মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এবারের মার্কিন নির্বাচন অন্যবারের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। করোনাভাইরাসের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই অনেকে আশঙ্কা করছেন অনেক ভোটার এবার ভোট দিতে যাবেন না। আবার দুই প্রার্থীর মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক অমিল।
এদিকে শেষ বিতর্কের পর আবার মাঠে ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। নির্বাচনের মাত্র ৯ দিন বাকি থাকায় তারা এখন ব্যাটল গ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন ডেলাওয়ারে এক সমাবেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ক্ষমতায় গেলে আসন্ন ‘অন্ধকার শীতে’ ব্যাপকভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ারও ঘোষণা দেন। অন্য দিকে ফ্লোরিডার পেনসাকোলায় এক সমাবেশে ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর বক্তব্য বিকৃত করে বলেন, বাইডেন জয়ী হলে তেলশিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রাম্পের ধারণা, এতে পাঁচ-ছয়টি রাজ্যে বাইডেনের ভোট কমবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিতি অঙ্গরাজ্যগুলোর ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে মুসলিম ভোট।
মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরের বাসিন্দা ফাতিমা সালমান একজন সমাজকর্মী। আসন্ন নির্বাচনে নিজের পছন্দ এরই মধ্যে স্থির করে ফেলেছেন এই ৪৩ বছর বয়সী নারী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, তিনি অবশ্যই জো বাইডেনকে ভোট দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। ডোনাল্ড পুনর্নির্বাচিত হলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। বিষয়টি আমাদের অস্তিত্ব ও এই দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান বিশেষত মুসলিম বিদ্বেষের কারণে ফাতিমা সালমানের মতো করে ভাবছেন অধিকাংশ মুসলিম ভোটার। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ লাখের বেশি মুসলমানের বাস। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ তারা। কিন্তু মিশিগান, ফ্লোরিডা, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ার মতো সুইং স্টেটে তাদের জনঘনত্ব একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অঙ্গরাজ্যে মুসলিমদের ভোট একটি বড় প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষত মিশিগান অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে মুসলিম ভোটাররা অনেক বড় প্রভাবক হয়ে উঠবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অঙ্গরাজ্যটিতে নিবন্ধিত মুসলিম ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার। আর গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের কাছে ১ শতাংশ পয়েন্ট ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। সংখ্যার হিসাবে তা ১০ হাজার ভোটের কিছু বেশি।
জাতীয় পর্যায়ের মতোই মিশিগানে হওয়া জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই অঙ্গরাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই সমর্থন তিনি আদায় করেছেন। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (কেয়ার) করা সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মুসলিম নিবন্ধিত ভোটারদের ৭১ শতাংশেরই সমর্থন রয়েছে বাইডেনের দিকে। ১৮ শতাংশ সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্পকে। আর ১১ শতাংশ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি অভিষেকের পরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কয়েকটি নির্বাহী আদেশ দেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেওয়া তার এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে-বাইরে থাকা মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে। এই পদক্ষেপের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আদালতে একাধিক মামলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প আরোপিত এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার একটি পরিমার্জিত সংস্করণকে অনুমোদন দেয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর। অনেকের পক্ষেই যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব হয় না। গোটা বিশ্বেই এর বড় প্রভাব পড়ে। সেই পরিস্থিতি মুসলিম মার্কিনদের মন থেকে মুছে যায়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু এমন পদক্ষেপ নিয়েই থেমে থাকেননি। তিনি বিভিন্ন সময়ে করা টুইটে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি তিনি মিশিগানে তার কট্টর সমর্থক ও উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী গ্রুপ প্রাউড বয়েজের সদস্যদের ‘পেছনে থাকতে ও সঙ্গে থাকতে’ বলেছেন।
বিভিন্ন জনমত জরিপের তথ্য তুলে ধরে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০-এর দশকে সাধারণত মুসলিম ভোটের প্রায় সমান অংশ যেত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট বাক্সে। কিন্তু ঘটনাটি বদলে যায় ২০০১ সালের পর। ৯/১১ হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের আফগানিস্তান হামলা, ইরাক যুদ্ধ ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে মুসলিম ভোট হারাতে থাকে রিপাবলিকান দল। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তাজা। এ অবস্থার বেশ ভালো সুযোগ নিতে পারেন জো বাইডেন। সে চেষ্টাও তিনি করছেন।
এ বিষয়ে জো বাইডেনের প্রচার দলের মুসলিম সম্পৃক্ততাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ফারুক মিতহা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মুসলিম ভোট আমাদের নির্বাচনী কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাইডেনের প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে, প্রথম দিন থেকেই মুসলিম দেশগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ দমনে ব্যবস্থা নেওয়াও তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্তর্ভুক্ত। গত সাত মাসে আমরা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে দেড় শতাধিক অনুষ্ঠান করেছি। বিশেষত ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোয় এই জনগোষ্ঠীর ভোটাররা বড় ভূমিকা রাখবেন। এর মধ্যে রয়েছে মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, ফ্লোরিডা ও উইসকনসিন। এমনকি জর্জিয়া, টেক্সাস ও ওহাইওতেও তারা বড় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে হচ্ছে।’
মুসলিমদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রচার দলের ডেপুটি ন্যাশনাল সেক্রেটারি কোর্টনি প্যারেলা বলেন, প্রেসিডেন্ট ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চান। একই সঙ্গে মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়েও তিনি আন্তরিক। ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে হওয়া শান্তি স্থাপনে তিনিই মুখ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। প্যারেলা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে শান্তি স্থাপনে অন্যরা ব্যর্থ হলেও তিনি তা পেরেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।