চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
কবর জিয়ারতে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দুয়া করার বিধান: দুয়া করার ক্ষেত্রে হাত তুলে দুয়া করা জায়েয রয়েছে। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল স. বাকী গোরস্থান যিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুহাত তুলে দুয়া করলেন।” তবে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার ব্যাপারে দলীল নাই। তাই অনেক আলেম কবর যিয়ারত করার সময় একজন দুয়া করবে আর বাকি সবাই ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবে এভাবে সম্মিলিত দুয়াকে বিদয়াত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া হল, “দুয়া একটি ইবাদত। আর ইবাদত দলীলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং আল্লাহর বিধানের বাইরে কারও জন্য ইবাদত করা জায়েজ নয়। আর নবী স. থেকে এটি প্রমাণিত নয় যে, তিনি জানাযা শেষ করে সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুয়া করেছেন। এ ক্ষেত্রে যে জিনিসটি প্রমাণিত তা হল, মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া সম্পন্ন হলে তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলতেন, “তোমাদের ভাইকে এখনই প্রশ্ন করা হবে। অত:এব দুয়া কর যেন সে (প্রশ্নোত্তরের সময়) দৃঢ় থাকতে পারে।” তাহলে এ থেকে প্রমাণিত হল যে, জানাযার সালাত শেষ করে সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েয নয় এবং এটি একটি বিদয়াত।
কবরের পাশে কান্না করা : প্রিয় মানুষের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখের পানি চলে আসা স্বাভাবিক। তবে সেখানে গিয়ে হায়-হুতাশ করা ঠিক নয়। এই আশঙ্কার কারণেই নারীদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মাজানের কবর জিয়ারত করার জন্য গমন করেন। এ সময় রাসুল (সা.) কাঁদলেন এবং তাঁর সঙ্গীরাও কাঁদল। এরপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে, আমার মায়ের কবর জিয়ারত করতে চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৪)
কবরের কাছে গিয়ে যা করা নিষেধ : কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, সালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবর ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৬)
কবর বিষয়ে প্রান্তিকতা: কবরের বিষয়ে শরীয়ত ইফরাত-তাফরীত (কোনো প্রকারের প্রান্তিকতা) অনুমোদন করে না। সুতরাং কবরের অসম্মানও যেমন নিষেধ তেমনি সম্মানে সীমা অতিক্রম করাও। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী স. কবর পাকা করতে, এর উপর গম্বুজ নির্মাণ করতে আর কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৮) এক হাদীসে আছে, ‘কবরের উপর বসবে না, কবরের দিকে ফিরে নামাযও পড়বে না’। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭২) আরেক হাদীসে আছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কবরের উপর না বসে। সে জ্বলন্ত কয়লার উপর বসুক, যার কারণে তার পরিধেয় কাপড় পুড়ে তার শরীরও পুড়ে যায়- এ-ও তার জন্য ভালো।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭১)
এক হাদীসে আছে, নবী স. কবর পাকা করতে, তার উপর কিছু লিখতে এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযী হাদীস ১০৫২) অন্য হাদীসে আছে, নবী স. সাহাবী আমর ইবনে হায্ম রা. কে কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলেছেন, ‘কবরের অধিবাসীকে কষ্ট দিও না।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯)
এ সকল হাদীস থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কবরের অসম্মানও কাম্য নয়, সীমাতিরিক্ত সম্মানও কাম্য নয়। তবে কবরের উপর খেলাফে শরা কর্মকান্ড হলে তা সংশোধন করা জরুরি। হযরত আলী রা. বলেন, নবী স. আমাকে এ কাজে পাঠিয়েছিলেন যে, যে ছবি বা মূর্তিই দেখি তা যেন বিলুপ্ত করি আর যে কবরই উঁচু দেখি তা যেন সমান করি। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত শরীফ পৃ. ১৪৮) এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, পাকা কবর বানানো বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ জায়েয নয়। স্বয়ং নবী স. ও তাঁর দুই সাহাবী (হযরত আবু বকর ও ওমর রা.) এর কবরও পাকা নয়, কাঁচা। (সুনানে আবু দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯)
এখন ঐসব কার্যকলাপ সম্পর্কে চিন্তা করুন, যা আমাদের অজ্ঞ আওয়াম ওলী-বুযুর্গদের কবরে করে থাকে। যেমন কবরে গেলাফ চড়ানো, বাতি জ্বালানো, কবরে সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরে চুমু খাওয়া, কপাল ঘষা, কবরের সামনে হাত বেধে এমনভাবে দাঁড়ানো যেভাবে নামাযী আল্লাহর সামনে হাত বেধে দাঁড়ায়, কবরের সামনে রুকুর মতো ঝোঁকা, কবরের উদ্দেশ্যে মান্নত মানা, নিয়ায চড়ানো ইত্যাদি। আপনি যদি কখনো কোনো বুযুর্গের মাযারে গিয়ে থাকেন তাহলে এই সকল কার্যকলাপ স্বচক্ষেই দেখেছেন। অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও ফিকহে হানাফীর কিতাবাদিতে এই সকল বিষয়কে না-জায়েয লেখা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।