Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তর-পূর্ব রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেয়ার হুঁশিয়ারি চীনের

নয়াদিল্লি তাইওয়ান নীতি পরিবর্তন না করলে..

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

তাইওয়ানের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম থেকে আপত্তি জানিয়েছে চীন। এ বিষয়ে বারবার নয়াদিল্লিকে ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং। তাতে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ করছে ভারত। আর এতেই ক্ষেপে উঠেছে শি জিনপিং প্রশাসন। চীন ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের মূল্য হিসাবে তাইওয়ানকে তুরুপের তাস হিসাবে উত্থাপনের জন্য ভারতের কড়া সমালোচনা করেছে চীন। ভারত তাইওয়ানের বাণিজ্য চুক্তির খবরের পর, চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, ভারতকে ‘এক চীন নীতি’তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে এবং তাইওয়ান সম্পর্কিত ইস্যুগুলিতে বুদ্ধিমত্তার সাথে এবং সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

নয়াদিল্লি তাইওয়ানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন স্থগিত না করলে ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত রাজ্যগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করার বিষয়ে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে চীন। সম্প্রতি চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে একটি প্রতিবেদনে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত যদি তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব না বদলায় তাহলে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে সাহায্য করা হবে। ভারত যেভাবে তাইওয়ানকে মদত দিয়ে ‘এক চিন নীতি’কে হেয় করার চেষ্টা করছে তার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। যদিও ভারতের ইকোনমিক টাইমসের (ইটি) এক প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লি তাইওয়ানের সাথে বাণিজ্য চুক্তির কোনও প্রস্তাব বিবেচনা করছে না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ‘বিশ্বে একটাই চীন রয়েছে এবং তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এক চীন নীতিমালা হ’ল ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বজনীন ঐকমত্য।’ চীনের কড়া সতর্কতার পরেও নয়াদিল্লিতে চীনা দূতাবাসের বাইরে তাইওয়ানের জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছায় শত শত পোস্টারের দেখা মেলে। যদিও তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সমর্থনে আনন্দিত হয়েছে, তবে বেইজিং বলেছে, নয়াদিল্লির এ জাতীয় উস্কানি চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর অক্ষয় প্রভাব ফেলতে পারে।

এরপর, চীনা দূতাবাস চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান) পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উয়ের একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে ইন্ডিয়া টুডের বিরুদ্ধে আরও একটি তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয় যে, এটি ‘এক চীন’ নীতির গুরুতর লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতীয় জনগণকে সম্পূর্ণ ভুল বার্তা দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতের দীর্ঘকালীন অবস্থানকে অবজ্ঞা করে তাইওয়ানের ডিপিপি কর্তৃপক্ষের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করায় ইন্ডিয়া টুডে’র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং কঠোর বিরোধিতা করছে ভারতের চীনা দূতাবাস।’

এ প্রসঙ্গে বেইজিং ফরেন স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও চেং দু ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের সভাপতি লং জিংচুন গ্লোবাল টাইম্স’র (জিটি) একটি নিবন্ধে বলেছেন, ‘তাইওয়ান ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলো একই ধরনের। যদি ভারত তাইওয়ান কার্ড খেলে তাহলে তাদেরও এটা জেনে রাখা উচিত যে, চীনও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিতে মদদ দিতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে বারবার অভিযান চালানোর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির ক্ষমতা আগের থেকে অনেক কমেছে। কিন্তু, তাদের পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। তবে বাইরে থেকে সাহায্য না পাওয়ার ফলে তারা নিজেদের শক্তি বাড়াতে পারেনি। কিন্তু, যদি সমর্থন দেয়া হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের পুরনো রূপ ফিরে পাবে। তাতে সমস্যা আরও বাড়বে। এতদিন ভারতের ওই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলো চীনের মদদ চাইলেও তাদের কথায় কান দেয়া হয়নি। তবে, ভারত যদি তাইওয়ানের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান না বদলায় তাহলে চীনকে বাধ্য হয়ে অন্য পথ ধরতে হবে।’

জিটির নিবন্ধে জিংচুন জানান যে, ভারত পাকিস্তান, চীন এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে আড়াই দিক থেকে সম্মুখ সমরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞটি সতর্ক করে বলেন যে, ভারত যদি তাইওয়ানের স্বাধীনতার সমর্থনে পদক্ষেপ নেয়, তবে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, আসাম ও নাগাল্যান্ডের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন করার জন্য চীনের সমস্ত রকমের কারণ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘চীন এমনকি সিকিমের পুনরুত্থানেও মদদ দিতে পারে।’

জিটির প্রধান সম্পাদক হু জিজিনও একই মতামত ব্যক্ত করে জানিয়েছেন যে, বেইজিং উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন এবং সিকিম পুনরুদ্ধার করে প্রতিশোধ নিতে পারে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বার্তা না থাকলেও, বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত গেøাবাল টাইমসে এমন মতামত প্রকাশ করা হবে না, যা পার্টির অবস্থান এবং নীতির বিরোধী। সূত্র : ইউরেশিয়ান টাইমস।



 

Show all comments
  • রোদেলা ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    এখন ভারতের পিছু হটাই উত্তম
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    ভারতের বাড়াবাড়ির দিন শেষ
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৬ এএম says : 0
    তাইওয়ান নিয়ে ভারতের নাক গলানো উচিত নয়
    Total Reply(0) Reply
  • এমডি রায়হান ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
    না বলে কাজ করেন
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
    পাশ্ববর্তী দেশগুলো নিয়ে চীনকে বলয় তৈরি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    বিষয়টি ভারতকে সিরিয়াসলি নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • খালেদ ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    আমার মতে চীনের এটা করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ