পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাত্র দুই মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বীথি রানী। সুখের সংসার পেতেছিলেন মহাখালীর সাততলা বস্তিতে। আগুন তার সংসারের সব পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের ভেতর থেকে বিয়ের বেনারসি শাড়িটি বের করেন তিনি। শাড়িটি পুড়ে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বিথী রানী। তিনি বলেন, তার ঘরে অবশিষ্ট আর কিছু নেই। আগুন সব কেড়ে নিয়েছে।
শুধু বীথি রানী নয়, গত সোমবার রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালের সামনে সাততালা বস্তিতে এরকম ৬৫টি দোকান ও ঘর পুড়ে ছাই গয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আগুনের বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বলেন, মহাখালী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালের সামনে সাততালা বস্তিতে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটকে পাঠানো হয়। আগুনের গতিবেগ বেশি হওয়াতে পরবর্তীতে আরও ইউনিট যোগ করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিট কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে সরু পথ ও পানির উৎসের অপ্রতুলতার কারণে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। আগুন লাগার পরই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। এ ঘটনায় মো. রাকিব ইসলাম (১৫) নামে এক কিশোর দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। আগুনে তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। প্রায় ১২ বছর আগে অভাব অনটনে কারণে ঢাকায় এসে প্রথমে কড়াইল বস্তিতে আশ্রয় নেই। একমাস পরে বস্তির পাশেই সাততলা বস্তিতে একটি দোকান দেই। মাত্র এক হাজার টাকার পুঁজিতে হাঁড়ি পাতিলের দোকান দিলেও বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল দোকানে ছিল। কিন্তু মাত্র এক ঘন্টার আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগুন লাগার সময় আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। এসে যা দেখলাম এটা স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। এর আগেও একাধিকবার বস্তিতে আগুন লাগছে। কিন্তু সে আগুননের আঁচ আমার দোকানে পড়েনি।
সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব জাহাঙ্গীর বলেন, এই দোকানটাই আমাদের সব ছিল। এখানকার সংসার, গ্রামের বাড়ি বৃদ্ধ বাবা-মার সংসার এই দোকানের আয় থেকে চলতো। আনুমানিক ৮-৯ লাখ টাকার মালামাল ছিল ক্ষতি হয়েছে আমার। এক রাতের ব্যবধানেই আমাদের জীবন বদলে গেলো।
নূরজাহান বেগম নামের এক মহিলা বলেন, গত ৪ বছর আগে সাত তালায় বস্তির দক্ষিণ পাশে দুই তলা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ছোট্ট একটা রুমে থাকতো। করোনাকাল থেকে স্বামী অসুস্থ। গত সোমবার রাতে সবার আগুন লাগার চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। চোখের সামনে দুই তালায় ধসে নিচে পড়ে যায়। ধসে যাওয়া দেয়ালে দাঁড়িয়ে বসে আহাজারি করছেন নূরজাহান। তিনি বলেন, গত সোমবার দিনে একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা কিস্তিতে টাকা এনেছি। ওই টাকাগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বার বার আগুন লাগার কারণ:
সূত্রমতে, এক বৈধ সংযোগ থেকে পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ লাইন। চিকন আর নিম্নমানের তার বহন করছে ভারী এই বিদ্যুৎ সংযোগ। আর যার কারণেই বারবার আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েছে বস্তিবাসীর স্বপ্ন। তবে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসারের এরশাদ হোসেন বলেন, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর আগুন লাগা সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কে জানা যাবে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্র জানায়, এর আগে ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে এই মহাখালীর সাততলা বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক বারই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগের দুর্বল তারের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। আর সেই ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে। যার ফলে কিছুদিন পর পরই আগুন লাগে। আর একটা পর একটা ঘর লাগানোর থাকার কারণে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, গতকাল বিকেলে মোহাম্মদপুরে বাবর রোডের বিহারী পট্টি জহুরী মহল্লার পাশের বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক দুলাল হোসেন জানান, আগুনে ৩০ থেকে ৩৫টি টিনশেড ঘর পুড়ে গেছে। অগ্নিকান্ডে কারও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। কী করে আগুন লাগল বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।