পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থ্রিজি নেটওয়ার্কে যেখানে একজিবি’র একটি ফাইল ডাউনলোড করতে ২০ মিনিট লাগে, ফোরজিতে সেটি ৫-৬ মিনিট লাগার কথা। চতুর্থ প্রজন্মের এই সেবা চালু হওয়ার ফলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে মুভি, ভিডিও দেখা, ক্লাস, মিটিং, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বকিছুই হওয়ার কথা স্বাচ্ছন্দ্যেই। কিন্তু গ্রাহকরা বাস্তবে পাচ্ছেন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। রাজধানীতেই মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে বাফারিং ছাড়া দেখা যাচ্ছে না কোন ভিডিও। ফোরজি ইন্টারনেটের দাম নিলেও দেশের জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে কোন কোন ক্ষেত্রে থ্রিজি, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টুজি সেবা পাচ্ছেন তারা।
অথচ ইন্টারনেটের সংজ্ঞায় ফোরজি মানেই হলো ইন্টানেটের রাস্তাটা অনেক চওড়া হয়ে যাওয়া বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে যাওয়া। ওই রাস্তায় তখন গাড়ি চলবে বেশ দ্রæতগতিতে। যেখানে টুজি ইন্টারনেটে থাকে মন্থরগতি। কিন্তু বিশেষ করে শহরের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ফোরজি তো দূরের স্বপ্ন, থ্রিজি’র অভিজ্ঞতাও করুণ। এক ধরণের হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অনেকের মধ্যে। বলে উঠে, “হায় হায়, ইন্টারনেট নেই!
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য সবকিছুই এখন চলছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই করছে অফিস, কেনাকাটা, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে অনলাইনে, রোগীরা বিভিন্ন চিকিৎসকের সাথে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাও নিচ্ছেন। করোনাপরিস্থিতির কারণে দেশে যখন ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে তখন ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেটে অভ্যস্ত হওয়ায় তাদের ভোগান্তিটা সবচেয়ে বেশি।
রংপুর শহরে বসবাসকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমান ফোরজি’র দামে ডাটা কিনে গতি পাচ্ছেন ৪৮কিলোবাইট (কেবিপিএস)।সিলেটের গ্রাহক মুহিনের ৫এমবির একটি ফাইল ডাউনলোড করতে গলদঘর্ম অবস্থা।গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট গতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে মাহবুব লিমন বলেছেন, আজকের যুবারাই ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গরবেগ্ধ-একমাত্র অন্তরায় হল নেটওয়ার্ক ও ডাটা মূল্য! আমরা যারা গ্রামের -উদ্যোগক্তা হওয়ার বা কিছু করার স্বপ্ন দেখি শুরুতেই হোচট খেয়ে যাই নেটওয়ার্ক ও ডাটা মূল্যের কাছে। তাই গ্রামীণফোন এর কাছে তার বিনীত অনুরোধ, গ্রামের মানুষগুলোর ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে!
ভালো নেই রবি আজিয়াটার গ্রাহকরাও। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে অপারেটরটির গ্রাহক আনোয়ার হোসেন জীবন রবির ইন্টারনেট প্রচারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রচারণা চালায় ফোর পয়েন্ট ফাইভ জি। বাজে কথা, আর কত ধোঁকা দিবে। টাওয়ারের নিচে বসে থাকলে টুজি পায় আর একটু দুরে গেলেই নেট নাই, ইহাই রবি।
রাজশাহীর হেলেনাবাদ এলাকার আজিজুল হক নামের এক ছাত্র রবির ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রবির নতুন সিম নিয়েছি, পদ্মা প্যাকেজ অনলাইনে ক্লাস করতে গেলে ছবি ঝাপসা। মাঝে মধ্যে নেট উধাও, রিকানেক্টেড হতেই থাকে।
আর বাংলালিংকের ইন্টারনেট নিয়ে সুখকর অভিজ্ঞতা খুব কম গ্রাহকের। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে যেসব গ্রাহক বাংলালিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা ক্ষুব্ধ অপারেটরটির প্রতি। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গ্রাহক মো. মকবুল হোসেন জেলা শহরে নেট পেলেও ৫ কিলোমিটার পরই নেট থাকে না। একই রকম অভিজ্ঞতা পান নিজ উপজেলা শহরে।
নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য ফোন দিয়ে কোন সমাধান পাননি যশোরের গ্রাহক মো. টিপু সুলতান। তিনি বলেন, নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য দুইদিন ১২১-এ ফোন দিয়েছি। দুই দিনই বলে নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ চলছে আশা করি সমস্যা দুই ঘণ্টার মধ্যে সমাধান হবে। ডাটার বিষয়ে বললে বলে আমাদের সিস্টেমে নাই। অথচ ব্যবহার না করলেও ডাটা কেটে রাখে।
জানতে চাইলে বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, টাওয়ার গাইড লাইনের কারণে আমরা গত দেড় বছর ধরে কোন ফোরজি বিটিএস বসাতে পারিনি। গাইড লাইন হওয়ার পর এখন কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে সাড়ে ৩শ’ বিটিএস বসাতে পারবো। তবে বাংলালিংক এবং টেলিটকের মতো ছোট অপারেটরের জন্য সরকারের কাছ থেকে অ্যাক্টিভ শেয়ারিংয়ের অনুমোদন দাবি করেন। অন্যত্থায় মাকের্টে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না বলেও জানান তাইমুর।
রবি আজিয়াটার চিফ রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, করোনার কারণে আমরা নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ করতে পারিনি। এজন্য কিছু জায়গায় হতো সমস্যা হয়েছে। তবে যখনই যেখানে সমস্যা হয়েছে আমরা সমাধান করেছি।
এদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে গতির প্রতারণা এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট বিষয়। যে পরিমাণ গতির জন্য বিল পরিশোধ করা হয় সেই পরিমাণ না পায় না কোন গ্রাহক। বিষয়টি নিয়ে বরাবরই গ্রাহকরা অভিযোগ করে আসছেন।
তবে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে গত দুই মাস ধরে রাজধানীসহ সারাদেশেই ধীরগতির ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। বিষয়টি নিয়ে প্রায় সময়ই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রতিনিধিদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন ভূক্তভোগিরা। অভিযোগ করছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিতেও। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছে বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি)।
রাজধানীর খিলক্ষেতের ইন্টারনেট গ্রাহক রাশেদ মেহেদী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিয়ে গতি পেয়েছেন ১১০ কেবিপিএস (কিলোবাইট পার সেকেন্ড)। বিষয়টি নিয়ে তিনি ওই সার্ভিস প্রোভাইডারকে একাধিকভার অভিযোগ করেছেন, অভিযোগ করেছেন বিটিআরসিতেও। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই কোন প্রতিকার পাচ্ছিলেন না। হতাশ হয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় আমাদের এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের ইন্টারনেটের গতির চিত্র ১১০ কেবিপিএস। এই গতি নিয়ে আমাদের স্বপ্নের কথা শুনতে হয়...। পরবর্তীতে চলতি মাসে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয়ের সূত্রে তার বিষয়টি বিটিআরসি সমাধান করে দেয়। তবে যাদের কোন প্রভাব নেই, সাধারণ নাগরিক হিসেবে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করেন তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই।
ব্রডব্যান্ড গতিতে বাংলাদেশ ১৮৪তম: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির হিসাবে বিশ্বের ২২১টি দেশের মধ্যে ১৮৪তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ব্রডব্যান্ডে বাংলাদেশের ইন্টারনেটে ডাউনলোডের গতি গড়ে প্রতি সেকেন্ডে তিন দশমিক দুই মেগাবাইট বা তিন দশমিক দুই এমবিপিএস। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এর পেছনে আছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। স¤প্রতি গুগল ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এম ল্যাবের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এম ল্যাব ২২১টি দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির ওপর এক সমীক্ষা পরিচালনা করে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সবচেয়ে ধীরগতির তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয়। আর বাংলাদেশের গড় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি এশিয়ার গড় ইন্টারনেটের গতির তুলনায় প্রায় ছয় দশমিক দুই গুণ ধীর। একই সঙ্গে পুরো বিশ্বের তুলনায় সাত দশমিক সাত গুণ ধীর। এমনকি সিয়েরালিওন, নাইজেরিয়া ও মালির মতো অনেক সাব সাহারান দেশেও বাংলাদেশের চেয়ে ইন্টারনেটের গড় গতি বেশি। এই তালিকায় চীনের অবস্থান ২০০তম। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল (১৫০), ভুটান (১৫৯), মালদ্বীপ (১৪১), শ্রীলঙ্কা (৭২) ও ভারতের (১০১) চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, রাজধানীতে ওভারহেড ক্যাবল অপসারণ চলছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এছাড়া ক্যাবল অপসারণের পর সেটি আবার তুলতে প্রোভাইডারদের বাড়তি ১০ শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে তারা আগে যে ব্যান্ডউইথ ও গতি দিয়ে সার্ভিস দিতেন সেটি কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিটিআরসির সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. জাকির হোসেন খান বলেন, লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা অবশ্যই দিতে হবে। তবে যদি কোন গ্রাহক তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা না পায় তাহলে বিটিআরসিতে অভিযোগ করতে পারে। বিটিআরসি লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুযায়ী সেসব আইএসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে অনেক অভিযোগের সমাধানও করেছে কমিশন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।