Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কা এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড ওয়েব শুরু হওয়ায় নতুন করে লক-ডাউন, শাট-ডাউনসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নানামুখী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষত শীতপ্রধান দেশগুলোতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ এরই মধ্যে উদ্বেগ-আতংকের জন্ম দিয়েছে। আমাদের দেশেও শীতকাল সমাগত প্রায়। আসছে শীতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনো করোনা পরীক্ষায় প্রতিদিন দেড়-দুইহাজার মানুষের আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। এহেন বাস্তবতার মধ্যেও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষের অনীহা, অসতর্কতা এবং বেপরোয়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সময়ে সময়ে তার প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ইতালি বা নিউইয়র্কে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের প্রাণঘাতী প্রকৃতির সাথে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগামী শীতে আমাদের দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েব শুরু হলে তার প্রকৃতি কি রকম হবে তা অজানা। তা মোকাবেলার জন্য সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও প্রস্তুতির ঘাটতি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব প্রকট হয়ে রয়েছে। এ ধরনের উদাসীনতা কাম্য নয়। করোনা প্রতিরোধে ইতিমধ্যে গৃহিত পদ্ধতিগুলোর উপরই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোয়া, সেনিটাইজার ব্যবহার করা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও শারিরীক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

গত কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দেশের ১৬ জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। একে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। একদিকে প্রতিদিনই করোনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা ব্যবস্থার কোনো তোয়াক্কা করছে না। অনেক আগে থেকেই করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা মাথায় রেখে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা। গত সোমবার মন্ত্রী পরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নাগরিক সমাজের নিরাপাত্তায় মাস্কপরাসহ নানাবিধ উদ্যোগের কথা আলোচনা হয়েছে। বিশেষত ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমান আদালতের তৎপরতা বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ মোকাবেলায় ইতিপূর্বে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি অনুসরণের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপরও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের শৈথিল্য বা বেপরোয়া মনোভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় এখন মাস্ক পরতে বাধ্য করতে মোবাইল কোর্টের তৎপরতা বৃদ্ধির নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারী ও দুর্যোগ। এর ফলে ইতিমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের মন্দা ও সংকটে পতিত হতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যাকসিন গবেষণা, উদ্ভাবন, উৎপাদন, পরীক্ষণ ও বিপনণের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না। সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি সফল ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সকলের মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক ও শারিরীক দূরত্ব মেনে সতর্কতার সাথে চলাচল করার উপরই জোর দিতে হবে। করোনা লকডাউন ও সংক্রমণের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সীমিত থাকলেও এখন তা আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। হোটেল-রে¯েঁÍারা এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলো আবার জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। করোনার দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণ মারাত্মক ও ব্যাপক প্রাণঘাতি হয়ে ওঠার আগেই তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জনসমাগম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। করোনা হটলাইন ও ভার্চুয়াল স্বাস্থ্যসেবার দুয়ার আরো প্রশ্বস্ত করতে হবে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি সুরক্ষা ও করোনার স্বাস্থ্য পরিচর্যায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনার সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিত রেখে দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাস্তায়, বাজারে, গণপরিবহনে, অফিস-আদালতে সকলের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাকে জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণামূলক কার্যক্রম নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন