Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা কমেনি, সতর্কতা জরুরি

| প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে পরস্পর নিরাপদ (কমপেক্ষ তিন ফুট) দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? বাংলাদেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ হাট-বাজারে গেলে যা পরিলক্ষিত হয়, তাতে মনে হয়, করোনাভাইরাস নামক ঘাতক জীবাণু বিশ্বের প্রায় তিন কোটি মানুষকে ঘায়েল করে প্রায় নয় লাখ জীবন প্রদীপ যে এরই মধ্যে নিভিয়ে দিয়েছে, তা যেন নাটক-সিনেমায় দেখা অবাস্তব কাহিনী। তিন ফুট দূরে থাক, তিন মিলিমিটার দূরে থাকারও সাধ্য কি নেই? একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কাধাক্কি এবং ঘষাঘষি ঘটেই চলেছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই!
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা মহামারীর ভয়াবহতা অনেকটাই যেন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কোরবানির পশুর হাট থেকে শুরু করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া পর্যন্ত নানাভাবে করোনাভাইরাসজনিত সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় মানুষের মধ্যে শৈথিল্য দেখা দেয়। এর ফলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ঈদের পর দেড় মাসের মত সময় পেরিয়ে এখন সরকারিভাবেই কোভিড-১৯ মহামারীর ব্যাপারে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন আসুক বা না আসুক কোভিড-১৯ বাংলাদেশ থেকে এমনিতেই চলে যাবে। ‘দেশে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমেছে’ উল্লেখ করে আনন্দও প্রকাশ করেন তিনি। অথচ বাস্তবতা সম্পর্ণ ভিন্ন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেদিন এমন মন্তব্য করেন, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ। ওই সময়ে ১২ হাজার ৮৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৪৪ জন। মারা যান ৩৪ জন। এরও আগের ২৪ ঘণ্টার মারা গেছেন ৪৪ জন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায়ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪০-এর উপরে। আসলে টেস্ট কমিয়ে দিয়ে শনাক্তের হার কম দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সংক্রমণের হার এই কদিন আগেও অনেক দিন যাবত ২০ শতাংশের উপরেই ছিল, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিপজ্জনক মাত্রা। মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর সরকারিভাবে করোনার টেস্টও কমেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, করোনা পরীক্ষার কেন্দ্রে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন সন্দেহযুক্ত করোনা আক্রান্তরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মোট করোনা পরিক্ষাও বাড়ছে না। এ অবস্থায় মন্ত্রী কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে এমন মন্তব্য করলেন সেই প্রশ্ন সামনে আসে। মন্ত্রীর বক্তব্যের যথার্থতা ও বাস্তবতা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি দৈনিক পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ( ডব্লিউএইচও ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হকের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়। অধ্যাপক ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এমনিতে কিভাবে করোনা চলে যাবে তা বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় না এমনিতেই যাবে। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানা, সচেতন থাকা, এগুলো তো করতেই হবে। একমাত্র ভ্যাকসিন যদি আসে, সবাইকে দিতে পারলে হয়তো সুরক্ষা হবে। আমাদের জন্য ভ্যাকসিন অবশ্যই দরকার। অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি রাজনৈতিক বক্তব্য। বিজ্ঞানের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞান বলছে, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে। ডব্লিউএইচও’র মতে, যেসব দেশে করোনা সংক্রমণের হার বেশি, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সুতরাং আমাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা দরকার। যেটা বাংলাদেশে প্রথম থেকেই ছিলনা এবং এখনো নেই। কোভিড-১৯-এর মতো একটি ভয়াবহ মহামারী যেটিকে অনেকে বিশ্বযুদ্ধের সমতুল্য বলে অভিহিত করছেন, সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মনে হয় বাংলাদেশ সরকারের কোনো পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল নেই। মন্ত্রী দাবি করছেন, তাদের সাফল্যের কারণেই করোনা আপনা আপনি চলে যাবে। এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য কেবল দেশের জন্য ক্ষতিকরই নয় বরং রীতিমতো জনস্বার্থবিরোধী। কারণ, এর ফলে সারা দেশে মানুষের মধ্যে এমন বার্তা যাবে যে, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আর প্রয়োজন নেই। বর্তমানে সাধারণের মধ্যে এসব বিষয়ে যে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে; সেটি আরো ব্যাপকতর হলে ভবিষ্যতে সংক্রমণ বেড়ে দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠলে তার দায় কে নেবে? সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর ৯ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শতকরা ৭৮ ভাগের কোনো উপসর্গ নেই। একই অবস্থা সারা দেশে হলে পরিস্থিতি সামলানো দায় হবে। ইউরোপে আবারো করোনা প্রকোপ বাড়ছে। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে ইতালিতে, ফ্রান্সে। বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি হোক, সেটি কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। অন্যথায় সবাইকে ইউরোপ-আমেরিকার মতো রাস্তায় অজস্র লাশ দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
শিক্ষক - কলামিস্ট,
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন