পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশব্যাপী ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর একলাশপুরগামী লংমার্চে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ করার সময় ফেনী শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের দাবি পুলিশের ছত্রছায়ায় থেকেই ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করেছে। এর আগে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে লংমার্চকারীরা সমাবেশ করেন। অতপর বিকেলে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে কেন্দ্রীয় শহীদ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ৯ দফা দাবি মানা না হলে ১৯ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ ও সমাবেশ এবং ২১ অক্টোবর রাজপথ, রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।
লংমার্চে অংশ নেয়া বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা জানান, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও প্রচারাভিযান করে ফেনী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে লংমার্চ যাওয়ার সময় কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেলে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী লাঠি নিয়ে হঠাৎ হামলা করে। এসময় লংমার্চ কারীদের মধ্যে হৃদয়, শাহাদাত, অনিক, যাওয়াদ ও সাংবাদিক, পথচারীসহ ২৫ জন আহত হয়। তাদের দাবি, সমাবেশে সরকার ও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর পুলিশি পাহারায় হামলা করা হয়েছে।
এর আগে, শহরের শহীদ মিনারের পাশে দোয়েল চত্ত্বরে সমাবেশ চলাকালে দেওয়ালের ওপর লাল রঙ লাগিয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী স্লোগান’ লেখাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চকারীদের বাক বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লংমার্চে অংশ নেয়া সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদরি জয় বলেন, ফেনীতে সমাবেশ শেষে নোয়াখালী রওনা হতে বাসে ওঠার সময় লাঠিসোঁটা ইট নিয়ে আমাদের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে স্থানীয়রা আমাদের জানায়।
এদিকে লংমার্চের প্রায় ৬টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে কর্মসূচিতে থাকা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল জানিয়েছেন। পুলিশ এসময় নিশ্চুপ ছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তাফা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ লাঠি, ইট-পাটকেল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কালচারাল সেক্রেটারি ঋদ্ধ অনিন্দ্য বলেন, সমাবেশ চলাকালে আমাদের সহযোদ্ধারা দেয়াল চিত্র আঁকছিলেন। সে সময় পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর যখন আমরা বেগমগঞ্জে যাব বলে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হই তখন কয়েকজন আমাদের মিছিলে ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়। তারা আমাদের বাস ভাঙচুর করে। তারা বলে সরকারবিরোধী সেøাগান দেয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর ছবি নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে সরকার দলীয় লোকেরা লংমার্চে হামলা চালায়। এসময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এতে ৭/৮ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের প্রতিহত করা চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনার পর লংমার্চে অংশকারীদের নোয়াখালী পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই রকম হামলা না। সমাবেশের শেষ পর্যায়ে সামান্য হাতাহাতি হয়েছে। সমাবেশে স্থানীয় সংসদ সদস্যের তিনটি ছবি ছিল। যেখানে তাকে কটূক্তি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সংসদ সদস্যের সমর্থকরা মিছিল করে। সে সময় লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দিকে তেড়ে যায়। এতে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
তবে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চের ওপর হামলার একটি ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে পুলিশকে মারমুখী দেখা যাচ্ছে। পুলিশ-ছাত্রলীগ সম্মিলিতভাবে হামলা করেছে বলে যে ছবি দেখিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে সে বিষয়ে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম বলেন, লংমার্চে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে কটূক্তি করলে তার সমর্থকরা লাঠি হাতে মারমুখী অবস্থান নেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশও অবস্থান নেয়।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি সাংবাদিকদের বলেন, হামলার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত নয়। এটা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় এমপি নিজাম হাজারীকে কটূক্তি করায় সাধারণ জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে এই হামলা চালিয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী জানান, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখেছেন তারা।
দেশে ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশ করে। সে সমাবেশ থেকে ধর্ষণবিরোধী একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে। ঢাকার শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান এসে বাসে করে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া ও সোনারগাঁও, কুমিল্লার চান্দিনা ও শহর ফেনী যায়। ফেনী থেকে দাগনভূঞা, নোয়াখালীর চৌমুহনী ও একলাশপুরে সমাবেশ করার কর্মসূচি দেয়। পথে কয়েকটি সমাবেশ করে। নোয়াখালীর মাইজদীতে সমাবেশের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শেষ হওয়া লংমার্চে কয়েকশ নেতাকর্মী অংশ নেয়।
বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ স্লোগানে ৯ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা, সিডো সনদে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, সাহিত্য-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা এবং সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চাকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা; তদন্তের সময়ে ভুক্তভোগীকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করা ও তার আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধবিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি করা।
মাইজদীতে কেন্দ্রীয় শহীদ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী লংমার্চের সমন্বয়ক ও জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক পলাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট একাংশের সভাপতি মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট একাংশের সভাপতি আল কাদরী জয়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ নারী মুক্তির সীমা দত্ত প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।