পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সেনাবাহিনীর দশম ইউনিটকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সুরক্ষিত থাকার, খাদ্যোৎপাদন অব্যাহত রাখার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মিতব্যয়ী হওয়ার তাকিদ দিয়েছেন। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে তার এই তাকিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। এখন দেশেই কেবল নয়, গোটা বিশ্বে করোনা মহামারির তান্ডব চলছে। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪ লাখ। অন্যদিকে বিশ্বে মারা গেছে প্রায় ১১ লাখ। আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৬ লাখের ওপর। এমতাবস্থায় ব্যক্তিগত সুরক্ষাটা খুবই দরকার। করোনা এমন একটা ভাইরাস, যা প্রতিনিয়ত রূপবদল করে এবং দ্রুত সংক্রমিত হয়। এখনো এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি এবং আক্রান্ত এতে হলে মৃত্যুর আশংকা ও শারীরিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। কাজেই, করোনা থেকে মুক্ত থাকতে হলে স্বাস্থ্যসুরক্ষাবিধি মান্য করার বিকল্প নেই। করোনা প্রতিরোধে যেসব কার্যকর বিধি নিরূপিত ও আরোপিত হয়েছে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তা অনুসরণ করা গেলে আশা করা যায়, সুরক্ষিত থাকা সম্ভবপর হবে। একথা কারো অজানা নেই, করোনা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে আশংকা প্রকাশ করেছেন, করোনা সৃষ্ট মহামন্দা গত শতকের ৩০-এর দশকের মহামন্দাকেও ছাড়িয়ে যাবে। মন্দা কার্যত সব দেশেই শুরু হয়ে গেছে। কোটি কোটি মানুষ কর্ম হারিয়েছে। শিল্পের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ বেকার, দরিদ্র বা দরিদ্রতর হয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্যাভাব প্রকট আকার ধারণ করতে পারে, এমন আশংকা করা হচ্ছে। আশার কথা শুধু এই যে, কৃষির ওপর করোনার আঘাত কম লেগেছে এবং মানুষের টিকে থাকার ক্ষেত্রে কৃষিই প্রধান অবলম্বন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা কোনো দিক দিয়েই ভালো হয়। কৃষি বাদে সকল দিক ও পর্যায়ে করোনা আঘাত হেনেছে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির পুনরুত্থানের নানা উদ্যোগ-পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে অবশ্যই উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, আমাদের এখন থেকে সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে, সেই সাথে খাদ্যোৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে, তখন একথার গভীর তাৎপর্যটি আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দ্বিতীয় দফায় দেশে করোনা মহামারি দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন। এর আগেও শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় প্রবাহ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে এর অন্যথা হবে, এমন ধারণা উচিৎ নয়। তেমন আশংকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি কী করে দৈনন্দিন কাজসহ যাবতীয় উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যায়, তার কার্যব্যবস্থা নির্ধারণ করতে হবে। নতুন করে ব্যাপক আকারে করোনা দেখা দিলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ওষুধপত্র, ডাক্তার-নার্স, সেবা-শুশ্রুষা ইত্যাদির জন্য এ অর্থ লাগবে। এদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের মিতব্যয়ী হতে বলেছেন। চলমান করোনাকালে করোনা মোকাবিলা ও চিকিৎসায় প্রচুর অর্থের অপচয় হয়েছে, যথেচ্ছ লুটপাট হয়েছে। ক্রয়-সেবায়-চিকিৎসায় সরকার অকাতরে অর্থ দিয়েছে, সংশ্লিষ্টদের একাংশ সে অর্থের বড় অংশ অপচয় ও লুটপাট করেছে। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সংকট সৃষ্টি করেছে, তার মোকাবিলায়ও প্রয়োজন বিপুল অর্থের। এজন্য সকল ক্ষেত্রে ব্যয়সাশ্রয় করতে হবে। কম প্রয়োজনীয় বা এখনই প্রয়োজন নয়, এমন প্রকল্প বাদ দিতে হবে। সরকারি ক্রয় কমাতে হবে। কম বা অপ্রয়োজনীয় আমদানি রহিত করতে হবে। বিদেশি পরামর্শকব্যয়, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কমাতে হবে।
এভাবে সরকারি অর্থের অপব্যয়, অপচয় ও লুটপাট কমাতে পারলে করোনা অথবা করোনাজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা অনেকটাই সহজ হবে। সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, মিতব্যয়ী হতে, সরকারি অর্থ যতটা সম্ভব বাঁচাতে অনুপ্রাণিত হবেন বলে আমরা আশা করি। জাতীয় এই দুর্যোগকালে জনগণের মধ্যেও মিতব্যয়ীতার চর্চার ব্যাপক প্রসার হওয়া দরকার, যা না হলেই নয়, ব্যয় তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, এ সময়ে সবচেয়ে বড় বিচক্ষণতা। হতদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষই নয়, নিম্নমধ্য এবং এমনকি মধ্যবিত্তের মানুষও এখন জীবনযাত্রার ন্যূনতম ব্যয়ক্ষমতা হারিয়েছে। সবচেয়ে নিম্নমানের চাল যেখানে ৫২ টাকা, এক কেজি আলুর দাম ৫০ টাকা, সেখানে সাধারণ মানুষ কীভাবে টিকে থাকবে? এমতাবস্থায়, সবাইকেই ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে, বাড়তি অর্থ অন্যকে দিয়ে সাহায্য করতে হবে। আল্লাহপাক বলেছেন, মিতব্যয়ীদের তিনি পছন্দ করেন। রাসূলেপাক সা. বলেছেন, আল্লাহ অপচয়কারীদের অপছন্দ করেন। সম্পদ ও অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদের আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর একথা স্মরণ রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।