Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চীনকে গুরুতর হুমকি মনে করছে পেন্টাগন

দ্য আমেরিকান কনজারভেটিভ | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ক্রমপরিবর্তনশীল বিশে^ আমেরিকা তার প্রভাব অক্ষুণœ রাখতে সব ধরনের সম্ভাব্য বিপদ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে আসছে এবং বর্তমানে পেন্টাগনের চোখে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ২০০০ সালের তাত্তি¡ক সম্ভাবনা থেকে পরিবর্তিত হয়ে ২০২০ সালের গুরুতর সামরিক হুমকি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবে, চীনের বিগত ২ দশকের সামরিক উত্থান দমাতে এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি আমেরিকার পক্ষে শক্তি প্রদর্শন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হিসাবে পরিগণিত হবে বলে মনে করছে পেন্টাগন।

২০০০ সালে কংগ্রেসের কাছে ডিওডি’র প্রথম বার্ষিক প্রতিবেদনে চীনের সশস্ত্র বাহিনীকে বড় আকারের তাত্তি¡ক সামরিক শক্তি হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছিল যে, চীনের একটি ‘শক্তিশালী, আধুনিক, ঐক্যবদ্ধ এবং ধনী দেশ’ হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা সত্তে¡ও দেশটির আধুনিক সমরনীতির জন্য ক্ষমতা, সংগঠন এবং প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। কিস্তু সেই তত্ত¡কথায় থেমে থাকেনি চীন। গত ২ দশকের মধ্যে চীনের অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। যদি ক্রয় শক্তির ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক সমাজ তৈরির মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে চীন আমেরিকার ঠিক পর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে এবং বেইজিং বিশ^ব্যাপী অসাধারণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে।

দেশটি তার নতুন ধনসম্পদ প্রবাহের সুবিধা নিয়েছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে সামরিক শক্তির বিস্তার ঘটিয়েছে। যদিও বেইজিং এখনও আমেরিকার চেয়ে সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে, তবে ব্যবধানটি যথেষ্ট পরিমাণে কমে এসেছে। বর্তমান চীন হেলাফেলা করার মতো কোনও শক্তি নয় এবং সে লক্ষ্যেই নিজেকে বিকশিত করেছে। চলতি বছরের পেন্টাগন প্রতিবেদনের হিসাবে, চীন প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিজেকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণের জন্য বিগত ২ দশক ধরে সম্পদ, প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক প্রয়োগ ঘটিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে, চীন ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা হ’ল আঞ্চলিক, যার অর্থ চীনের প্রত্যক্ষ প্রতিরক্ষা এবং আশেপাশের অঞ্চলে আধিপত্য কায়েম। বেইজিংয়ের এ সম্প্রসারিত বৈশ্বিক ভ‚মিকা তার বিদেশী মিত্রের সংখ্যা এবং গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ফলে চীনকে পরাস্ত করা আমেরিকার জন্য আর সহজ কোনো কাজ নয়।

তবে, হুমকি হিসেবে চীন অনন্য প্রকৃতির। দেশটি সরাসরি আমেরিকার বিরুদ্ধাচরণ করছে না। বরং চীন বিশ্ব ব্যবস্থায় চমৎকারভাবে সুসংহত এবং বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সমাজ হিসাবে বিস্তার লাভ করছে যা, আমেরিকার আধিপত্য নির্ম‚ল করে দিতে পারে এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জটি মূলত চীন উপক‚লে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে ওয়াশিংটনের অবিচ্ছিন্ন আধিপত্যকে কেন্দ্র করে। ফলে, বিশ^ মোড়ল হিসাবে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা (ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথেও!) বিশেষত এশিয়ায় আমেরিকার আধিপত্য ধরে রাখা ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

যে কোনও জাতির জন্য সর্বাধিক কৌশলগত হুমকি হ’ল পারমাণবিক শক্তি। আজ কেবল রাশিয়ার আমেরিকার সমান পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে। তবে, বেইজিংও তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং পারমাণবিক পরাশক্তির স্থিতির দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এ পরিস্থিতিতে এটিই আশ্চর্যজনক যে, বেইজিং আমেরিকাকে আক্রমণ না করে নিজের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন রোধে মনোনিবেশ করছে।

এটি লক্ষ্যণীয় যে, চীনের আত্মরক্ষামূলক আচরণ ওয়াশিংটনের আক্রমণ করার ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। চীনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, বাস্তবে সেগুলি মূলত আমেরিকান আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রতিবন্ধক হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে। বেইজিংয়ের অত্যাধুনিক নৌবহর আত্মরক্ষা এবং আক্রমণ সম্ভাবনা উভয়ই দেখায়, যদিও চীন তার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে উভচর আগ্রাসন চালানোর সীমিত সক্ষমতা অর্জন করেছে। যদিও আমেরিকা সামগ্রিকভাবে তার শক্তি বজায় রেখেছে, তবে চীনও এশিয়াতে মনোনিবেশ করেছে। এর জবাবে ওয়াশিংটন জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে সহায়তার সন্ধান করতে পারে। পেন্টাগনের প্রতিবেদনে আরও বিশদ রয়েছে, যা আমেরিকাকে একবিংশ শতাব্দীতে টিকে থাকার জন্য এক বিস্ময়কর সতর্কবার্তা দিয়েছে। আমেরিকার চ‚ড়ান্ত চ্যালেঞ্জ হ’ল এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে চীনকে শক্তি প্রদর্শন করাটা অতন্ত ব্যয়বহুল ব্যয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

চীনকে ঠেকাতে তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মতো উদ্দেশ্যগুলো আমেরিকার জন্য যতই যুক্তিযুক্ত হোক না কেন, তা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। ওয়াশিংটনের ওপর ব্যয়ের আরও বৃদ্ধি পাবে যেহেতু আমেরিকান অর্থায়নগুলি আগামী বছরগুলোতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বেইজিংয়ের সাথে ডিল করা আগামী মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। পরিবর্তিত বিশ্বে ওয়াশিংটন আর ধরে নিতে পারে না যে, তারাই সর্বদা পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক পরিশীলিত সামরিক শক্তি হিসেবে প্রাধান্য ধরে রাখবে। চীনের সাথে চেক্কা দিতে হলে আমেরিকাকে ব্যাপক সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার সাথে সামনের দশকগুলিতে একটি সাশ্রয়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

 

 



 

Show all comments
  • মশিউর ইসলাম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৮ এএম says : 0
    কয়েক দশক ধরে গরিব দেশগুলোর ভোক্তাদের জন্য চীনের সস্তা পণ্য শখ-আহ্লাদ পূরণে বড় সহায়। টিভি-ফ্রিজের জগতে চীনা জাদু শুরু না হলে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এসব সহজলভ্য হতো না। অনেক দেশের ‘ডিজিটাল বিপ্লব’ সম্ভব হয়েছে মোবাইল সেটের জগতে চৈনিক সুনামির কারণে। কিন্তু গরিবের সেই সামান্য ডিজিটাল জীবন হুমকিতে পড়েছে এখন। সাম্প্রতিক চীন-ভারত উত্তেজনাকে যদি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতার এশীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়, তাহলে এ–ও মানতে হয়, এর তাৎক্ষণিক শিকার ভারতের মতো দেশের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ক্রেতারা।...... গরিব, স্বল্প আয় এসব বলতে বলতে আর থাকতে না পেরে অন্য কেউ যদি আগে বলে দেয় তরিঘড়ি নামটা নিয়ে প্রথম হলেন আর মন হ্যাপি হ্যাপি। যাইহোক ভারত এলার্জিটা কিন্তু বেশ কড়া, ভোগার মতোই!
    Total Reply(0) Reply
  • হোসাইন এনায়েত ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৮ এএম says : 0
    আশা করি সবপক্ষেরই শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৯ এএম says : 0
    ট্রাম্প উইঘুরদের বিষয়ে কথা বললে আজো মুসলমানদের কাছে এরাই ঘৃনীত। চীন মুসলমানদের অত্যাচার করলেও এদেশের মুসলমানদের মধ্যে কোন রকম কোন উচ্চবাচ্য বা দূতাবাস ঘেরাও করার দরকার নেই এখন আর। যদিও ভারত ও হতো তাহলে চেতনার আগুন জ্বলে উঠতো।
    Total Reply(0) Reply
  • বিপুলেন্দু বিশ্বাস ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৯ এএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভণ্ড দেশ এ বসুধায় আর দ্বিতীয়টি নেই। অনেক দেশেই সামরিক শাসকদের শর্তহীন সমর্থন দিলেও হংকংয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আনতে তার দরদ উথলে উঠছে। আবার এখন তাইওয়ানকে টার্গেট করা হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগরে নতুন ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। হিপোক্রেসি কো ভি সীমা হোতা হ্যাঁয়!
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের আহমেদ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৯ এএম says : 0
    সি চিন পিং তো কোন খ্যাপাটে নেতা না, যা করছেন ঠান্ডা মাথায় করছেন। তিনি সফল হবেন কিনা তা ভবিষ্যতের বিষয়; আন্তর্জাতিক কূটনীতি আর বাণিজ্যে এতটুকু ঝুঁকি তো নিতেই হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২০ এএম says : 0
    এই জিনিষ আরও বাড়াতে হবে । সারা দুনিয়াতে চীনের দ্রব্য নিষিদ্ধ করা দরকার । যে দেশ নিষিদ্ধ করবে না তার ওপরেও ব্যাবস্থা নিতে হবে । চীনকে একঘরে করার সময় এসে গিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed Rasel ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫০ পিএম says : 0
    Ami muslim!
    Total Reply(0) Reply
  • elu mia ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৪৩ পিএম says : 0
    চিন আমেরিকা,রাসিয়া,ইনডিয়া একটা আরেকটা রে ধংশ করুক তাতে মুসলিম দের কোন ক্ষতি হবেনা।এগুলি সবি মুসলিম দের সত্রু।এদের কারো প্রতি দড়দ দেখানর দরকার নাই।আমার অবাক লাগে যখন কিছু অবুঝ মুসলিম আবেগের তারনায় এই কাফের দের মধ্য থেকে কাওকে সাপোর্ট করে। মুসলিমদের এইসব কাফের দের সাহায্যর দরকার নাই।মুসলিমদের ৫০ টার উপর দেশ আসে।অরা সবাই একত্রে হলেই হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ