিলো।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৬৪)। এ দুটি আয়াতে হিকমত হচ্ছে রাসুল (সা.)-এর হাদিস। যা তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা যেমন কোরআন নাজিল করেছেন, তেমনি হিকমত তথা হাদিসও নাজিল করেছেন। তিনি বলেন-‘তোমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করো; আর যে কিতাব ও হিকমত তোমাদের কাছে নাজিল করেছেন, যা দ্বারা তিনি তোমাদের উপদেশ প্রদান করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৩১)। আয়াতটিতে হিকমত অর্থ সুন্নত বা রাসুল (সা.)-এর হাদিস। যা আল্লাহতায়ালা পরোক্ষভাবে কোনো ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া তাঁর নবীর কাছে নাজিল করেছেন। হজরত ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন-‘আল্লাহতায়ালা এই আয়াতে কিতাবের কথা উল্লেখ করেছেন; যার অর্থ- কোরআন। আর উল্লেখ করেছেন হিকমতের কথা। কোরআনের পন্ডিতদের কাছে শুনেছি, তারা বলেছেন- এখানে হিকমত হচ্ছে রাসুল (সা.)-এর সুন্নত।’ তিনি আরও বলেন-‘এখানে হিকমত অর্থ রাসুল (সা.)-এর সুন্নত ছাড়া অন্য কিছু করা বৈধ হবে না। কেননা তা কিতাবের কথা উল্লেখের সঙ্গে সঙ্গেই উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের আনুগত্যের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ করা মানুষের ওপর ফরজ করে দিয়েছেন।
হাদিস ছাড়া কোরআনের প্রতি আমল করা অসম্ভব: কোরআন আল্লাহর বাণী। আল্লাহতায়ালা তা নাজিল করেছেন রাসুল (সা.)-এর ওপর। তিনি নিজে কোরআনের প্রতি আমল করেছেন এবং কিভাবে আমল করতে হবে, তা তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন। সুতরাং কোরআনের প্রতি আমল করতে চাইলে রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকেই জানতে হবে- তিনি কিভাবে এই কোরআনের প্রতি আমল করেছেন। তাঁর অনুসরণ না করলে কখনোই কোরআন পুরোপুরিভাবে বোঝা যাবে না এবং আমল করাও যাবে না। কেননা কোরআনের প্রতিটি কথার বিবরণ ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসুল (সা.)-কে দিয়েছেন। তিনি বলেন-‘নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে জিকির (কোরআন) নাজিল করেছি; যেনো আপনি বিশদভাবে মানুষের কাছে বর্ণনা করে দেন, যা তাদের কাছে নাজিল করা হয়েছে।’ (সুরা নাহল : ৪৪)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন-‘তাঁর চরিত্র ও জীবনী ছিলো কোরআন।’ (মুসলিম : ১৮৪৮)। অর্থাৎ কোরআন পাঠ করার সঙ্গে তাঁর জীবনী পাঠ করলে এবং তাঁর হাদিস পাঠ করলে কিভাবে তিনি কোরআনের প্রতি আমল করেছেন, তা বাস্তবিকপক্ষে বোঝা যাবে। হজরত আইয়ুব সুখতিয়ানি (রহ.) থেকে বর্ণিত; জনৈক ব্যক্তি মুতাররিফ বিন আবদুল্লাহ বিন শিখখিরকে বললো-‘কোরআন ছাড়া অন্য কিছু আমাদের কাছে বর্ণনা করবেন না।’ তিনি বললেন-‘আল্লাহর শপথ, আমরা কোরআনের বিপরীতে কিছু চাই না। কিন্তু আমরা তাঁকে চাই, যিনি কোরআন সম্পর্কে আমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখতেন।’ (ইবনে আবদুল বার : ২/১১৯৩)। তাই রাসুল (সা.)-এর সম্পূর্ণ জীবনীর অনুসরণ না করে বাহ্যিকভাবে কোরআন মানার দাবি করা হলেও মূলত তা অমান্য করারই শামিল। কেননা তাঁর জীবনী আমাদের আদর্শ। এরশাদ হচ্ছে-‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনচরিতে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ৩২)। তাঁকে অনুসরণ করলেই সঠিক হেদায়াত লাভ করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।