মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে সবার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন ও ওষুধ বিতরণ নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সউদী বাদশা সালমান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ জি-২০ এর সদস্য দেশগুলোর নেতারা। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ওই দেশগুলোর নেতারা তাদের ঋণ অনুদানও বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। গতকাল জি-২০ সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার থেকে সউদী আরবের রিয়াদে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জি-২০ ভার্চুয়াল সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের প্রথমদিনেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন, ওষুধ এবং পরীক্ষার সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করার কথা জানান জি-২০ ভুক্ত দেশের নেতারা। সম্মেলনের প্রথম দিনে নেতাদের দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বব্যাপী সকলকে ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি। তারা বলেন, আমরা করোনা ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু বণ্টনে কোন প্রয়াস বন্ধ রাখব না। আমরা সকল মানুষের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্যাকসিন বিতরণ নিশ্চিত করব। তারা জানান, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। তবে তা বৈষম্য, অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান তারা। নেতারা মানুষের জীবনের সুরক্ষা, চাকরি এবং আয় নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব নীতিমালা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলির সংকট মোকাবিলায় সহায়তার জন্য তাদের জোরদার প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জি-২০ থেকে বছর শেষে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আফ্রিকা এবং উন্নয়নশীল ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে জানান নেতারা। সেই সঙ্গে মধ্য-আয়ের দেশগুলির মহামারি মোকাবিলায় ঋণের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তারা। এছাড়া সম্ভাব্য আরও কোন মহামারির জন্য বিশ্বকে সব সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি, শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও স্বচ্ছ ও প্রকৃত ডেটা সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ সউদী আরবের বাদশাহ সালমান বলেছেন, জি-২০ নেতাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে সহজলভ্যতার পক্ষে কাজ করা উচিত। মহামারীর কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানরত অভূতপূর্ব সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা করোনার জন্য ভ্যাকসিন, চিকিৎসা এবং ডায়াগনোস্টিক সরঞ্জাম তৈরিতে অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদী, তবে আমাদের অবশ্যই এসব সরঞ্জাম সব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে এবং ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেসের শর্ত তৈরিতে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা এ বছর যেসব ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি তার কারণে আমরা রিয়াদে আপনাদের ব্যক্তিগতভাবে অভ্যর্থনা জানাতে পারিনি। আমাদের মানুষ ও অর্থনীতি এখনও এ ধাক্কায় ভুগছে। তবে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’ বাদশাহ বলেন যে, ২০টি বৃহত্তম বিশ্ব অর্থনীতি কোভিড-১৯’র মুখোমুখি হওয়ার জন্য ২১ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে এবং ‘ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক সহায়তার জন্য ১১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য অসাধারণ ব্যবস্থা নিয়েছে’। জি-২০ দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রগতি বজায় রাখতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করা উচিত বলে উল্লেখ করেন বাদশাহ সালমান। তিনি আরও বলেন, সমাজ ও শ্রমবাজারে নারী ও যুবকদের ভূমিকা জোরদার করতে হবে। জি-২০ দেশগুলোকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, ভূমি অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে তা যেন বিশ্বের সব দেশই পায়- তা নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। জি-২০ সম্মেলনে তিনি জানান, তুরস্ক জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক এর ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। এর আগে সৌদ আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। শুক্রবার তাদের মধ্যে এই বিরল ফোনালাপ হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘আমাদের উচিত, যার যার নিজের দেশে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সেই অভিজ্ঞতাকে অন্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে পরস্পরকে সাহায্য করা।’ তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে সক্রিয় ভাবে সমর্থন করে চীন। আমরা কোভ্যাক্স-এ যোগ দিয়েছি।’ পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘যে দেশেরই প্রয়োজন হবে, আমরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়া আমাদের সাধারণ লক্ষ্য। রাশিয়া সবার জন্য কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন সরবরাহের লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলনের খসড়া সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। নিঃসন্দেহে, ভ্যাকসিন সবারই পাওয়া উচিত।’
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন এ বছর শেষ হওয়ার আগেই পাওয়া যাবে।’ সব দেশেই এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গরিবরাও এই ভ্যাকসিন পাবেন।’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেন, ‘রিয়াদ সম্মেলন বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তার দেশ করোনা রোগীর প্রকৃত তথ্য নিয়ে কোনো রাখঢাক করেনি।’ সূত্র : আল-জাজিরা, আরব নিউজ, ডেইলি সাবাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।