পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে গড়ে ওঠা শত শত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অধিকাংশেরই অনুমোদন নেই। অধিকাংশেই নেই কোনো প্রশিক্ষিত চিকিৎসক। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের দেখবাল করারও নেই কেউ। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা নিরাময়গুলোতে চিকিৎসার নামে মাদক ব্যবসা প্রকাশ্যেই চলছে। স্থানীয় থানা পুলিশ ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত বখড়া দিয়েই চালানো হচ্ছে এসব। আদাবরে একজন সিনিয়র এএসপি আনিসুলকে চিকিৎসার নামে তার পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা কেউ কেউ বলছেন, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো উচিত। শুধু অভিযান চালালেই চলবে না, সার্বিকভাবে যৌথ অভিযান চালানো উচিত বলে তারা মনে করছেন।
তবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার জানান, অনুমতি ছাড়া কেউ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারবে না। যারা এ কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিগগিরই অবৈধ বা যাদের সঠিক কাগজপত্র নেই এমন সব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (জনসংযোগ) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আসলে মাদকনিরাময় কেন্দ্রের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা। তার পরও পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে সার্বিকভাবে সবাই মিলে অভিযান চালানো উচিত। শুধু একবারই নয়, প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো উচিত বলে আমি মনে করি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই, কর্মী ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও নেই। অনুমোদনহীন এসব কেন্দ্রে মাদকাসক্তের চিকিৎসার নামে চলছে মাদক ব্যবসা। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও নেই। এতে করে প্রতারিত হচ্ছে হাজার হাজার মাদকাসক্তি রোগী ও তাদের পরিবার। রাজধানীর প্রতি থানা এলাকায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো মাদকাসক্তি ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সে নজির নেই। তারপরেও এগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। মাদকাসক্তি ও মাদকবিরোধী জনসচেতনতা গড়ার নামে সারাদেশে প্রায় আড়াইশ’ এনজিও কাজ করছে। তারা বার্ষিক মাদক দিবস পালনের মিছিল, মিটিং, সেমিনার আর র্যালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর এনজিওগুলো দাতা সংস্থার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার ব্রেন অ্যান্ড লাইফ নামক প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে মাসিক ভাড়ায় রোগী পরিচয়ে থাকেন। সেখানে কেউ ভর্তি হলে সহজে বাসায় ফিরে যেতে চান বলে এক রোগীর পরিবার অভিযোগ করেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব মতে, সারা দেশে প্রায় ১২শ’ মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। আর শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ মাদকাসক্তি রোগীকে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে। আবার অধিকাংশ নিরাময়কেন্দ্র চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন এমনকি হত্যা পর্যন্ত করছে। গত তিন বছরে ১৩টি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র থেকে ১৫ জন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তি পরামর্শ কেন্দ্র, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণীত হয়। ৪(খ) বিধিমালায় বলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো সুরক্ষিত পাকা বাড়িসহ আবাসিক এলাকায় করতে হবে। কেন্দ্রে একজন মাদকাসক্তি রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বহুতল ভবনের তৃতীয় তলা বা তার চেয়ে ওপরের তলায় অবস্থিত হলে লিফট থাকতে হবে। বিধিমালার ‘গ’ ধারায় বলা আছে, প্রতি ১০ বিছানার জন্য আলাদা একটি টয়লেট ও পানির সুব্যবস্থাসহ কমপক্ষে একজন মনোরোগ চিকিৎসক (খন্ডকালীন বা সার্বক্ষণিক), একজন চিকিৎসক, দু’জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবনরক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র থাকতে হবে।
অথচ রাজধানীর বেশিরভাগ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এসব নিয়ম মানা হয় না। কয়েকটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ীর দিশারী কেন্দ্রটি তার মধ্যে অন্যতম। এই কেন্দ্রে রোগী থাকে না বললেই চলে। তারপরও বছরের পর বছর ধরে চলছে। একইভাবে চলছে দয়াগঞ্জ মোড়ের হাদী মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র, যাত্রাবাড়ীর নতুন জীবন, তেজগাঁওয়ের আরাধনা, মিরপুরের আহমদনগরে হিরা, উত্তর বিশিলের পরিবর্তন, শ্যামলীর নিরাময়, খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন নির্বাণ, খিলগাঁওয়ের রূপান্তর, সিপাহীবাগের সৃষ্টি, শান্তিপুরের স্বপ্ন, মোহাম্মদপুরের বারাক, মনোরোগ চিকিৎসালয়, মোহাম্মদী হাউজিংয়ে জীবনের ঠিকানা, ঢাকা উদ্যানে ফিউচার, জীবনের আলো, নিউ তরী, আজিজ মহল্লায় নতুন জীবনে ফিরে আসা, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে রি-লাইফ, ৭ নম্বর সেক্টরে ফেরা, ৪ নম্বর সেক্টরে গ্রিন লাইফ, ৩ নম্বর সেক্টরে দীপ জ্বেলে যাই, উত্তর শাহজাহানপুরে নির্বাণ, মতিঝিলের হলি লাইফ, বাড্ডার ছোলমাইদ, ক্লিন লাইফ, নবজন্ম, এভারগ্রিন, রামপুরায় সমর্পণ, স্নেহনীড়, খিলগাঁওয়ে আশার আলোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্ত রোগীদেরকে নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। আবার নির্যাতন করে মাদকাসক্তের হাতে জীবন দেয়ার ঘটনাও আছে। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার ২৪০/৩ নম্বর ভবনের লাইফ লাইন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বশির উদ্দিনের (৪০) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জিমি, জসিম ও কাজী আনোয়ার পারভেজ অনি নামে তিন মাদকাসক্ত রোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী এলাকার একজন অভিভাবক জানান, তার এক ভাই মাদকাসক্ত। তাকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেখেছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই সেবার নামে ব্যবসা করছে। চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছু নেই। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদক থেকে মুক্ত করার পরিবর্তে চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে মাদক সেবন করানো, জেলখানার আসামিদের মতো বন্দি করে রেখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করা হয় এসব কেন্দ্রে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের এক সমীক্ষার সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় ৩৬ লাখের মতো মাদকাসক্ত ব্যক্তি রয়েছে। আর লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৩২২টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে সারা দেশে। চারটি রয়েছে সরকারি। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় দুটি ভিন্ন বিষয়। ‘এটা স্বাস্থ্যগত ব্যাপার। এটাকে ব্রেইন ডিজঅর্ডার বলা হয়’। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক উপস্থিতি থাকতে হবে। নিরাময় কেন্দ্রে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলে মোটামুটি একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে।
রাজধানীর মাইন্ড এইড হাসপাতালের কোনো রোগী ঘুমাতে না চাইলে সুই (ইনজেকশন) দেয়া হতো হাসপাতালের বাবুর্চি রুমা আক্তার জানিয়েছেন। রাতের বেলায় জেগে থাকা একজন রোগীর জন্য বাকি অন্যদের অসুবিধা হতে পারে বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে বলেই জেগে থাকা রোগীকে সুই (ইনজেকশন) দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হতো। রুমা হাসপাতালটিতে দুই মাস ধরে কর্মরত। রোগীরা বেশি চিল্লাচিল্লি করলে ওই রুমে (সাউন্ড প্রুফ রুমে) আটকে রাখা হতো। হাসপাতালে নারী-পুরুষ সব রোগী আসত। নিচতলায় নয় জন মহিলা রোগী থেকে সর্বশেষ চারজন ছিল। পুলিশ স্যারের মৃত্যুর পরে তারাও চলে গেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।