বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় কুমার নদের অব্যাহত ভাঙনে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। নানা অজুহাতে বালুদস্যুদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, স্রোত ও ট্রলার চলাচলে ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে কুমার নদের পাড়, গৃহহারা হয়ে কাঁদছে নদের পাড়ের মানুষ। এ বর্ষা মৌসুমে এরই মধ্যে দুটি গ্রামের ১২টি বাড়ি ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া দুটি রাস্তা কুমার নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মানুষের যোগাযোগে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। আরও শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে ঝুঁকির মুখে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুমার নদের পাড়ে বসবাসকারি চারটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার গাংকান্দি শাখারপাড় এলাকার রাস্তাটি ভেঙে কুমার নদে চলে গেছে। এ ছাড়াও লুৎফর হাওলাদার, ছানোয়ার মল্লিক, শাহ আলম মল্লিকের, ইশিবপুর এলাকার জাহেদা বেগম, বিকাশ রায়, সিরাজ মল্লিকের এবং বদরপাশা গ্রামের রেজাউল ফকিরের বসতঘর নদে বিলীন হয়ে গেছে। টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান নামক স্থানে পাকা রাস্তাটি নদে বিলীন হয়ে গেছে। পাশে জমির ভেতর রা¯তা করে কোনোরকমে আসা-যাওয়া করছে মনুষ। নদীর পাড়ের মানুষরা জানায়, নদীর দুইপাড়ের ১২টি গ্রামের প্রায় একহাজার পরিবার বসবাস করে। নদের ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে কিছুসংখ্যক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পরিবর্তন হয়ে গেছে তাদের বাপ দাদার ঠিকানা। এক শ্রেণির স্বার্থাস্বেষী সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে বড় ও ছোট ড্রেজার মেশিন দিয়ে সারা বছর কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন ও ব্যবসা করে লাভবান হয়ে আসছে। এতে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক। জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে অনেকেই। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নানাভাবে প্রশাসনকে বাধাগ্রস্ত করায় বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। শংকরদী গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এমারত ফকির জানান, আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। গেল বছর এখান থেকে জোর করে বালু কেটে নিয়ে গেছে বালু ব্যবসায়ীরা। এ বছর আমার বাড়িসহ চারটি পরিবারের বাড়িঘর নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেল। এখন আমি কীভাবে বাঁচব এবং মাথা গোঁজার ঠাঁই কীভাবে বানাব। চরমস্তফাপুর গ্রামের হায়দার হাওলাদার জানান, চরমস্তফাপুর বাজারসহ মসজিদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মল্লিককান্দি শাখারপাড় গ্রামের হাসান মাতুব্বর জানান, গেল বছরেও বাড়িঘর ভেঙেছে, এ বছরও ভয়াবহরূপে ভাঙছে। এ বছর যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বছর আরও বহু বাড়িঘর নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
মেবানকান্দির লাবলু মুন্সী জানান, তার ৩৩ শতক জায়গায় রোপিত গাছের বাগান, আলমগীরের বাড়ী ও তিনটি ঘর নদী খেয়ে ফেলেছে। কালীবাড়ী এলাকার কালাম মাতুব্বর জানান, বিশ্বাম্বরদী, নিলাম্বরদী, মহেন্দ্রদী, হরিদাসদী, মল্লিককান্দি, গাংকান্দি, শংকরদী, কালীবাড়ী, হরিদাসদী, চরমস্তফাপুর বাজার এলাকা ব্যাপকভাবে ভাঙছে। বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। গোয়ালবাথান এলাকার বায়েজিদ মেম্বার জানান, এর আগে টেকেরহাট-হরিদাসদী রাস্তার গোয়ালবাথান নামক স্থানটি একরাতেই ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একবছর পার হলেও পুনর্র্নিমাণ হয়নি। এ বছরও আবার ভাঙছে। নদীতে পানি টান দিলে (কমলে) আরও ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলাধীন ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের পাশে ছাগলছিড়া এলাকায় পায়রা প্রজেক্ট ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড স্টেশন নির্মাণে ৬০ একর জমি প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় ভরাট করার জন্য প্রায় সারে ৪ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে এ নদী থেকেই।
এ ব্যাপারে ইশিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান হিরু জানান, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
রাজৈর ইউএনও সোহানা নাসরিন বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি আশাকরি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।