Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদার দাবিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান শীমুমীর সস্ত্রীক গ্রেপ্তার

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা: | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৪ পিএম

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় গতকাল রবিবার চাঁদার টাকা না দেওয়ায় বিসমিল্লাহ ইটভাটার মালিক ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলম হাওলাদারকে (৬৪) কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান ওরফে শিমু মিরা ও তাঁর স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার এলিজাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার রাত দু'টারউপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম থেকে চেয়ারম্যান শিমু মীর ও তার স্ত্রী এলিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে নেছার উদ্দিন, নাঈম, ইমরানকে। সন্ত্রাসী এ হামলার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদি হয়ে রোববার রাতে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই সেই মামলার এজাহারভূক্ত আসামী।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমু মিরার মুক্তির দাবিতে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সোবাহান বিশ্বাস, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আল আমীন মৃধা, ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম মিয়া, ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোকন প্যাদা এবং ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল হাওলাদারের নেতৃত্বে চেয়ারম্যানের দুই শতাধিক সমর্থক কলাপাড়া পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা কলাপাড়া থানার সামনে গিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে পুলিশি হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম হাওলাদার তাঁর মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ ইটভাটার কার্যালয়ে চেয়ারম্যান শিমু মীর ও তার স্ত্রীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা হাতে থাকা রামদা দিয়ে তাঁকে কোপায়। সন্ত্রাসীদের রামদার কোপে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। সন্ত্রাসীরা লাঠি দিয়েও তাঁকে বেধড়ক পেটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও মারধর করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর স্থানীয়রা আহত মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম হাওলাদারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পাশের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। এরপর তাঁকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহআলম হাওলাদারের পুত্র ও আমতলী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু সালেহ বলেন, ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমার বাবার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসা করতে পারবেনা বলে হুমকি দেয় ওই সকল সন্ত্রাসীরা। এর পিছনে রয়েছে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমু মিরা এবং তাঁর স্ত্রী এলিজা। শিমু মিরার নির্দেশেই স্থানীয় জহিরুল, সবুজ, খলিল, রুবেলসহ ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী রামদা দিয়ে কুপিয়ে আমার বাবাকে জখম করেছে। প্রথমে সন্ত্রাসীরা আমার বাবার ইটভাটার অফিসে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে বাবা বাঁচার জন্য দৌড়ে যেতে চেষ্টা করলে পড়ে যায়। সন্ত্রাসীরা গিয়ে আমার বাবার ওপর হামলে পড়ে। ওদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে কোপায়। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত জখম হয়েছে। সন্ত্রাসীরা তাতেই ক্ষান্ত হয়নি। বাবা পড়ে গেলে তাঁর ডান পা ইটের ওপর রেখে রামদার বাট দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে তাঁর বা পা ও বা হাত। এখন সে মূমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।’ দুঃখ আর হতাশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রেহাই পেলেন না। এ দুঃখ কার কাছে বলবো?
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ‘এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে সোপর্দ করা হবে সাত দিনের রিমান্ড আবেদনসহ। বাকি অপরাধীদেরকেও ধরতে পুলিশি তৎপরতা চলছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ