পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন আর ছবি বিশ্বাস অভিনীত ‘সবার উপরে’ সিনেমার গল্পের মতোই ঘটনা। নির্দোষ হয়েও ১২ বছর জেলের সাজা ভোগার পর আদালতে দাঁড়িয়ে ছবি বিশ্বাসের সেই আর্ত আবেদন মিথ হয়ে গিয়েছে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে। ‘দাও, ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও আমার সেই ১২টা বছর’। বাস্তবতা রুপালি পর্দার চেয়ে অনেক কঠিন। সেই বাস্তবের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার চেক ডিজঅনার মামলায় ৪ অক্টোবর থেকে জেল খাটছেন। তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বিকেলে প্রকৃত সাজাপ্রাপ্তকে গ্রেফতারে সক্ষম হয় গলাচিপা থানা পুলিশ।
হাবিবুর রহমান অপরাধী নন, তবুও তিনি জেল খাটছেন। কারণ মিলটা শুধু নামেই। ‘অপরাধ’ বলতে সেটাই। আর সেই অপরাধে সাত দিন জেলে রয়েছেন বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান। বাবাকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ছেলে আবু সালেহ। টাকাও যোগাড় করতে পারছেন না। তবে পুলিশের দাবি, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তাই দারোগারও ভুল হয়েছে। হাবিবুর রহমানকে জেলমুক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যেই প্রকৃত দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে খুঁজে বের করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরের কলেজ রোডস্থ বনানী এলাকায়। পুলিশ বলছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্ট মালিক হাবিবুর রহমান। পৌর শহরের বাসিন্দা নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে তিনি। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলায় এক বছরের কারাদন্ড হয়েছিল। রায়ের পর সে পলাতক ছিল। ওই মামলায় গত ৪ অক্টোবর শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়। নূর মোহাম্মাদ পন্ডিতের ছেলে হাবিবুর রহমান সেই থেকে বিনা দোষে কারাভোগ করছেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্ট মালিক হাবিবুর রহমান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক থেকে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুক‚লে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব একাউন্টের (হিসাব নং ২২০০) ঋণের সমপরিমান অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি পরবর্তী বছরের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দেন। হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়।
পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদন্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বনানী এলাকায় গত ৪ অক্টোবর অভিযান পরিচালনা করেন। শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। ওইদিন বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকৃত ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান প্রায় ৫ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ফেলেন। পার্শ্ববর্তী মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে মুদি-মনোহরি ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। গতকাল দুপুরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত ৪ অক্টোবরের পর থেকেই হাবিবুর রহমান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছে না।
এ ব্যাপারে বিনা দোষে কারাগারে থাকা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী কোনো দিন ব্যবসা করেননি আর আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। আমাদের দুই ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করে। ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে তারা যে টাকা দেয় তা দিয়ে আমাদের দু’জনের চলে যাচ্ছে। পুলিশকে বিষয়টি বলেছি কিন্তু তারা শোনেনি।
হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে আবু সালেহ জানান, বাবাকে কারাগারে পাঠানোর সংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে চলে আসি। আদালত থেকে কাগজপত্র ওঠানোর পর দেখি বাবা নিরপরাধী। শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে সাজাপ্রাপ্ত অন্য লোকের পরিবর্তে আমার বাবাকে পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে। বাবা অসুস্থ, চোখেও ভালো দেখতে পান না, কানে ভালো শুনতেও পান না। এমনকি তার চলাচলের তেমন শক্তিও নেই।
গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন, আদালত থেকে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু পরে জানতে পারি তিনি প্রকৃত আসামি নন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
গলাচিপা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, আসামির নাম ও পিতার নামের মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেফতার করে। প্রকৃত বিষয়টি অবগত হওয়ার পর গতকাল আসল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি সংশোধন করে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।