পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা তৈরি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসতে পারে চলতি কার্তিক মাসে। এমনটি শঙ্কা-আভাস আবহাওয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু নেটওয়ার্ক-সংস্থাগুলোর। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ক্রমে আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘনীভূত হতে পারে। এটি পরবর্তী ধাপে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটির গতি-প্রকৃতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া বিভাগ। বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, এটি ধাপে ধাপে নিম্নচাপ থেকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। চলতি অক্টোবর ও আসছে নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে চারটি নিম্নচাপ সৃষ্টি এবং এরমধ্য থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে ত্রৈমাসিক দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে।
সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। যা এ দেশে অতীতকাল থেকেই ‘আশ্বিন-কার্তিকের তুফান’ হিসেবে পরিচিত। মৌসুমের এ সময়ে অতীতে বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশে আঘাত হানে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের উপরস্তরে পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশিই রয়েছে। তাছাড়া দেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে গুমোট আবহাওয়া ও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। যা নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পূর্ববর্তী আলামত হিসেবে দেখছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সর্বশেষ বিগত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এবং এর আগে গত বছরের ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ভারতের উপকূল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে। উভয় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি এখনও দগদগে রয়েছে। কার্তিক মাস এলেই দেশের উপকূল, চর ও দ্বীপবাসীর মাঝে দুর্যোগের আতঙ্ক ভর করে।
এদিকে গতকাল ৫ কার্তিক তথা হেমন্তের শুরুতে যেখানে হালকা শীত ও কুয়াশা পড়া স্বাভাবিক সেখানে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় অসহনীয় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমী বায়ু ক্রমাগত সক্রিয় হয়ে উঠে। এর ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, সমুদ্রে লঘুচাপের ঘনঘটার কারণে তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে। দিনভর তীর্যক সূর্যের কড়া তেজের সাথে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের সঙ্গে ঝরছে ঘাম। কাহিল হয়ে পড়ছে মানুষ। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার ছিল ৯১ শতাংশ।
আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে চলতি অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার আভাস দেয়া হয়। তবে গতকাল অবধি মৌসুমী বায়ু বিদায় নেয়নি। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর বর্তমানে সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ বছর মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে বেশ আগেভাগে, গত জুনের প্রথম সপ্তাহের পরই। এর ফলে বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু এবার দীর্ঘস্থায়ী ও সক্রিয়ভাবে জেঁকে বসে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, তিব্বতসহ চীনে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সার্বিক গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি হয়। চলতি অক্টোবরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়। আবহাওয়ার এহেন অস্বাভাবিক ও এলোমেলো আচরণে হেমন্তে এসেও চৈত্র-বৈশাখের মতো তীব্র গরমে স্বাভাবিক জনজীবন অতিষ্ঠ। তাপদাহের দাপটে দিনে-রাতে তাপদাহে সর্বত্র বিরাজ করছে অস্বস্তি। তাছাড়া সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় খেপুপাড়ায় ৭১ মিলিমিটার। তাছাড়া ঢাকায় ৪৬, চট্টগ্রামে ৭, সিলেটে ৬, বগুড়ায় ৭, মংলায় ১৪, পটুয়াখালীতে ৬৩, মাদারীপুরে ১২ মিলিমিটারসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরেছে। গতকাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে কম বৃষ্টিপাত হয়।
বৃষ্টিপাতের ফলে আগের দু’তিনদিনের তুলনায় গরমের দাপট কিছুটা কমেছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৫ এবং সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ২২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৩ ও সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এর পরের পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাত ক্রমশ হ্রাস পেতে পারে।
বন্দরসমূহে ৩ নম্বর সঙ্কেত
আবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, সমুদ্র বন্দরসমূহ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে ট্রলার নৌযানসমূহকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।