পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে দেশবাসী। গতকাল রাজধানী ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল এবং নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দিনভর রাজধানীর উত্তরা ও শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে, একই দিন দুপুরে শাহবাগে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর কালোপতাকা মিছিল বের করে। মিছিলটি গুলিস্তান জিরোপয়েন্টের কাছে গেলে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এ সময় তারা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েতের ডাক দেন সংগঠনের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তুমুল বৃষ্ট মাথায় নিয়েও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে আন্দোলনের কর্মীরা। গতকাল শাহবাগ এলাকায় বৃষ্টি শুরু হলে বৃষ্টিতে ভিজে স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।
প্রতিবাদে উত্তাল শাহবাগ, নুরের মিছিলে পুলিশের বাধা: সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করছে ‘সেভ আওয়ার উইমেন’ নামের শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। একই স্থানে দুপুর পৌনে বারোটা থেকে বিক্ষোভ করে বাম ছাত্র সংগঠন ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীরা। তারা বলছেন, ধর্ষণ ও নির্যাতনে দোষীদের সহায়তা দেয়া হয়। এতে করে দোষীরা বার বার এমন ঘটনা ঘটায়। ধর্ষণে দ্রুত বিচার হলে বার বার এমন ঘটনা ঘটবে না। ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘সেভ আওয়ার উইমেন’র সভাপতি সানজিদা খান বলেন, আমি প্রতিদিন যেমন বাসা থেকে বের হই, তেমনি নিরাপদে যেন বাসায় ফিরতে পারি, এটাই আমাদের চাওয়া। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমরা চলতে চাই। আমাকে যেন রাস্তায় ধর্ষণের শিকার হতে না হয়, এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিক্ষোভে অবস্থানকারীরা ‘যে হাত নিপীড়কের, সে হাত ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষক লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের হবে না’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষক পুষে, সে রাষ্ট্র ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকদের কারখানা, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘পাহাড় কিংবা সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে’ স্লোগানে বিক্ষোভ করেন। তারা গণ-অবস্থান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও জানান।
এদিকে গতকাল সোয়া ১২টা থেকে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর কালোপতাকা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান তারা। এক পর্যায়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে গুলিস্তান জিরোপয়েন্টের কাছে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এসময় সেখানেই অবস্থান নেয় বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী। পরে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগে গণসমাবেশের ডাক দিয়ে জিরোপয়েন্টে তাদের অবস্থান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
উত্তরায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ
ধর্ষকের বিচার দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ করা হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী বুধবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি হতে হবে। তা না হলে সমাজে ধর্ষণ কমবে না। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসতে থাকেন উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে। ধর্ষণের বিচার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে তারা বিএনএস সেন্টারের সামনে প্রথমে মানববন্ধন করেন। পরে মানববন্ধনটি বিক্ষোভে রূপ নেয়। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় টঙ্গী থেকে বিমান বন্দর হয়ে মহাখালী পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা ব্যাপী দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
উত্তরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার বা আইনের ফাঁক গলিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে সমাজে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নারীরা হয়ে পড়ছেন বিপন্ন, ভীত। এই প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, বাংলাদেশ তুমি কার ধর্ষকদের নাকি শান্তি প্রিয় মানুষের?
বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী সামিয়া জেরিন বলেন, আমরা এখন বাসা থেকে বের হলেই আমাদের বাবা-মায়েরা চিন্তায় পড়ে যান। আমাদের নিয়ে তারা সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা নিরাপদে বাঁচতে চাই। এই দেশটা কোনো ধর্ষক-নিপীড়কের হাতে বন্দী থাকতে পারে না। কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, নবাব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও এই কর্মসূচিতে ছিলেন।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত উত্তাল রয়েছে নোয়াখালী। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে মানববন্ধন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপেয়েন্টে ধর্ষণবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
দিনাজপুর অফিস জানায়, দিনাজপুরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে ছাত্র ছালেকিন নামে একটি সংগঠন গতকাল বেলা ১২টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক কাজী মুহম্মদ ইসহাক জামিল ও কেন্দ্রীয় শাখা সদস্য মুহম্মদ ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ বাকি বিল্লাহ পাটোয়ারি, সহসভাপতি মুহম্মদ একরামুল হক, মুহম্মদ সোলাইমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিব্বুল ইসলাম মামুন, মোশারফ হোসেন, জমিয়াতুস সালেকিনের প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা আবু জাফর, যুবসালেকিনের নেতা অধ্যাপক আ. জ. ম. সাইফুল্লাহ, অধ্যাপক মোশারফ হোসেন মিশু প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ৭ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এইসময় নারী আন্দোলন কর্মীদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি ।
স্টাফ রিপোর্টার কুষ্টিয়া থেকে জানান, ফেয়ার কুষ্টিয়ার আয়োজনে বুধবার শহরের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সর্বাত্মক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে জানান, মাগুরায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে “পরিবর্তনে আমরাই” নামে একটি সংগঠন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান. চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকালে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে জেলার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন পালন করেছে। এছাড়া কুলাউড়ায় মানববন্ধন করেছে সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান নওগাঁয় মানববন্ধনও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শহরের মুক্তির মোড়ে প্রধান সড়কে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা জজকোর্ট এলাকার আইনজীবী সমিতির সামনে হৃদয়ে শরীয়তপুর নামক সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহরের রাজপথ। গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের চৌরাস্তায় এসব স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ র্যালি ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে ঠাকুরগাঁয়ের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবিতে গতকাল বুধবার বিকেলে টঙ্গী প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গাজীপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে ১২টি সংগঠনের যৌথ আয়োজনে ধর্ষন বিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন সংগঠন ধর্ষণ বিরোধী নানা স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, প্লাকার্ড ফেস্টুন প্রদর্শন করেন।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদাতা জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানার সামনে দাউদকান্দির বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে এসে জড়ো হয়। এ সময় ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পরে।
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রক্ত সৈনিক সংগঠনের সভাপতি নাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ছাত্র ও জনতার পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।