পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর সায়েদাবাদে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত গ্যারেজ রয়েছে। নাম সায়েদাবাদ কেন্দ্রীয় মোটর গ্যারেজ। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের গাড়িগুলো রাখা হয়। এ জন্য ওই গ্যারেজে একটি টিনসেট লম্বা ঘর রয়েছে। ঘরটি সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মেরামত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা আরেকবার মেরামত করেছিলেন। এরপর আর মেরামত করা হয়নি। এমনকি গ্যারেজটির ভেতরের রাস্তা ও চারপাশের দেয়ালগুলোর অবস্থাও বেহাল। সংস্কারের অভাবে দেয়ালগুলো ভেঙে গেছে। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা হলে মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়। সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
গতকাল সরেজমিন গ্যারেজে গিয়ে দেখা গেছে, টিনসেট ঘরটি ভেঙে গেছে। এছাড়াও ঘরের ভেতর পাকা করা মেঝেটাও ভেঙে গেছে। আর গ্যারেজের ভেতরে ছোট-বড় অনেক গর্ত রয়েছে। গর্তে জমে আছে পানি। গ্যারেজের উত্তর দিকে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যারেজের দেয়াল ঘেষে ফুটপাতের ওপর অবৈধভাবে কয়েকটি ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ওইসব ঘর বাস কাউন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়াও উত্তর-পশ্চিম কোনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যারেজের দেয়াল ঘেষে কয়েকটি দোকান রয়েছে। সেগুলোতে চা ও রকমারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দোকানগুলোর পরের অংশ, অর্থাৎ গ্যারেজের পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখা গেছে, দেয়ালের নিচের অংশ ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে মাদকসেবীরা ভেতরে নিরাপদে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ওই গ্যারেজে মাদক সেবীদের আনোগোনা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় দোকানিদের।
তারা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রতিদিন বিকেল থেকে উঠতি বয়সী ছেলে ও মাদক ব্যবসায়ীরা গ্যারেজের আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্যারেজের ভেতর ও বাইরে নিরাপদে মাদক সেবন ও বিক্রি শুরু করে তারা। এভাবে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কার্যক্রম।
এদিকে গ্যারেজটির দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে গ্যারেজের দেয়াল ঘেষে কয়েকটি বাস রাখা আছে। আর ওইসব বাসের পাশেই লোকজন দাঁড়িয়ে গ্যারেজের দেয়ালে প্রসাব করছেন। এছাড়া গ্যারেজের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কয়েকটি চায়ের দোকান রয়েছে। তবে চায়ের দোকানগুলোর পাশে কয়েক ফুট জায়গায় রশি সাটানো রয়েছে। দোকানিরা জানান, কাছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হওয়াতে সেই এলাকায় লোক সমাগম অনেক বেশি। তাই প্রতিদিনই পথচারী ও বাস চালক-হেলপাররা এসে গ্যারেজের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে প্রসাব করেন। এতে ওই এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রসাব না করার জন্য রশি সাটানো হয়েছে।
এদিকে, সায়েদাবাদ কেন্দ্রীয় মোটর গ্যারেজের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ মুখেই আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বিশ্রামের জন্য একটি রুম রাখা হয়েছে। এছাড়া লম্বা একটি টিনসেট ঘর রয়েছে। সেই ঘরটির পশ্চিম দিকে পুরোটাই ভাঙা রয়েছে। এছাড়া ঘরের ভেতরে এবং বাইরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের গাড়িগুলো রাখা রয়েছে। খোলা জায়গায় গাড়িগুলো রাখার কারণে নষ্ট হতে চলেছে গাড়ির যন্ত্রপাতি। শুধু নষ্টই নয়, কোন কোন সময় এসব যন্ত্রপাতি হারিয়েও যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিতে আসা আশিক নামের এক চালক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ দিন থেকেই গ্যারেজটির অবস্থা বেহাল। গ্যারেজের ভেতরে রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গ্যারেজে গাড়ি পরিস্কার করতে এসে উল্টো গাড়িগুলো নষ্ট করে নিয়ে যাই। এ গ্যারেজের উপর কারো নজর পড়ে না। আপনার মতো অনেকেই আসে নিউজ করার জন্য। পরবর্তীতে তারা থেমে যায়।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, বাস, জীপ, পিক-আপ, নগর উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের ট্রাক ও ট্রাক্টর, পানি সরবরাহ কাজে ব্যবহার্য ওয়াটার ভাউচার এক্সেবেটর, পে-লোডার, বীম লিফটার মিলে গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। ওইসব গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সায়েদাবাদে গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে গ্যারেজের বেহাল দশার কারণে অনেক গাড়ি রাস্তায় রাখা রয়েছে। যত্রতত্র এসব গাড়ি রাখার কারণে যেমন গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে; তেমনি ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
গ্যারেজের সামনের রাস্তা ও গোলাপবাগ চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এছাড়া হানিফ ফ্লাইওভারের আশপাশে মেইন রাস্তায় গাড়ি রাখার কারণে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
সায়েদাবাদ কেন্দ্রীয় মোটর গ্যারেজের উল্টো পাশে কয়েকটি বাস কাউন্টার রয়েছে। কাউন্টারগুলোর পাশে মনির হোসেন নামে এক চা বিক্রেতা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর থেকে এখানে চা বিক্রি করি। প্রতিদিনই সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করতে দেখি। পার্কিং করায় নিয়মিত যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া সন্ধ্যা নামার পর থেকে গ্যারেজের ভেতরে এবং বাইরে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশের ময়লার গাড়ির এক চালক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ আছে। কিন্তু গ্যারেজের ভেতরে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এছাড়া গ্যারেজের ভেতরের রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে কেউ গাড়িগুলো গ্যারেজে নিতে চায় না। ডিউটি শেষে গাড়িগুলো মেইন রাস্তায় পার্কিং করে চলে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নে সভাপতি বেলায়েত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দীর্ঘ দিন থেকে গ্যারেজটি মেরামত করা হয়নি। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন অনেকবার আশ্বাস দিলেও মেরামত হয়নি। তবে খুব শিগগিরই মেরামত কাজের জন্য বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্শেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সায়েদাবাদ কেন্দ্রীয় মোটর গ্যারেজের মেরামতের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ট্রেন্ডার হওয়ার পর কাজ শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।