Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও তরুণদের তদারকি

প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিকুর রহমান নগরী

জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ আর জঙ্গি অর্থ যোদ্ধা। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে যিনি অবতীর্ণ হয়ে থাকেন অভিধান অনুযায়ী তাকে জঙ্গি বলা হলেও আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে তথ্য-প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামকে বিশ্ববাসীর কাছে বিকৃতরূপে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেই চলেছে ইসলামের শত্রুরা। যে সময় চারিদিকে ইসলামের সঠিক ইতিহাস, আসহাবে রাসূল (সা.)’র জীবন চরিত পাঠ করে অসংখ্য অমুসলিমরা ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হতে চলেছেন। যারা বিদায় হজে বিশ্বনবীর বিখ্যাত ভাষণ পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। অপরের অধিকার, অন্যের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু পূর্ণ সংরক্ষণের প্রতি যতœবান হওয়ার তাগিদসহ অজগ্র কথামালাকে অনুধাবন করে মুসলমান হয়েছেন। আর যারা হবেন বলে মনস্থ করেছেন। তাদেরকে ডাইভার্ট করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে তথাকথিত নামধারী মুসলমান।
হযরত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা ইবনে যুবায়ের, সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আবু হুরায়রা, বিলাল হাবশিসহ লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম। যাদের মধ্যে যুবক, তরুণ, কিশোর এবং বৃদ্ধ ব্যক্তিরা ছিলেন। যারা নবিজীর পরশ পেয়ে স্টার হয়েছিলেন। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রিয়নবীর প্রতিচ্ছবি। বাতিল আকিদা, ইসলামবিরোধী অপশক্তি, ইসলাম নামধারী সংগঠন, চক্র, গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। তাদের কর্মতৎপরতা, আদর্শিক আন্দোলন কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী প্রজন্মের জন্য অনুস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কিন্তু আজ ব্যক্তি স্বার্থে, গোষ্ঠীর স্বার্থে, ইসলামকে কলুষিত করার লক্ষ্যে একদল খোদার নাফরমান হয়েও বর্তমান প্রজন্মকে ধর্মান্ধ করার জন্য ‘বোমা মারো, ইসলাম কায়েম করো’ এই ট্যাবলেট গিলাচ্ছে। সরলমনা তরুণদের হাতে কুরআন-হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা সংবলিত পুস্তকাদি তুলে দিচ্ছে। যাতে করে বই পড়ে তার মাইন্ড চেঞ্জ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে বিশ্বনবীর ‘বদর, উহুদ, সিফফিন, খন্দকসহ অসংখ্য অনাদর্শের বিরুদ্ধে আদর্শের লড়াইকে তরুণ সমাজের মগজ ধোলাইয়ের নিয়তে তাদের মতো করে উপস্থাপন করছে।
যার দরুন বর্তমানে শিক্ষিত তরুণরাই বেশি জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। কিসের অভাবে সুন্দর জীবনকে তারা নির্দিধায় নষ্ট করে দিচ্ছে। এনিয়ে ভাবছেন দেশের নামকরা বড় বড় সমাজ, রাষ্ট্র আর মনোবিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক সমকালে দেশের কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষিত তরুণরা কেন জঙ্গিবাদের মতো বিপজ্জনক পথে ঝুঁকছে? এই প্রশ্নের জবাবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সমাজে একধরনের আদর্শিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিহীনতা, দুর্নীতি, সর্বস্তরে ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণ, সার্বিকভাবে মূল্যবোধের সংকট, শিক্ষা খাতে যুক্তিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্ক সৃষ্টিশীলতার অভাবই তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে প্ররোচিত করছে।
এর থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের অভিভাবক মহলকে বাড়াতে হবে নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি তদারকি। এর জন্য দেশের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাবিদরা অনেক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। যা প্রত্যেকটিই মেনে চলা সকল পিতা-মাতার জন্য আবশ্যিক। তথ্য-প্রযুক্তি, কম্পিউটার আর সায়েন্সের যুগে সন্তানদের ফেসবুকের ফেন্ড লিস্টে থেকে তার এক্টিভিস্ট তদারকি করা, ব্লগে একাউন্ট থাকলে তাও পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এতে সন্তানরা কোন ধরনের পোস্টে লাইক করছে, কোন পেজে লাইক করছে, টাইম লাইনে কী আপলোড করছে? তার ফ্রেন্ড লিস্টে কোন প্রকৃতির বন্ধুরা আছে ইত্যাদি দেখার সুযোগ হবে। এছাড়া ইসলামী দৃষ্ঠিকোণ থেকে বলতে গেলে একটি সন্তানের শিক্ষার মূল উৎস্য হচ্ছে তার পরিবার। যেখান থেকে তার বেড়ে উঠা, যে পরিবেশকে নিয়ে তার পথচলা। তাই এ ক্ষেত্রে পরিবারই পারে সর্বোচ্চ ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে।
ইসলামকে কলঙ্কিত করার এই যুগে, তরুণ সমাজকে ধংসের ষড়যন্ত্রে যারা মেতে উঠেছে তাদের থেকে সতর্ক হতে হবে সবাইকে। বাংলার এই পবিত্র জমিন থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করার দৃঢ় প্রত্যয় নেয়ার এখনই সময়। কিশোর-যুবক, তরুণসহ সকল বয়সী সন্তানদের প্রতি বাবা-মা আর পরিবারের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অশুভ শক্তির পতন হোক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও তরুণদের তদারকি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ