Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গুলশান হামলা, পরিবর্তন হবে দেশের মননে

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট সংবাদ পোর্টাল ইউএসনিউজে প্রকাশিত নিবন্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৮ পিএম, ৬ আগস্ট, ২০১৬

সরকারের পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয় : যৌক্তিক জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় শোকগ্রস্ত বাংলাদেশেও কোনো কিছুই আর আগের মতো থাকবে না যেমনভাবে নাইন- ইলেভেনের ভয়াবহ হামলার পর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল মার্কিন মননে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট সংবাদ পোর্টাল ইউএসনিউজে গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ মত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। মাহমুদ আলী বলেন, দেশের ভেতরেই বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ধর্মনিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশীদের প্রতিজ্ঞা আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ১৯৭৫ সালের এই মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসের সঙ্গে বাংলাদেশ খুব ভালোভাবেই পরিচিত।
কারণ, জন্মের মাত্র চার বছর পরই ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের শিকার হয়েছে। আর ৪১ বছর পর যখন তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন হলি আর্টিসানের ঘটনায় হতাহতদের মা-বাবার প্রতি তার মতো সমবেদনা খুবই কম মানুষই দেখাতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে গৃহজাত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে তার চেয়ে কেউ বেশি সক্ষম বা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেই বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন। গত ১ জুলাই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকাবেষ্টিত ওই ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযানে ছয়জন নিহত হন।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা ও হামলাকারীদের ছবি ইন্টারনেটে এলেও সরকার বরাবরই বলছে, তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পুরো লেখায় ঢাকায় এই হামলা ও বিশ্বের আরো কয়েকটি শহরে হামলার বৈশিষ্ট্যের ওপর আলোকপাত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী সন্ত্রাসীরা আইএসের কালো পতাকা পেছনে রেখে ছবি তুললেও তারা প্রকৃতই আইএস নন। এরা স্থানীয় বিদ্রোহী যারা সহিংস হয়ে তাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত নাম যোগ করেছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এটা নিশ্চিত করেছে।
ঢাকার পাশাপাশি প্যারিস, ব্রাসেলস, ইস্তাম্বুল ও নিস শহরে সহিংস জঙ্গি হামলার ঘটনাও দূরের উগ্রবাদী মতাদর্শে দীক্ষিত অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসীদের কাজ বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে সান বারনারডিনো ও অরল্যান্ডোতে গুলি করে নির্বিচার হত্যার দুঃখজনক ঘটনার বৈশিষ্ট্যও একই। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কল্যাণে আইএস ও আলকায়েদার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অভূতপূর্ব নাগাল রয়েছে বিশ্বজুড়ে। কোনো দেশকে সন্ত্রস্ত করতে চাইলে এখন আর তাদের সেখানে গিয়ে ঘাঁটি গাড়তে হয় না। তার বদলে তারা অনলাইনে প্রচারমূলক ভিডিও ছেড়ে ও মেসেজিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে দলে ভেড়ায়। সম্ভবত ঢাকার হামলাকারীরাসহ এসব দলে ভেড়া সদস্যদের কেউ দূরের এসব ডাকে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি দেশগুলো যায়। গুলশানের ক্যাফেতে হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত ও ভালো পরিবার থেকে আসা মেধাবী ছাত্র ছিলেন। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ডালাসের পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার হত্যাকারী মিকা জনজন, বাটন রোজে তিন পুলিশের হত্যাকারী গেভিন লং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং তারা দেশ ও জনগণকে রক্ষায় শপথও নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের পদক্ষেপের সরাসরি বিরুদ্ধে এসব হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
এসব হামলার পর সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়, এগুলো যৌক্তিক জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় নেয়া হচ্ছে।
ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের বিপথগামী করা হচ্ছে
বাংলাদেশের উন্নয়ন রুখতে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। গতকাল শনিবার ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বিজয় (বিইউপি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ বিইউপি মডেল ইউনাইটেড নেশনের (বিইউপি-মুন) তিন দিনব্যাপী সম্মেলন-পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তরুণরা দেশের প্রাণ। তাদের লব্ধ জ্ঞানে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। কেউ যাতে তাদের ভুল পথে না নিতে পারে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দেশবিরোধীরা তা সহ্য না করতে পেরে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রতিনিধিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ।
মডেল ইউনাইটেড নেশনস মূলত মডেল ইউএন বা মুন নামে পরিচিত। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় মুন অতি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ, যেখানে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘সর্বব্যাপী শিক্ষার মাধ্যমে তরুণদের টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মে নিযুক্তকরণ’। ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থী সম্মেলনে অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গুলশান হামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ