মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ভারতের ভবিষ্যত বর্তমান সময়ের থেকে পুরোপুরি আলাদা দেখাতো। দেশটি এমন একটি অর্থনৈতিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের গর্ব করতো যা, লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আধুনিক মেগাসিটি তৈরি করেছে এবং মারাত্মক ভূ-রাজনৈতিক সামরিক শক্তি সংগ্রহ করেছে। ভারতের লক্ষ্য ছিল তার জনগণকে একটি মধ্যবিত্ত জীবনধারা দেয়া, তার পুরোনো ঐতিহ্যবাহী সামরিক বাহিনীকে হালনাগাদ করা এবং একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে ওঠা, যাতে একদিন এশিয়ার বৃহত্তম সাফল্যের নমুনা চীনের প্রতিদ্ব›দ্বীতা করতে পারে। কিন্তু করোনা ভাইরাস কারণে সুরাট এবং সারা দেশে অর্থনৈতিক ধ্বস ভারতের বহু আকাক্সক্ষাকে ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে। ুেদশটির অর্থনীতি অন্য যে কোনও বড় দেশের চেয়ে দ্রুত সঙ্কুচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুসারে, ভারতের প্রায় ২ শ’ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে ফিরে যেতে পারে।
করোনা ভাইরাসের দুর্দমনীয় প্রাদুর্ভাবে ভারতের বেশিরভাগ সরব রাস্তাগুলি এখন জনশূণ্য। তবে, দেশটির বেশিরভাগ ক্ষতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আরোপিত করোনাভাইরাস লকডাউনের ফলে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন যে, মোদির লকডাউন নীতিতে অতি কঠোরতা এবং ব্যপক ফাঁক-ফোকর থাকায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল করোনভাইরাস সঙ্কটে রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ৮০ হজারেরও বেশি নতুন সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। দেশজুড়ে বিপর্যয়ের এক আভাস ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। সামাজিক বিভাজনগুলি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। মুসলিম বিরোধী মনোভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ হ›ল, ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারতীয় মুসলিমদের মিথ্যাভাবে দোষারোপ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রোশপূর্ণ প্রচার, এবং ভারতীয় সীমানায় চীনের ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তি প্রদর্শন। এ প্রেক্ষিতে ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত লেখক অরুন্ধতী রায়ের মন্তব্য, ‘ইঞ্জিনটিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। টিকে থাকার সামর্থ্যকে নষ্ট করা দেয়া হয়েছে। এবং সমস্ত টুকরোগুলো বাতাসে ভাসছে। আপনি জানেন না যে সেগুলি কোথায় গিয়ে পড়বে বা কীভাবে পড়বে।’
মোদি তার সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠানের সাম্প্রতিক একটি পর্বে স্বীকার করেছেন যে, ভারত অনেকগুলি শত্রুর সাথে লড়াই করছে। বর্তমানে ভারতের অর্থনীতি ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে এবং চীনের প্রসারণ ঘটছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং জার্মানি পরই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে স্থান ধরে রাখতে ভারত এভণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। গত ত্রৈমাসিকের মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে, ২০১৬ সালের ৮ শতাংশ থেকে মহামারীর ঠিক আগে ৪ শতাংশে নেমে আসে। চার শতাংশ হ্রাস যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের জন্য সম্মানজনক হতে পারে। কিন্তু ভারতের এই স্তরে নামাতে দেশটিতে প্রতি বছর কাজের জন্য ক্ষুধার্ত লাখ লাক তরুণদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তায় মুখে ফেলে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ভারত সম্পর্কে অভিযোগ, জটিল ভূমি আইন, বিধিনিষেধ মূলক শ্রম আইন, লাল টেপ- মোদির আত্মবিশ্বাস এবং নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর সমস্ত ভারতীয়কে বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশ দিয়ে মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে প্রায় সমস্ত অফিস, কারখানা, রাস্তা, ট্রেন, রাজ্যগুলির মধ্যে সীমানা বন্ধ করে দেন মোদি। ফলে, লাখ লাখ ভারতীয় তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি হারায়। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং এখন কর্নেল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসু বলেছেন, ‘২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারতের বিব্রতকর মন্দাটির প্রায় পুরোপুরিই লকডাউনের ধরণের কারণেই হয়েছে। এটি ফলপ্রসূ হতো যদি মহামারীটি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। এটা ঘটেনি।’ যুদিও মোদি সরকার এপর্যন্ত প্রায় ২ শ’ ৬০ বিলিয়ন ডলারের জরুরী ত্রাণ সরবরাহ করেছে, তবে, অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে, সেসবের অতি সামান্যই দরিদ্রদের কাছে পৌছেছে। পাশাপাশি, ভারতের কর সংক্রান্ত আয় হ্রাস পেয়েছে, কিছু রাজ্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মজুরি প্রদানে অক্ষম হয়ে পড়েছে এবং বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সরকারের ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সূত্র : টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।