মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দাবানলে জ্বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওরেগন, ওয়াশিংটন আর ক্যালিফর্নিয়া- আমেরিকার পশ্চিম অংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলই এখন ভয়াবহ দাবানলের কবলে। গত মাস থেকে পুড়ে খাক হয়ে গেছে প্রচুর সম্পত্তি। প্রায় অর্ধ কোটি একর এলাকা পুড়ে যাবার পাশাপাশি গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দাবানলের শিকার হয়ে মারা গেছেন মোট ৩৬ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছে ক্যালিফর্নিয়া থেকে। ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। ওয়াশিংটনে মারা গেছেন একজন। বাকি সব মৃত্যুই ওরেগনের। বাড়ি থেকে শেষ মুহূর্তে বেরোতে না পেরেই পুড়ে মারা গিয়েছেন অনেকে। কিন্তু মৃত্যুর থেকেও প্রশাসনকে এখন বেশি ভাবাচ্ছে নিখোঁজের সংখ্যা। ওরেগনেই এখনও পর্যন্ত খোঁজ নেই বহু বাসিন্দার। ফলে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় গত মাসে শুরু হওয়া দাবানল এরইমধ্যে ৩২ লাখ একর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার অবকাঠামো। ওরেগন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ১৬টি বড় দাবানলের সঙ্গে লড়াই করছে। সেখানকার ৪০ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা দফতর (ওইএম) জানিয়েছে, দাবানলে সেখানে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন রাজ্যটির কর্মকর্তারা। ওরিগনের গভর্নর কেইট ব্রাউন বাসিন্দাদের দাবানল আক্রান্ত এলাকাগুলোর বাইরে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। দাবানলের কারণে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর কোনও কোনও এলাকায় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। কেইট ব্রাউন বাসিন্দাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও লুটপাট ঠেকাতে ওরেগন ন্যাশনাল গার্ড ও ওরেগন রাজ্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন রাজ্যে দমকলকর্মীরা ১৫টি বড় দাবানলের সঙ্গে লড়াই করছেন। এই সপ্তাহের শুরুতে আগুনে সেখানে এক বছর বয়সী একটি শিশু মারা গেছে। দমকলবাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে দু’দিন আগে যে কমলার আভা দেখা গিয়েছিল তার ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে। এটি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করছে।
টানা ক’দিনের আগুনে বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন না বহু মানুষ। ওরেগনের বিভিন্ন এলাকায় দরজায় মোটা তোয়ালে ভিজিয়ে রেখে ধোঁয়া আটকাতে হচ্ছে। আগুনের কালো ধোঁয়ায় রাজ্যের আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। বেশ কিছু বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজে প্রায় ২ হাজার মাইল জুড়ে ধোঁয়ার স্তর দেখা গেছে।
আগামী মার্কিন নির্বাচনে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দাবানলের আগুন। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন না করায় রিপাবলিকানদের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে দাবানল নিয়ে মুখ বন্ধ রাখায় ডেমোক্রেট শিবিরের সমালোচনার মুখে ট্রাম্প আগ্নিনিয়ন্ত্রণে কর্মরত অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তবে দু’পক্ষের বিতর্ক চলমান রয়েছে। তবে দাবানলের পেছনে উষ্ণায়ন দায়ী নয় দাবি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বিজ্ঞানও হয়তো ব্যাপক এ দাবানলের কারণ জানে না। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ‘আবহাওয়ায় অগ্নিসংযোগকারী’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্পকে। নির্বাচনকে ঘিরে জলবায়ু ইস্যু এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বলছে, ওরেগন ও ওয়াশিংটনে দাবানলে ১৫ লাখ একরেরও বেশি এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ওরিগনে ৩০টির মতো দাবানলে ৯ লাখ ৩০ হাজারের বেশি একর বনভ‚মি পুড়েছে। বছরের হিসেবে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ৪১ হাজার ৫১টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৭ লাখ একর এলাকা পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। ২০১৯ সাল জুড়ে ৩৫ হাজার ৩৮৬টি দাবানলে ৪২ লাখ একর ভ‚মি পুড়েছিল। সে হিসেবে চলতি বছর পূর্বের রেকর্ড ভেঙে দাবানল তার আগ্রাসী রূপ আরো বিস্তার করছে।
গত ১৭ আগস্ট উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে ব্যাপক বজ্রপাত হয়। এর ফলে বহু এলাকায় দাবানলের সৃষ্টি হয়। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে ওরেগন, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটনে প্রায় ৪০টি বড় দাবানলে কয়েক লাখ একর একসাথে গ্রাস করে। ওরিগনে হাজার হাজার বাসিন্দা দাবানলের শিখা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর থেকে সরে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় উত্তর দিক থেকে মেক্সিকান সীমান্ত পুরো পথ জ্বলছে। ওয়াশিংটনে গত ১২ অগ্নিকান্ড মরশুমের তুলনায় এ বছর আরও বহু একর জমি আগুনের শিকার হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ট্রাম্প দাবানলে ছারখার হওয়া ক্যালিফোর্নিয়ায় সফরে গিয়ে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘিরে উদ্বেগকে উড়িয়ে দিয়েছেন, সেখানে একজন কর্মকর্তাকে তিনি বলেছেন, ‘(আবহাওয়া) শীতল হতে শুরু করবে’। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়ে সংশয়ী ট্রাম্প এ সঙ্কটের জন্য দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। একই দিন এর আগে ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ট্রাম্পকে ‘একজন আবহাওয়া অগ্নিসংযোগকারী’ বলে অভিহিত করেন। ডেলাওয়্যারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তার প্রতিদ্ব›দ্বী আরও চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকলে ‘আমেরিকাকে আরও জ্বলন্ত অবস্থায়’ দেখা যাবে।
পশ্চিম উপক‚লের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার সময় ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাক্রামেন্টোর কাছে একটি বিরতিস্থলে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইরত রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। এ সময়ও দাবানলের জন্য তিনি দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এখানে একজন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্টের প্রতি ‘বিজ্ঞানকে অগ্রাহ্য না করার’ আবেদন জানান। কিন্তু ওই আবেদন উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘(আবহাওয়া) শীতল হতে শুরু করবে, আপনি শুধু দেখেন, বিজ্ঞান আসলে জানে এমনটি মনে করি না আমি’। ব্যাপক দাবানলের ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তন একটি ফ্যাক্টর কিনা, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিই দায়ী’। অন্যান্য দেশ এমন ব্যাপক দাবানলের মুখোমুখি হয় না বলে দাবি করেন তিনি। ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে যাওয়ার আগেই এ আগুনের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের ডেমোক্র্যাটিক গভর্নররা এই দাবানলে আবহাওয়া পরিবর্তনের ভূমিকার কথা অস্বীকার করার জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।