পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তালে ছাত্রলীগ। কিন্তু জাতে তারা পাক্কা অপরাধি। রাজনীতির পদ-পদবীর ভারে তারা বেপরোয়া। ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া রয়েছে মাথার উপর রাজনীতিক বড় ভাই তথা গডফাদার। সেকারনে ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেই অপরাধের চাষ দীর্ঘ করেছে তারা। অবশেষে দীর্ঘ কুকর্ম ফাঁস হলো এক বালিকা বধূকে গণধর্ষণের মধ্যে দিয়ে। বলছি এ ঘটনার অন্যতম হোতা ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, শেখ মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল হাসানে কথা।
ছাত্রলীগের এই সোনার ছেলেরা একদিনেই ধর্ষক হয়ে উঠেনি। ধর্ষণ ঘটনার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডের কু-কীর্তি। সাইফুর, রনি ও রবিউল ক্যাম্পাসে ছিল ক্ষমতার তাপে বেপরোয়া। শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজ দলের কর্মী ও কলেজের পাশর্^বর্তী টিলাগড় এলাকার ব্যবসায়ীরাও তাদের অব্যাহত হয়রানিতে হয়েছেন নাজেহাল। চুপ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই তাদের। কারণ তারা ছাত্রলীগের নেতা। কোন ছাত্রীর প্রতি তাদের বদ খেয়াল গেলেই শুরু হতো ইভটিজিং ও নির্যাতন। নীরব থাকায় ছিল তখন প্রতিবাদের ভাষা। কারণ ক্যাম্পাসে কেবল ছাত্রলীগ। একক প্রভাবে জবাবদিহিতার উর্ধ্বে তারা। তাই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে অনেক মেধাবী ছাত্রীর। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কলেজে বেড়াতে আসা তরুণীদের ধর্ষণ ছিল নৈমিত্তিক কাজ। ক্যাম্পাসে আধিপত্য থাকায় দলের ‘বড় ভাই’দের কাছেও ছিল তাদের বিশেষ কদর। বালিকা বধূর স্বামী মাইদুল ইসলাম শাহপরান থানায় দায়েরকৃত মামলা শাহ মাহবুবুর রহমান রনির বিরুদ্ধে ৪৪ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি সুনামগঞ্জ দিরাইয়ের রবিউল। সে তার সহযোগীদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াত। আদাব সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করতো সে। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ-ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, মিল না দিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন এই ধর্ষক রবিউল। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ধরে নিয়ে মারধর করা হতো এবং এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হতো।
একই সাথে এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ২/৩ জন ছাত্র হোস্টেল ছেড়ে যেত বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া সিনিয়র কিংবা জুনিয়র তাদের কথার বাইরে গেলেই মারধর করত তারা। তাদের নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কারণে প্রতিদিন বিকেলে চিরায়িতভাবে শত শত দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। কিন্তু ক্যাম্পাসে কথিত শিক্ষিত হায়েনাদের বিচরণ যে এতোই বেপরোয় যে কোন দম্পতি বা প্রেমিকজুটিকে পেলে সাইফুর ও রনি তাদের সহযোগীদের নিয়ে চড়াও হতো প্রায়ই। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করতো তারা। ছিনতাই করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতেরও ঘটনা ঘটেছে বহুবার। সন্ধ্যার পর বা রাতে ক্যাম্পাসে প্রেমিকজুগল পেলে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাইফুর-রনি চক্র তাদের তুলে নিত পাশর্^বর্তী ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। আত্মসম্মানের ভয়ে কেউই মুখ খুলতো না। রাতে টিলাগড়-বালুচর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনকে ছাত্রাবাসে ধরে এনে নির্যাতন ও ছিনতাই করতো তারা। এসব অপকর্মে সাইফুর ও রনির সহযোগী ছিল গণধর্ষণ মামলার আসামী অপর চার ছাত্রলীগ ক্যাডার তারেক, রবিউল, মাহফুজ ও অর্জুনসহ আর কয়েকজন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসকে কেন্দ্র করে সাইফুর ও রনি গড়ে তুলে টর্চার সেল। হোস্টেল সুপারের বাংলো দখল করে থাকতো সাইফুর। ভয়ে অন্যত্র থাকতেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। হোস্টেলের নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষ ও বাংলাতে সাইফুরের নেতৃত্বে বসানো হয় ‘শিলং তীর জুয়া’র আসর।
এছাড়া প্রতিদিন রাতে বসতো মাদকের আসর। করোনা পরিস্থিতির কারণে হোস্টেল বন্ধ থাকায় নিজের দখলে থাকা হোস্টেলের রুমকে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার আখড়ায় পরিণত করে সাইফুর। গণধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সাইফুরের দখলে থাকা হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে হয়েছে মামলাও। ২০১৩ সালে কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চাঁদাবাজি শুরু করে সাইফুর ও তার সহযোগীরা।
এতে বাধা দেওয়ায় নিজদলের কর্মী ছদরুল ইসলামের বুকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুর। গুরুতর আহত ছদরুলকে সিলেট থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। পরে নেতাদের চাপে ছদরুল বাধ্য হয় আপোষ করতে হয় তার মামলা। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কলেজে মেয়েদেরকে প্রেমের প্রস্তাব দিত শেখ মাহবুবুর রহমান রনি। ছাত্রীদের মোবাইল নম্বরও জোর করে আদায় করতো সে। প্রস্তাবে রাজি না হলে সে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করতো তাদের। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায় আড়াই বছর আগে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রনি।
কিন্তু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় সে। শাহ রনি ও তার সহযোগী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি তারেক নিজেদেরকে র্যাব-পুলিশ পরিচয় দিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। র্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাস্তা থেকে লোকজন অপহরণ করে ছাত্রাবাসে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাইফুর ও রনি চক্রের হাতে ক্যাম্পাসে একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। কখনো কখনো তারা হুংকার ছেড়ে বলতো, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, টিলাগড়ে ছাত্রলীগ, থানায় ছাত্রলীগ, চুপ থাক শালারা। তাদের কথায় চুপ ছাড়া উপায় ছিল না ভূক্তভোগীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।