Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক ইঞ্চি ভূমিও ছেড়ে দেয়া হবে না

ভারতের সাথে বৈঠক শেষে চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেং হ্য বলেছেন, চীনের এক ইঞ্চি ভূখন্ড ছেড়ে দেয়া হবে না। চীনা বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডের অখন্ডতা রক্ষায় আস্থাবান ও সক্ষম। স¤প্রতি সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দু’দেশ ও দু’দেশের সেনাদের সঙ্ঘঘাত হয়েছে।

এ বিষয়ে দু’দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আন্তরিক মতবিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দু’দেশের সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি খুব স্পষ্ট, এর দায় সম্পূর্ণ ভারতের। দু’পক্ষের উচিত সতর্কতার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য বাস্তবায়ন করা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা। চীন আশা করে ভারত দু’দেশের স্বাক্ষরিত ধারাবাহিক চুক্তি মেনে চলবে, বাহিনী পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবে এবং উসকানি বন্ধ করবে। শুক্রবার রাতে মস্কোয় অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা থেকে আড়াই ঘণ্টা এ বৈঠক চলে। বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর রাজনাথ সিং বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পর্যায়ে দু’দেশের সুষ্ঠু সংলাপ বজায় রাখা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উচিত।

চীন-ভারত সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার শুরু হলেও হঠাৎ করেই সেনা সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে চীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সাংহাই কোন্ডঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠকে যোগ দিতে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এখন রাশিয়া সফরে রয়েছেন। এই বৈঠকের বাইরে লাদাখের উত্তেজনা ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন তারা।
বৈঠকের পর বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের জমির এক ইঞ্চিও ছাড়ব না। দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য আমাদের সেনা বদ্ধপরিকর। সীমান্তে যাবতী ঝামেলার জন্য দায়ী শুধু ভারত। সীমান্তে এ গোলযোগের পেছনে ঠিক কী কারণ রয়েছে তা এখন সবার কাছে পরিষ্কার। আর আমরা আরো একবার জানিয়ে রাখছি যে, চীন এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না। দেশের সীমানা রক্ষায় আমাদের সেনারা দিন-রাত পাহারায় রয়েছে।’

গত মে মাসের শুরুতে পূর্ব লাদাখে হাতাহাতি লড়াইয়ে ভারতীয় ২০ সেনা নিহতের পর তৈরি অচলাবস্থা অবসানের লক্ষ্যে গতকাল সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ই’র সাথে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এ বৈঠকও হবে মস্কোয় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকের ফাঁকে।

সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বৈঠকের ফাঁকে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে সময় চান জেনারেল ওয়েই ফেংহে। বৃহস্পতিবার ভারতের কাছে চীনের তরফে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে, ভারত আদৌ সে প্রস্তাবে সাড়া দেবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা একটা ছিলই। কারণ, পূর্ব লাদাখে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘাত বাধার পর থেকে এর আগে আরও দু-বার চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রক বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, লাগাতার ভারত প্রতিরক্ষাস্তরে বৈঠকে বসতে নারাজ ছিল। তাই আগের দু›টি বৈঠক হয়নি। এবার সে সম্ভাবনা প্রবল ছিল। রাজনাথ সিং মস্কোয় যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে আলাদা করে কোনও আলোচনায় তিনি বসবেন না। কিন্তু, শুক্রবার সকালেই আভাস মিলেছিল বৈঠক হতে পারে। সেই মতো শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় বৈঠকের সময় চ‚ড়ান্ত হয়। নির্ধারিত সময়ে বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু, চীন-ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, তা ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের আলোচনায় মিটিয়ে ফেলা যাবে, এমনটা ভাবা বাড়াবাড়ি। তার পরেও এই বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপ‚র্ণ।

লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) কীভাবে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল দু’জনের মধ্যে। জেনারেল উই চীনের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। বর্তমানে চীনের স্টেট কাউন্সিলর তিনি। সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্যও। চীন ও ভারত দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে লাদাখ নিয়ে এমন বৈঠক এই প্রথম। চলতি বছরের মে থেকে লাদাখ উত্তপ্ত। ভারত-চীন একে-অপরকে দায়ী করে আসছে। এর ভেতর জুন মাসে প্যাংগং হ্রদের তীরে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয় দু’পক্ষের মধ্যে। তার রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই গত মাসের শেষ দিকে ফের সেখানে সামরিক পদক্ষেপ নেয় চীন। প্রস্তুত হয় ভারতও। এলএসি-তে এখনও মুখোমুখি অবস্থানে আছেন দুই দেশের সেনারা। সূত্র : সিআরআই বাংলা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জিনিউজ, এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ