Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাকরি হারাচ্ছে ২৬ জন

পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট মাদকাসক্তদের জন্য সুস্পষ্ট মেসেজ, আমরা কাউকে ছাড় দেব না : ডিএমপি কমিশনার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদক ব্যবসায় জড়িতদের শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গ্রেফতার অভিযানসহ নানা পদক্ষেপ দীর্ঘ দিনের। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে সম্প্রতি ডিএমপির পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাদকাসক্ত মুক্ত করতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। আর এ লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একশ’ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন সদস্যের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যাওয়ায় তাদের চাকরিচ্যুতের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ২৬ জনের মধ্যে সার্জেন্ট একজন, এসআই ৪ জন, এএসআই ৩ জন, নায়েক একজন ও কনস্টেবল ১৭ জন। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল শনিবার ডিএমপির ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের ডিসি কার্যালয়ের উদ্বোধন শেষে পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, মাদকের বিষয়ে আমরা সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করিয়েছি। এর মধ্যে ২৬ জন সদস্যের পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছি। তাদের চাকরিচ্যুতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাদকাসক্তদের জন্য সুস্পষ্ট মেসেজ, আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রক্ষক হয়ে ভক্ষক এই দিন এখন শেষ। আইনের পোষাক পড়ে মাদক ব্যবসা বা মাদক সেবনের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস আগেই ডিএমপির সকল ইউনিটে ম্যাসেজ দেয়া হয় যে, মাদক আসক্ত বা মাদক থেকে অবৈধ সুযোগ নেয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর পর থেকেই শুরু হয় গোপন তদন্ত।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ১০০জন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো করানো হচ্ছে। যেসব পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা এখনও সংশোধন হবেন না, তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। মাদকাসক্ত বা মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

ডিএমপি সূত্র জানায়, স¤প্রতি ডিএমপির হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রত্যেকটি ইউনিট ও বিভাগের ডিসিদের চিঠি দিয়ে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত সদস্যদের তালিকা করতে বলা হয়। বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের ডিসিরা তালিকা পাঠালে তা যাচই-বাছাই করে ১০০ জনের সন্দেহভাজন একটি তালিকা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সন্দেহভাজনদের ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে ডেকে এনে তারা সত্যিই মাদকাসক্ত কিনা তার জন্য ডোপ টেস্ট করানো হয়।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে ট্রাফিকের ডিসির নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, আমাদের বিশ্বাস এভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট মেসেজ যাবে যে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। আমাদের এই উদ্যোগের ফলে অনেকে ভালো হয়েছে এবং এ রাস্তা ফিরে এসেছে। পুলিশ সদস্য যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বা মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগিতা করছে সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনও রকম শিথিলতা দেখানো হচ্ছে না।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর ডিএমপির প্রত্যেকটি ইউনিট ও বিভাগে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সকল সদস্যদের বলেছি কেউ যদি মাদকাসক্ত হয় তারা যেন আমার কাছে আসে, তাদের মাদকাসক্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু স্বেচ্ছায় কেউ সাড়া দিয়ে আসেনি। এজন্য ডিএমপি থেকে উদ্যোগ নিয়ে ডোপ টেস্ট করানো হচ্ছে। প্রথম দফায় একশ’ জনের ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। এক মাস পর আবারও বড় আকারে এই প্রক্রিয়া চালানো হবে। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ সন্দেহভাজন হলে তাদেরও ডোপ টেস্ট করানো হবে। আমি এক মাস সময় নিচ্ছি। কারণ কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়েও থাকে, সে যেন নিজে নিজে উদ্যোগ নিয়ে মাদক থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু ডোপ টেস্ট করে ধরা পড়লে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত ধরা পড়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের চাকরীচ্যুত করা হবে। ডোপ টেস্টে ধরা পড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই থানায় কর্মরত ছিল। তাদের প্রত্যেকেই প্রাথমিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ