পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যেখানে পানি সেখানেই মাছের অস্তিত্ব। প্রাকৃতিক উৎসের মিঠা পানির দেশি মাছ পুষ্টির আঁধার। পাবদা, পুঁটি, ট্যাংরা, খলসে, চ্যাং, রয়না, কৈ, মাগুর, বেলে, টাকি, মায়া, মলা ও চান্দাসহ ছোট জাতের মাছের স্বাদই আলাদা। বন্যা ও বর্ষায় দেশের নদী, খাল-বিল একাকার হয়ে মাছে ভরে গেছে। বিভিন্নস্থানে সস্তায় ছোট ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এবার ইলিশের উৎপাদনও হয়েছে আশানুরূপ। দামেও কিছুটা স্বস্তি। চারিদিকে এখন মাছ আর মাছ। মিঠা পানির মাছের উৎস রাজশাহীর বৃহত্তম চলনবিল, মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল, বগুড়ার রক্তদহ, ময়মনসিংহের ইচাইল ও নরসিংদীর চিনাদী বিলসহ সারাদেশের ছোট বড় খাল-বিলে মাছ ধরার উৎসব চলছে। কিছুসংখ্যক ঘের মালিকের ক্ষতি হলেও বন্যায় ভেসে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ছড়িয়ে পড়ায় সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে মাছ সহজলভ্য হয়েছে। সমৃদ্ধ হয়েছে উন্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্যসম্পদ।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, প্লাবন ভ‚মিতে ভারি বর্ষণের সময় বন্যায় তীব্র স্রোতের কারণে মাছ দ্রæত বড় হয়। পানিতে জন্ম হয় প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ, প্রাণিকণা ও পোকা-মাকড়ের। তাতে মাছ পায় প্রচুর খাবার। সেজন্যই মাছের প্রাচুর্যতা। সূত্রমতে, কোরবানিতে গোশত ও বন্যায় মাছে মানুষের আমিষ ও পুষ্টির পর্যাপ্ত যোগান হয়েছে। প্রাকৃতিক মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের খনিজ উপাদানসহ পুষ্টিমাণ অনেক বেশি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে চীন ও ভারতের পরে তৃতীয়স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই চার মাস মাছের প্রজননের জন্য ভরা মৌসুম। এবার বন্যা ও বর্ষা হয়েছে মাছের জন্য আশীর্বাদ। মাছের বংশবৃদ্ধি হয়েছে অনেক বেশি। যার কারণে হাটবাজারে প্রচুর দেশি সুস্বাদু মাছ পাওয়া যাচ্ছে। খাল-বিল এখন মাছে ভরপুর। মাছ সংরক্ষণ আইন কার্যকর ও মানুষ সচেতন হওয়ায় দেশে মাছ উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। এতে হচ্ছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এ্যান্ড বায়োসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক মাছে অপূর্ব স্বাদ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। বন্যা ও বৃষ্টিতে মাছের প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধি ঘটে। পানির স্রোত ও প্লাবনে খাল, বিল, ডোবা, নালায় দেশি মাছ ডিম দেয়। পুঁটিসহ অনেক ছোট মাছ ডিম দেয়ার মাত্র ৩ মাসে খাবার উপযোগি হয়। এবার পদ্মা অববাহিকায় প্রচুর মাছের বংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিসের উপ পরিচালক মো. সিরাজুর রহমান জানান, ড্রাইসিজনে নদ-নদী, খাল-বিলের পাড়ে ব্রিডিং গ্রাউন্ডগুলোতে প্রচুর মা মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার কারণে অভয়ারণ্যে প্রচুর দেশি মাছের বংশবৃদ্ধি হয়েছে। গত কয়েকবছরে মাছের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ১ কোটি ৭০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে মৎস্যখাতে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে শুধুমাত্র বিল রয়েছে ১লাখ ১৪ হাজার ১৬ হেক্টর। মাছ উৎপাদন হয় ৯৯ হাজার ১৯৭ মেট্রিন টন। ন্যাচারাল ওয়াটার ১লাখ ১হাজার ৪২ হেক্টর। মাছ উৎপাদন হয় ৮৩ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন। দেশে মোট জলাশয় ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। মাছ উৎপাদন হয় ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৯৫৪ মেট্রিক টন। এছাড়া সমুদ্র থেকে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন। সবমিলিয়ে মাছ উৎপাদন ৪২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন।
সূত্রমতে, ষাট ও সত্তর দশকে দেশের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ হয়েছে মিঠা পানির দেশি মাছে। বাকিটা সমুদ্র ও লোনা পানির মাছে। খাল-বিল ও বাঁওড় লীজ দেওয়ায় লীজগ্রহিতারা পানি ছেঁচে তাতে নতুন করে পানি দিয়ে কীটনাশক ও চুন ব্যবহার করে। এতে মাছের বিরাট ক্ষতি হয়। তাছাড়া অপরিকল্পিত বাঁধ ও কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে দেশি মাছ প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছিল। সূত্র জানায়, আগে মাছের যেমন ছিল প্রাচুর্যতা তেমনই ছিল প্রজাতির বৈচিত্র। মিঠা পানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা ২৬০। এখন একশো’র নিচে। অবশ্য মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রায় ৩০টি বিলুপ্ত দেশি জাতের মাছ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাবের ব্যুরো অফিস মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে বন্যা ও বর্ষায় প্রাকৃতিক মাছের বংশবৃদ্ধি, হাটবাজারে মাছের ছড়াছড়ি ও মাছ ধরার উৎসবের চিত্র ফুটে উঠেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রামে মাছের চাষ বাড়ছে। এতে বাড়ছে মিঠা পানির মাছের সরবরাহ। করোনার দুঃসময়ে অনেকে পরিত্যক্ত পুকুর ও জলাশয়ে মাছ চাষে মনোযোগী হয়েছেন। পড়ালেখা শেষ করে অনেক যুবক চাকরির পিছে না ঘুরে মৎস্য চাষে মনোনিবেশ করছেন। দেশি মাছের পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তাদের খামারে লোনা পানির মাছের চাষও করা হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। এতে অনেকে সাফল্যও পেয়েছেন। মাছের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আবার গ্রামের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী ইনকিলাবকে বলেন, করোনাকালে অনেকেই মাছ চাষে মনোযোগী হয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলায় ৮৭ হাজার পুকুর, জলাশয়ে কমবেশি মাছ চাষ হচ্ছে। গেল অর্থবছরে এক লাখ ১১ হাজার ১৯৮ জন মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে মাছ পাওয়া গেছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুন্ড, পটিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, চন্দনাইশসহ অনেক এলাকায় পুকুর, দীঘি ও জলাশয়ে রুই, কাতলা জাতীয় দেশি মাছের চাষ হচ্ছে। কয়েকটি খামারে সামুদ্রিক কোরালও চাষ করা হচ্ছে। নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী এলাকার পুকুর, দীঘিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার মাছ সরাসরি চট্টগ্রামের হাটবাজারে আসছে। এতে ক্রেতারা তাজা মাছ কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
মৎস্য কর্মকর্তা ও চাষিরা জানান, চট্টগ্রামে এখন আর পরিত্যক্ত কোন পুকুর, দীঘি বা জলাশয় থাকছে না। বাণিজ্যিক না হলেও নিজেদের প্রয়োজনে মাছ চাষ করছেন চাষিরা। এ অঞ্চলের খাল, ছরা এবং নিচু এলাকার ডোবাগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা মাছেরও কমতি নেই। বর্ষায় চারিদিকে পানি থৈ থৈ। যেখানেই জাল ফেলা হচ্ছে মিলছে মাছ। ধানি জমিতে কৈ, শিং, মাগুরসহ হরেক রকম মাছ মিলছে। গ্রামের লোকেরা মাছ ধরে নিজেদের চাহিদা মিটাচ্ছেন। দরিদ্র যারা তারা খাল-বিল, জমি থেকে মাছ ধরে বিক্রি করছেন।
রাজশাহী ব্যুরো থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, উজান থেকে নেমে আসা বান আর বর্ষণের পানিতে বরেন্দ্র অঞ্চলের নদী খাল বিল দীঘি পুকুর খাঁড়ি এখন টুইটুম্বর। প্রত্যেকটা বিল যেন সমুদ্রসম। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিল চলন বিল, বিল হালতি, উথরাইল, সতিবিল, বিল মহানগরসহ বিভিন্ন বিল পানিতে থৈ থৈ করা পানিতে গা ভাসিয়েছে বানভাসী নানা ধরনের মাছ। প্রায় বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছও দেখা যাচ্ছে। সেই মাছ ধরতে নদী ও খাল বিল পাড়ের মানুষ ভীষন ব্যস্ত। উৎসবের মেজাজ নিয়ে দল বেঁধে নেমে পড়েছে মৎস্য আহরণে।
বর্ষণের পানিতে পুকুর খামরের পানি উপচে উঠেছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। বড় বড় দীঘি খামারের বড় ছোটসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। যা মৎস্য ক্ষেত্রে আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। মৎস্য চাষিরা বলছেন ভারী বান বর্ষণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিশাপ হলেও মাছের বেলায় আর্শীবাদ বয়ে আনে। রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের মৎস্য চাষে রুপালি বিপ্লব ঘটেছে। প্রতিবছর ৮৪ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। নানা কারনে দেশিবহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হলেও যেটুকু টিকে আছে সেগুলো রক্ষার জন্য মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। রাজশাহীতে রয়েছে পনেরটি অভয়াশ্রম।
নোয়াখালী ব্যুরো থেকে আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, নোয়াখালীতে খাল, বিল, পুকুর, ডোবা নালা ও ফসলের মাঠে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মৎস পাওয়া যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক উপায় উৎপাদিত মাছের চাইতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশীয় মাছের চাহিদা বেশি। সমুদ্র থেকে আহরিত মাছ সংরক্ষণের অভাবে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দেশীয় প্রজাতির মাছে কোন প্রকার ঝুঁকি থাকে না। নোয়াখালীতে দেশীয় মাছের বিচরণস্থল হিসেবে খ্যাত নোয়াখালী খালের সংস্কার চলছে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে। আর এটি সংস্কার হলে এ জেলায় দেশীয় মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
বরিশাল ব্যুরো থেকে নাছিম উল আলম জানান, ভাদ্রের বড় অমবাশ্যায় ফুসে ওঠা সাগরের আকষ্মিক প্লাবনের সাথে উজানের ঢলে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টর বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত এক যুগে দক্ষিণাঞ্চলে মাছের উৎপাদন প্রায় ৭৫% বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলে চাহিদা ৩ লাখ ১০ হাজার টনের বিপরীতে উদ্বৃত্ত থাকছে প্রায় ২.৯০ লাখ টন। অঞ্চলের ৬টি জেলায় মোট প্রায় ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জলাশয়ে ২০০৮-০৯সালে২ লাখ ৯৮ হাজার টন থেকে ৩ লাখ ৪১ হাজার ১২০ টন। গত অর্থবছরে তা প্রায় ৬ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের ৫টি জেলার ১১টি উপজেলার ৭৩৫টি খামারে প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে ৩ শতাধিক টন কাকড়া উৎপাদিত হচ্ছে। ৮টি উপজেলার প্রায় তিন হাজার মৎসজীবী কীটনাশকমূক্তও পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিতে সহস্রাধিক টন শুটকি করছে। ইলিশ উৎপাদন ও আহরণে সারাদেশের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অবদান বর্তমানে প্রায় ৮০%। এবার বরিশাল অঞ্চল ও চাঁদপুরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দামও তুলনামূলক কম।
বগুড়া ব্যুরো থেকে মহসিন রাজু জানান, বৃষ্টি কমে আসায় আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসছে নদী নালা,খাল বিল। ফলে ধরা পড়ছে হরেক প্রজাতির দেশি মাছ। বগুড়ার হাট বাজার গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ। দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যেই রয়েছে। খাল বিল, নদী নালায় ধরাপড়া পুঁটি, মওয়া, টাকি মাছের দাম গড়ে আড়াইশ টাকা কেজি দরেই পাওয়া যাচ্ছে। কৈ, মাগুর, শোল,শিং, টেংরা, গোলসা গচি, বাইম ইত্যাদী ৪ শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যেই মিলছে। মৎস্য বিভাগের মতে টানা বর্ষণের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী বন্যার প্রভাবে প্রাকৃতিক খাল বিল, নদী নালা, প্লাবনভুমি এলাকা গুলোতে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছ ডিম পাড়া ও ডিম ফুটে পোনা বেড়ে ওঠার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে। বগুড়া জেলা মৎষ্য অফিসার আনোয়ারুল কবীর জানান, বগুড়ায় ৮১ টি ছোট বড় বিল, ১৩৩ টি প্লাবনভুমিতে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই পানি ছিল।
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে শামসুল আলম খান জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন নদ-নালা, খাল-বিল ও হাওড় এলাকায় মাছ ধরার ধুম পড়েছে। মাছ ধরার উৎসব চলছে। বন্যায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের হাওড় এলাকাসহ ব্রক্ষপুত্র নদ ও শত শত খাল-বিলের পানি উপচে পড়ে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের হাজার হাজার ঘের পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে মাছ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বর্তমানে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় নদ-নালা ও খাল-বিলে মাছ ধরা পড়ছে প্রচুর।
সিলেট ব্যুরো থেকে ফয়সল আমীন জানান, দফায় দফায় ৩ দফা বন্যা হয়েছে সিলেটে। ভেসে গেছে হাওর-বাওর। সেই সাথে নদী খাল পুকুর ভেসেছে বন্যার পানিতে। এতে প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদনের ইতিবাচক প্রভাব ঘটেছে। জেলা মৎস অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যা ও পানির স্থায়ীত্ব বেশি হওয়ার প্রাকৃতিকভাবে মৎসের উৎপাদন বাড়বে। কাজিরবাজার মৎস আড়তের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন মাছের যোগান বাড়ছে বাজারে। পেশাজীবী মৎস শিকারীদের জালে মাছ ধরা পড়ছে। পেশাজীবী ছাড়াও সাধারণ শিকারিরা মাছ শিকারে এখন ব্যস্ত। গ্রামের খালে, বিলে দল বেঁধে মাছ শিকার করছে স্থানীয় লোকজন।
দিনাজপুর ব্যুরো থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, সারাদেশে বন্যা হলেও দিনাজপুর অঞ্চলে এবার বন্যা হয়নি। তবে বৃষ্টি প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি রহমত বয়ে এনেছে মৎস্য সেক্টরে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে ৮২৭২ হেক্টর নদীতে এবার মিঠা পানির ছোট জাতের মাছ গত বছরের চেয়ে প্রায় তিনগুণ আবাদ হয়েছে। ১৫৬১ হেক্টর বিলের মধ্যে এক আশুরার বিলের মাছ দিয়ে দিনাজপুরের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, নোনা অঞ্চল বলে খ্যাত বৃহত্তর খুলনায় মিঠা পানির ও দেশীয় মাছের ভান্ডার ক্রমন্বয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। গত অর্থবছরে শুধুমাত্র এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন মিঠা পানির প্রাকৃতিক ও সাদা মাছ রফতানি হয়েছে। এ অঞ্চলের ডাকাতিয়ার বিল, তেরখাদার বিলসমূহ এবং বাগেরহাটের বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়ের মিঠা পানির মাছ এখন বিদেশের বাজারে শোভা পাচ্ছে।
কক্সবাজার ব্যুরো থেকে শামসুল হক শারেক জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের বিলে-ঝিলে দেখা গেছে স্থানীয় মিঠা পানির মাছের ছড়াছড়ি। টানা বৃষ্টিতে জেলার গ্রামে-গঞ্জে বিলে-ঝিলে দেখা গেছে, টাকি, পুঁটি, বোয়াল, মাগুর ও শিং মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। উখিযার সৌখিন কৃষক মাওলানা আব্দুল হাকিম খান বলেন, চলতি মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে তার ধানক্ষেত থেকে তিনি প্রচুর মিঠা পানির মাছ পেয়েছেন।
যশোর ব্যুরো থেকে শাহেদ রহমান জানান, মাসখানেক হাটবাজার দেশি মাছে ভরে গেছে। যশোরের মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব জানান, বন্যা ও বর্ষার কারণে খাল-বিলে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে। ক্রেতারা বলছেন, এর স্বাদই আলাদা।
চাঁদপুর থেকে বিএম হান্নান জানান, বন্যা ও বর্ষায় চাঁদপুরের সহস্্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মানুষ খালবিলে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে। এদিকে,সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রয়েছে ইলিশ।
রংপুর থেকে হালিম আনছারি জানান, এবার বর্ষা মৌসুমে রংপুর এলাকায় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দামও বেশ কম। মানুষ বেজায় খুশি। গত কয়েকবছরের মধ্যে এবার রংপুরের সবখানেই দেশি মাছের ছড়াছড়ি।
নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী জানান, মেঘনা পাড়ের খাল-বিলে এবার প্রচুর দেশি মাছ হয়েছে। নরসিংদীর চিনাদী বিলসহ বিভিন্ন বিলে এবার হারিয়ে যাওয়া অনেক দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। মানুষ দেশি মাছের স্বাদ পেয়ে খুবই খুশি।
লক্ষীপুর থেকে এস এম বাবুল বাবর জানান, লক্ষীপুর জেলায় বিভিন্ন খাল-বিল-ডোবা-জলাশয়ে দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন। বর্ষায় জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, লক্ষীপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় খাল-বিল-পুকুর-দিঘি-ডোবাসহ জলাশয় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় দেশি মাছ সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।