পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঘোষণার পর ৫ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনও ঋণ প্রদানে গড়িমসি করছে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ সময়েও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কোনো রকম সহায়তা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে দুর্ব্যবহারেরও শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অথচ করোনার ক্ষতি পুষিয়ে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যাতে অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। ক্রেতা, উৎপাদক সবাই টিকে থাকতে পারে। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকেও বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়েছে। এসব সুবিধা নিয়ে এখন ব্যাংকগুলো চুপচাপ বসে আছে। এমনকি প্রকৃত উদ্যোক্তারা তহবিল সঙ্কটে হা-হুতাশ করলেও ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের কোনো ঋণ প্রদান করছে না। এমনি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এক টাকাও ঋণ প্রদান করেনি এমন ২৪ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। আর যৎসামান্য ঋণ প্রদান করেছে এমন ২৫টি ব্যাংককে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই শতভাগ ঋণ প্রদান করতে হবে। অন্যথায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সতর্ক করা হয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং সরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক রয়েছে। অপরদিকে শোকজ করা হয়েছে ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দুইটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৭টি বিদেশি ব্যাংককে।
দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জানান, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এখন তহবিল সঙ্কটে রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে তিন মাস একটানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু এর পরেও উদ্যোক্তা শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ করেছেন। অনেকেই নিজের প্রান্তিক মূলধনটুকুও ব্যয় করেছেন শ্রমিকের বেতনভাতা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধে। এখন মূলধনের অভাবে অনেকেই ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারছে না। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানের জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকে নানাভাবে ছাড় দিয়েছে। করপোরেট কর হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দুই দফায় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার সুদহার অর্থাৎ রেপোর হার কমিয়ে দিয়েছে। পরিচালনা পরিষদে একই পরিবার থেকে চার জন পরিচালক রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম সুদে তহবিল পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পর এখন তারা ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করতে গড়িমসি করছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একাধিকবার ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করার পরেও তারা তহবিল ছাড় করছে না ব্যবসায়ীদেরকে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতাই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। অথচ বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা পেলে অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারলে আবারো অনেক কারখানা উৎপাদনে যেতে পারতো। অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতেন।
যদিও এর আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে যেসব ব্যাংক গড়িমসি করছে বা অনীহা দেখাচ্ছে, সে সমস্ত ব্যাংকে সরকারি আমানত না রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করছেন তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বার বার তাগিদ দেয়া হলেও তারা এ বিষয়ে তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ২৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি এমডিদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই প্রণোদনা প্যাকেজের শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকই এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি। তার বড় প্রমাণ হলো ২৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক টাকাও ঋণ প্রদান করেনি। আর ২৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যৎসামান্য ঋণ প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ আগস্টভিত্তিক পরিসংখ্যান মতে, ৬টি সরকারি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিতরণ করেছে মাত্র ৪১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বিতরণ করেছে ৯৭১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। অথচ এরই মধ্যে প্রনোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণার প্রায় ৫ মাস পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় এক ডজন ব্যাংক রয়েছে যারা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিতরণ করেছে।
আর দুটি বিদেশি ব্যাংক বাদে অপর সাতটি ব্যাংক এক টাকাও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। সবমিলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে এক টাকাও বিতরণ করেনি এমন ২৪ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। আর যেসব ব্যাংক যৎসামান্য ঋণ বিতরণ করেছে এমন ২৫টি ব্যাংককে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ বক্তব্য পাওয়া না গেলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।