পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে হঠাৎ করে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ বেড়ে গেছে। এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ কমে গেলেও ধর্ষণ করে হত্যা, গণধর্ষণ, সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধর্ষকদের বিচারে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবিতে চলছে আন্দোলন। অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, লংমার্চ, মৌনমিছিল, মশাল মিছিল, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ নানা ধরনের কর্মসূচিতে আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে বামডান সবাই রাস্তায়। এরই প্রেক্ষিতে সরকার ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড’ আইন করে অধ্যাদেশ জারী করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে না তো? ‘ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড’ এ সুযোগে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং শত্রুতাবশত প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
দেশের বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্টজনরা এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন ‘মৃত্যুদন্ড’ ধর্ষণ অপরাধ কমবে না। বরং এই আইনের অপপ্রয়োগ হতে পারে। মূলত ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশ, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদির উপর জোর দেয়া উচিত। এছাড়াও ধর্ষকদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্জন এবং ঘৃণা করা হলে ধর্ষণের মতো ঘৃণা অপরাধ কমতে পারে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং প্রতিপক্ষের প্রতিবিদ্বেষ ছড়ানোর সংস্কৃতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। রাজনৈতিক বিরোধ ও প্রতিহিংসার চর্চা সর্বজনবিধিত। নারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রণীত ‘যৌতুক নিরোধ আইন’ এবং ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ এর অপপ্রয়োগ এবং অপব্যবহার নানাভাবে হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ কার্যকরের পর যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌনপীড়ন ইত্যাদির মামলা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশ আইন কমিশনের গবেষণায় দেখা যায়, এ আইনের অধীনে প্রতি ১০০টির মধ্যে ৯০ ভাগ মামলাই মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া হিসেবে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী ১৫ হাজারের কিছু বেশি নারী নির্যাতনের মামলা হয়। এর এক তৃতীয়াংশ মিথ্যা অভিযোগে করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিওগুলো গবেষণা করে জানায়, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের যে মামলা করা হয় তার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই মিথ্যা অভিযোগে হয়ে থাকে। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই সরকার যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮ করেন। এই আইনের ৬ ধারা হলো- ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করিবার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ৫০,০০০ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে-দন্ডিত হইবেন।’ এর পর থেকে মামলার সংখ্যা কমতে থাকে।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। মানুষ চায় আইনের যথাযথ ব্যবহার। কিন্তু এরমধ্যেই যেন আইনটির সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অপচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। সিলেটের এমসি কলেজ হোস্টেল ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী ধর্ষণের পর দেশে আরো কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী কয়েকজন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে দুটি থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। ফেসবুক, ব্লগ ও ইউটিউবে ওই ছাত্রীর বক্তব্য, অভিযুক্তদের বক্তব্য এবং দুই মামলায় দুই ধরনের বিবরণে ‘প্রকৃত চিত্র’ উঠে এসেছে। ওই ছাত্রীর ভাই হাফেজ আরিফ রব্বানী জানিয়েছেন, ‘তার বোনের সঙ্গে একজন ছাত্রনেতা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের পারিবারিকভাবে একে অন্যের বাসায় যাতায়াত ছিল এবং বিয়ে চ‚ড়ান্ত হয়। পরবর্তীতে সেটা ভেঙে যায়’। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তধীন ও বিচারাধীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চিত্র আমরা কেমন দেখি? ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি না নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক এলাকাগুলোতে তাকালে দেখা যায়- ছাত্রছাত্রীরা একে অন্যের হাত ধরে গল্প করছেন। প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল এখানে-সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর এই আড্ডা, প্রেমপ্রীতি ওপেন সিক্রেট। শিক্ষার্থীদের এই প্রেমের পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত কারো বিয়ে হয়; আবার কারো প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। ক্যাম্পাসের ওই ছাত্রছাত্রী তথা প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের রঙঢঙ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানেন। আমরা মানি না মানি ক্যাম্পাসে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলদের এমন চিত্র ‘ঢাবিসহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সমাজে’ স্বীকৃত ব্যবস্থা।
এই যখন ক্যাম্পাসের অবস্থা তখন ‘সম্পর্কের’ ১০ মাস পর মামলার রহস্যই জানান দেয় ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড’ আইনটির অপপ্রয়োগ এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ব্যবহারের শঙ্কা রয়ে গেছে।
ধর্ষণের সজ্ঞা সবার জানা। ধর্ষণ মামলার সুস্থ তদন্ত এবং বিচারের শাস্তির বিষয় আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিচার নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু যৌতুক নিরোধ আইন ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মতো যেন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড আইনটির অপপ্রয়োগ না হয়। আইনের সুযোগ নিয়ে ‘ফাঁসিয়ে’ দেয়ার ঘটনা না ঘটে। যদিও ধর্ষণ নিয়ে দিল্লি হাইকোটের ঐতিহাসিক রায় রয়েছে। ধর্ষণের বিষয় নিয়ে ২০১৩ সালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে ‘দীপক গুলাতি বনাম হরিয়ানা রাজ্য’ মামলায় বিচারপতি বিএস চৌহান ও বিচারপতি দীপক মিশ্র রায়ে বলেন, ‘যখন ছেলে-মেয়ের মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকে, তখন তারা অনেক সময় একাধিকবার এবং পুনঃপুনঃ একে অন্যকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে; যার ফলে ওই প্রতিশ্রুতি তার গুরুত্ব হারায়। অর্থাৎ ছেলে কর্তৃক ওই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে মেয়ে যদি তার সর্বস্ব সজ্ঞানে ভয়ভীতি ছাড়া ওই ছেলেকে দেহ দান করে, সে ক্ষেত্রে পরে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর কোনো পক্ষের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়; অর্থাৎ ধর্ষণের মামলা এখানে অচল।’ এছাড়াও আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হানিফ সেখ বনাম আছিয়া বেগম মামলায় (৫১ ডিএলআরের ১২৯ পৃষ্ঠা) উল্লেখ আছে যে, ১৬ বছরের অধিক কোনো মেয়েকে যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যৌনকর্ম করে তা হলে তা ধর্ষণের নামান্তর হবে না। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সোহেল রানা বনাম রাষ্ট্র মামলায় (৫৭ ডিএলআরের ৫৯১ পৃষ্ঠা) বলেছেন, যৌনকর্মের সময় যদি ভিকটিম কোনোরূপ বাঁধা না দেয় অথবা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা না করে অথবা কোনো চিৎকার না দেয়, তাহলে ধর্ষণ হয়েছে বলে মনে করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যৌনকর্মে ভিকটিমের সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে।
আমরা চাই ধর্ষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ। কিন্তু প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই আইনের সুযোগ নিতে না পারেন। মৃত্যুদন্ড যেন ফাঁসানোর ফাঁদ না হয়। আসুন আমরা ধর্ষকদের ঘৃণা করি, সামাজিকভাবে বর্জন করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।